ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবর থেকে লাশ তুলে মিছিল করে পুড়িয়ে দিলো তৌহিদী জনতা, ত্রিমূখী সংঘর্ষ নিহত ১

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৫০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১২০ Time View

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় একসময় ইমাম মেহেদী দাবিকারী নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর তার কবর ভিন্নরীতিতে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজিত ছিল স্থানীয় জনতা।

আজ শুক্রবার জুমার পর গোয়ালন্দ উপজেলা আনসার ক্লাব চত্বর এলাকায় ধর্মপ্রাণ জনতা একত্রিত হয়। পরে নুরাল পাগলের আস্থানায় হামলা করে।

এসময় পুলিশের দুটি গাড়ি ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে। আগুন ধরিয়ে দেয় মাজারে। এসময় নুরাল পাগলের অনুসারী ও উত্তেজিত জনতার ইট, পাথর নিক্ষেপে হযরত আলী (৫০),শাকিব শেখ (১৮), আ. আজিজ (৬০), আলামিন হাবিব (২৬), আলম মিয়া (৫০), মোয়াজ্জেম (২১), রাজু শেখ (৪২), রাতুল (১৭), আলমাস (২৫), হান্নান (২১), সেহেদী রাহেলা (৫৫), মুসা মোল্লা (৫০), মান্নান (৬৫), বিজয় কুমার সাহা (৮০), রাসেল (২৮), রিপন (২৬), সুমি (৩৬), মিথিলা (১৫), উজ্জল (৪২), শিমুল হোসাইন (২৭) সহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।

আহতদেরকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সবাইকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।

এসময় সেনাবাহিনী ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করে।

বিকেল ৪টার দিকে চারপাশ থেকে উত্তেজিত জনতা জড়ো হওয়ায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে প্রশাসন সরে যেতে বাধ্য হয়। পরে উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলে আস্থানায় ঢুকে পড়ে।

সেখানে বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। জনতা নুরাল পাগলের কবর ভেঙ্গে বিশেষ কায়দায় কবর দেওয়া মরদেহ নিয়ে মিছিল করতে করতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নিয়ে যায়। সড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে সড়কের উপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আবারও সেনাবাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে রাজবাড়ী, বালিয়াকান্দি, পাংশা, কালুখালী উপজেলাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তৌহিদী জনতা। এর আগে সকালে নুরাল পাগলের পরিবারের পক্ষে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করে।

গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যু পর তার পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে তার নিজ বাড়ির সামনের অংশে দুইতলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) একটি কাঠামোর ভেতরে কবরস্থ করা হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং ‘‘হযরত ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ’’ লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। যা স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

এ প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ উপজেলার ইমাম পরিষদ ও তৌহিদী জনতা গত ২৬ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেন। তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রং পরিবর্তন। ‘‘ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ’’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ। কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা।

নুরাল পাগলার ভক্ত ও পরিবারবর্গ প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় চান। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় নেয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে জেলার ৫টি উপজেলাতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুল রহমান বলেন, এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আমার গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেছে জনতা। পরে নুরাল পাগলের আস্থানায় হামলা চালিয়েছে। তার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা এখনো বলতে পারব না। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

নকল বই বিক্রিতে জড়িতের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে : গোলাম এলাহী

কবর থেকে লাশ তুলে মিছিল করে পুড়িয়ে দিলো তৌহিদী জনতা, ত্রিমূখী সংঘর্ষ নিহত ১

Update Time : ০৮:৫০:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় একসময় ইমাম মেহেদী দাবিকারী নুরাল পাগলার মৃত্যুর পর তার কবর ভিন্নরীতিতে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজিত ছিল স্থানীয় জনতা।

আজ শুক্রবার জুমার পর গোয়ালন্দ উপজেলা আনসার ক্লাব চত্বর এলাকায় ধর্মপ্রাণ জনতা একত্রিত হয়। পরে নুরাল পাগলের আস্থানায় হামলা করে।

এসময় পুলিশের দুটি গাড়ি ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে। আগুন ধরিয়ে দেয় মাজারে। এসময় নুরাল পাগলের অনুসারী ও উত্তেজিত জনতার ইট, পাথর নিক্ষেপে হযরত আলী (৫০),শাকিব শেখ (১৮), আ. আজিজ (৬০), আলামিন হাবিব (২৬), আলম মিয়া (৫০), মোয়াজ্জেম (২১), রাজু শেখ (৪২), রাতুল (১৭), আলমাস (২৫), হান্নান (২১), সেহেদী রাহেলা (৫৫), মুসা মোল্লা (৫০), মান্নান (৬৫), বিজয় কুমার সাহা (৮০), রাসেল (২৮), রিপন (২৬), সুমি (৩৬), মিথিলা (১৫), উজ্জল (৪২), শিমুল হোসাইন (২৭) সহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।

আহতদেরকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সবাইকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।

এসময় সেনাবাহিনী ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করে।

বিকেল ৪টার দিকে চারপাশ থেকে উত্তেজিত জনতা জড়ো হওয়ায় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে প্রশাসন সরে যেতে বাধ্য হয়। পরে উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলে আস্থানায় ঢুকে পড়ে।

সেখানে বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। জনতা নুরাল পাগলের কবর ভেঙ্গে বিশেষ কায়দায় কবর দেওয়া মরদেহ নিয়ে মিছিল করতে করতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নিয়ে যায়। সড়কের পদ্মার মোড়ে নিয়ে সড়কের উপর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আবারও সেনাবাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে রাজবাড়ী, বালিয়াকান্দি, পাংশা, কালুখালী উপজেলাতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তৌহিদী জনতা। এর আগে সকালে নুরাল পাগলের পরিবারের পক্ষে গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবে সাংবাদ সম্মেলন করে।

গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগলার মৃত্যু পর তার পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে তার নিজ বাড়ির সামনের অংশে দুইতলা সমান (প্রায় ১২ ফুট উঁচু) একটি কাঠামোর ভেতরে কবরস্থ করা হয়। পরে কবরটিকে কাবা শরীফের আদলে রং করা হয় এবং ‘‘হযরত ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ’’ লেখা ব্যানার টাঙানো হয়। যা স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

এ প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ উপজেলার ইমাম পরিষদ ও তৌহিদী জনতা গত ২৬ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেন। তৌহিদী জনতা ও ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- কবর থেকে কাবা শরীফের আদলে করা রং পরিবর্তন। ‘‘ইমাম মাহদী (আ.) দরবার শরীফ’’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ। কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা।

নুরাল পাগলার ভক্ত ও পরিবারবর্গ প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় চান। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় নেয়। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে জেলার ৫টি উপজেলাতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুল রহমান বলেন, এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আমার গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেছে জনতা। পরে নুরাল পাগলের আস্থানায় হামলা চালিয়েছে। তার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা এখনো বলতে পারব না। পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।