শাহরাস্তিতে রাস্তা কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ওমান প্রবাসী মোঃ মানিক হোসেন (৫০) গুরুতর জখম হয়েছেন। বিবাদীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে প্রবাসীর স্বর্ণের আংটি ও স্মার্ট ফোন ছিনিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় ৪ জনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আহত প্রবাসী বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে অবস্থান করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে অবশেষে শুক্রবার ১৭ই অক্টোবর জুমার নামাজের পর রাঢ়া রাজাপুরা গ্রামের শেখ বাড়ির চলাচল রাস্তা উন্মুক্ত এবং হামলাকারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা মোঃ মানিক হোসেনের উপর হামলাকারী রাজু, লিটন, তাজুল ইসলাম ও মাছুমের কঠোর বিচার দাবি করেন।
থানায় লিখিত অভিযোগ ও নির্যাতনের শিকার পরিবার, স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, উপজেলার টামটা উত্তর ইউপির রাঢ়াজাপুরা গ্রামের (শেখ বাড়ী)মৃত নুরুল হকের পুত্র মোঃ মানিক হোসেন (৫০) একজন ওমান প্রবাসী। প্রতিপক্ষ তাজুল ইসলাম (৫০), মোঃ লিটন (৪০), মোঃ মাছুম (৩৫) ও মোঃ রাজু (২২) একই বাড়ীর বাসিন্দা এবং তারা বাদী পক্ষের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা-জমি, বাড়ির রাস্তা ও পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে বিরোধে লিপ্ত রয়েছে । বিবাদীরা বাড়ীর রাস্তায় পিলার স্থাপন করে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং এ নিয়ে সিএনজি বা অটো রিক্সা নিয়ে আসলে বাদী পক্ষকে গালিগালাজসহ হুমকি ধামকি দিতো।
অভিযোগ অনুযায়ী, এই বিরোধের জের ধরে গত ১২/১০/২০২৫ ইং তারিখ রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ০৪ নং সাক্ষী খোরশেদ এর বসত ঘরে একটি সালিশ বসে। সালিশে বিবাদীরা মানিকের সাথে উগ্র ও অশালীন আচরণ করে এবং একপর্যায়ে তাকে কিল-ঘুষি মারে। এসময় ০৩ নং বিবাদী লাঠি দিয়ে মানিক হোসেনকে মারধর করে এবং ইট নিক্ষেপ করে। এতে তার সারা শরীরে নীলা-ফোলা জখম হয়। এ সময় সালিশে থাকা লোকজন মানিক হোসেনকে বিবাদীদের কবল থেকে রক্ষা করেন। বিবাদীরা পরবর্তীতে মানিকসহ তার পরিবারকে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। পরে ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই বিবাদীরা চলে যায়। আহত মানিক হোসেনকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে গত ১৪/১০/২০২৫ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা করছিলেন। এই সময় ০২ নং সাক্ষী মানিক হোসেন (৫০) তার অসুস্থ শাশুড়ির জন্য ঔষধ কিনতে যাওয়ার পথে বিবাদীরা একত্রিত হয়ে তার পথরোধ করে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এসময় ০১ নং বিবাদী হত্যার উদ্দেশ্যে তার হাতে থাকা ধারালো বাট (লাঠি) দিয়ে মানিক হোসেনের মাথায় আঘাত করে । মানিক হোসেন কাত হয়ে গেলে আঘাত তার ডান কাঁধে ও হাতে লেগে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ০২ নং বিবাদী তার হাতে থাকা ছোরা দিয়ে মানিকের ডান কানের নিম্নংশ কেটে রক্তাক্ত জখম করে। একই সাথে ০২ নং বিবাদী মানিকের বাম হাতের মধ্যম আঙ্গুলে থাকা স্বর্নের ৮০,০০০/- টাকা মূল্যের স্বর্ণের আংটি ও ২৫,০০০/- টাকা মূল্যের একটি স্মার্ট ফোন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। মানিক হোসেনের চিৎকারে তার স্ত্রী ও অন্যান্য সাক্ষীগণ এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এসময় বিবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা করলে মানিক হোসেনসহ তার পরিবারকে প্রাণে মেরে লাশ গুম করবে বলে হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ওই সময় গুরুতর আহত মোঃ মানিক হোসেনকে প্রথমে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে তিনি ওইখানের চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত মানিকের স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় তাজুল ইসলাম (৫০), মোঃ লিটন (৪০), মোঃ মাছুম (৩৫) ও মোঃ রাজু (২২) কে আসামি করে শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি মামলা রুজু করে যার নং১১ তারিখ ১৪/১০/২৫ দায়ের করেছেন। গতকাল পুলিশ পরিদর্শক তদন্তের বক্তব্য :-এবিষয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উল্লাহ জানান “মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে, স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছুই বলা সম্ভব নয়।”