এতে চাষাবাদ-তো দূরের কথা মাছ চাষ পর্যন্ত করতে পারছে না জমির মালিকেরা। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও পানি নিস্কাশন করতে না পারায় ওই এলাকার কৃষিনির্ভর লোকজন অসহায়ত্ব ও অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ মাঠটির অবস্থান উপজেলা ও পৌরসভার সন্নিকটে হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন টোরাগড় ও হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের বলিয়া মৌজার হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের পূর্ব পাশে বলিয়া পশ্চিম কৃষি মাঠের অবস্থান। সড়কের পশ্চিম পাশে ২০১৬ সালে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ এর কচুয়া ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র স্থাপনের পর সড়কের নিচে থাকা একমাত্র কালভার্টের মুখটি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর থেকেই পানিবন্দি হয়ে পড়ে মাঠের প্রায় ২’শ একর কৃষিজমি এবং গত ১০ বছর ধরে মাঠের জমিগুলো জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ওই সময়ে এলাকার লোকজন বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ ও পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে পানি নিস্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেনি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি নিস্কাশিত না হওয়ায় এবং জমিগুলো ৫-৬ ফুট পানির নিচে থাকায় গত ১০ বছর ধরে অনাবাদী ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া পুরো মাঠটি পানিবন্দি থাকায় জমির সীমানা নির্ধারণও করা যাচ্ছে না। যার ফলে জমির পাড় বেঁধে মাছ চাষ করবেন, সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত জমির মালিকেরা।
এর মধ্যে যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তারা তাদের বাড়ি ও রাস্তার পাশে থাকা জমিগুলো ভরাট করে কেউ পুকুর কেউবা ভরাট করে ফেলেছেন। কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই এবং কৃষি নির্ভর সেসব লোকজন পড়েছেন বিপাকে। দীর্ঘদিন চাষাবাদ করতে না পারায় তারা অসহায়ত্বের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন।
কথা হয়, ১২০ শতক জমির মালিক মাও. ইব্রাহিম খলিল, ২৫০ শতক জমির মালিক বাহাদুর, ২০০ শতক জমির মালিক আমির পাটওয়ারী, ২০০ শতক জমির মালিক খলিলুর রহমান, ১০০ শতক জমির মালিক ইউসুফ আলী, ৮০ শতক সিরাজ মুক্তার এবং অর্ধশতকের বেশি করে জমির মালিক ছাত্তার মোল্লা, মিজানুর রহমান, কামাল, শাহআলম, রেনু মুন্সী, এরশাদ মুন্সী, আবুল কালাম, রাজু মিয়া, মোস্তফা, এমরান মুন্সীসহ আরো অনেকের সাথে।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কারণে গত ১০ বছর ধরে জমিগুলো ৫/৬ফুট পানির নিচে। আমরা বিভিন্ন সময়ে ইউএনও অফিস, কৃষি অফিস, বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করেছি। কেউ জলাবদ্ধতা নিরসনে এগিয়ে আসেনি। কার কাছে গেলে আমাদের সমস্যার সমাধান হবে, জানিনা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ এর কচুয়া উপকেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মো. আসিফ-উর-রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজন আমাদের কাছে এসেছেন। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত করেছি। তাছাড়া, এখানে আমাদের কি করার আছে ? পাওয়ার গ্রিড কর্তৃপক্ষ ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ২টি উপকেন্দ্র স্থাপন করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মো. হাসিব আব্দুল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই মাঠে কোন ধরনের চাষাবাদ হয়না। বিষয়টি জানতে পেরে আমি আমার উপ-পরিচালক মহোদয়কে অবহিত করেছি। তিনি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় কৃষিমাঠসহ পাওয়ার গ্রিড এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, এলাকার লোকজনকে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছি। তারা আবেদন করলে বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে ফরয়োর্ড করবো। আমি চাই, দ্রুত মাঠের জলাবদ্ধতা নিরসন হোক। সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, কৃষিমাঠসহ পাওয়ার গ্রিড এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। দেখলাম সড়কের যে কালভার্টটি রয়েছে, পাওয়ার গ্রিড স্থাপনের কারণে বালু পড়ে পানি নিস্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। আশাকরি সকলের সহযোগিতায় জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারবো।