চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৪০ দিনের কন্যাসন্তান রেখে সামিয়া আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ১নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সকদিরামপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিবার এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করলেও স্বামীর পক্ষ থেকে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বসতঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় সামিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
নিহত সামিয়া আক্তার সকদিরামপুর গ্রামের নাজমুল শেখের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে। পারিবারিকভাবে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক প্রায় এক থেকে দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ৪০ দিন বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই নাজমুল শেখ ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুক ও টাকা-পয়সার জন্য সামিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করতেন এবং একাধিকবার তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। ঘটনার আগের রাতেও তাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে সামিয়াকে হত্যা করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে পরিবারের দাবি।
নিহতের খালা জানান, মৃত্যুর দুই দিন আগে সামিয়া তার বাবাকে ফোন করে স্বামীর নির্যাতনের কথা জানিয়েছিলেন। পরিবারের ভাষ্য, “সামিয়া আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নয়। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সামিয়াকে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে নামিয়ে কয়েকটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দীন স্বপন মিয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে নিহতের শরীরে আঘাতের আলামত থাকার বিষয়টি তার নজরে এসেছে।
অন্যদিকে নিহতের স্বামী নাজমুল শেখ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের মধ্যে কোনো বড় ধরনের পারিবারিক কলহ ছিল না। সকালে নাস্তা করে আমি দোকানে যাই। পরে ফিরে এসে দরজা বন্ধ পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখতে পাই।”
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. নাছির উদ্দীন ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।”
গৃহবধূর এমন রহস্যজনক মৃত্যুতে এলাকায় চাঞ্চল্য ও শোকের সৃষ্টি হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ 
























