ঢাকা ১১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরির ফাঁদে নারীদের ধর্ষণ করতেন চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:২০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩
  • ৬০ Time View

চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী মো. আল-আমিন সিকদার

চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী মো. আল-আমিন সিকদার (৩৬) এর আউট সোর্সিং চাকরির ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী। তার এই ধরণের যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না পেলেও সর্বশেষ একজন কিশোরীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন আল-আমিন।

গত মে মাসের ১৮ তারিখে আল-আমিন অফিস সহায়ক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ জুন মামলা দায়ের করেন কিশোরীর মা। কিন্তু এই ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং মামলার তথ্য প্রতিবেদকের হাতে আসে মঙ্গলবার (২০ জুন)।

অভিযুক্ত আল-আমিন সিকদার চাঁদপুর শহরের কাঁচা কলোনী এলাকার মো. নূরনবীর ছেলে।

মামলার বিবরণ ও ধর্ষণের শিকার কিশোরীর জবানবন্দী থেকে জানাগেছে, গত এক বছর পূর্বে ধর্ষণের শিকার কিশোরী চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চাকরি নেয়। তার দায়িত্ব ছিল চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটে নীচ তলায় উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের কক্ষে। তখন থেকেই সে কিশোরীকে কারণে ও কারণে কাছাকাছি আসা এবং কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এরপর গত এপ্রিল মাসের বেতন নেয়ার জন্য তার কক্ষে ডেকে নিয়ে পরিকল্পতভাবে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করে। ওই অবস্থায় কিশোরী কোন মতে তার ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করে এবং চিৎকার দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে।
এই ঘটনায় কিশোরীর মা মামলা করলে এবং মামলার আর্জিতে ধর্ষণের চেষ্টা লিখলেও বিচারকের কাছে এবং পৃথক বক্তব্যে কিশোরী তার সাথে একাধিকবার শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে বলে শিকার করেন। কিশোরীর বক্তব্যের আলোকে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী ৫ জুন কিশোরীর বক্তব্য গ্রহনপূর্বক তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পরীক্ষা করতঃ তার মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়। আগামী ২৬ জুনের মধ্যে ডাক্তারি রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে বলে বিচারক আদেশ দেন।

ধর্ষণের শিকার কিশোরী পৃথক আরেক বক্তব্যে বলেন, সে চাকুরীতে যোগদানের পর এক মাস পর্যন্ত পরিবেশ ভালছিল। কিন্তু এক মাস পর থেকেই আল-আমিন কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এরপর তাকে অফিসের বাথরুমে এবং ঢাকায় অফিসের কাজে কথা বলে লঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ধর্ষণের চেষ্টা করে। এছাড়া কিশোরীকে দুর্বল করার জন্য সে পূর্বে যেসব নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে সেসব ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে উত্তেজিত করে এবং ধর্ষণের জন্য সম্মত করায়।

চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান। তাঁর কাছে অভিযুক্ত উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা চলমান আছে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি মামলার বিষয়ে তিনি কোন কিছুই জানেন। তিনি এখন জেনেছেন। এই বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এর পূর্বে তার বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে চাঁদপুরের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর লেখা পোস্ট করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ওই মামলাটি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ও মামলার চার্জশীট দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই মামলায় ৪ জন আসামীর মধ্যে আল-আমিন সিকদার প্রধান আসামী।

এই বিষয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ জানান, আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের পক্ষে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা চলমান অবস্থায়। এই ধরণের অপকর্ম করে সমাজে যারা অনাচার সৃষ্টি করে এবং তথ্য প্রযুক্তির অপব্যাবহার করে। নার্সিং ইনস্টিটিউএর মত জায়গায় নারীদের যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

বিজয় দিবসের দিনে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেন চাঁদপুর-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক

চাকরির ফাঁদে নারীদের ধর্ষণ করতেন চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী

Update Time : ০৯:২০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩

চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের উচ্চমান সহকারী মো. আল-আমিন সিকদার (৩৬) এর আউট সোর্সিং চাকরির ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী। তার এই ধরণের যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ না পেলেও সর্বশেষ একজন কিশোরীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন আল-আমিন।

গত মে মাসের ১৮ তারিখে আল-আমিন অফিস সহায়ক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ৫ জুন মামলা দায়ের করেন কিশোরীর মা। কিন্তু এই ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং মামলার তথ্য প্রতিবেদকের হাতে আসে মঙ্গলবার (২০ জুন)।

অভিযুক্ত আল-আমিন সিকদার চাঁদপুর শহরের কাঁচা কলোনী এলাকার মো. নূরনবীর ছেলে।

মামলার বিবরণ ও ধর্ষণের শিকার কিশোরীর জবানবন্দী থেকে জানাগেছে, গত এক বছর পূর্বে ধর্ষণের শিকার কিশোরী চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চাকরি নেয়। তার দায়িত্ব ছিল চাঁদপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটে নীচ তলায় উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের কক্ষে। তখন থেকেই সে কিশোরীকে কারণে ও কারণে কাছাকাছি আসা এবং কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এরপর গত এপ্রিল মাসের বেতন নেয়ার জন্য তার কক্ষে ডেকে নিয়ে পরিকল্পতভাবে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করে। ওই অবস্থায় কিশোরী কোন মতে তার ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা করে এবং চিৎকার দিয়ে ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে।
এই ঘটনায় কিশোরীর মা মামলা করলে এবং মামলার আর্জিতে ধর্ষণের চেষ্টা লিখলেও বিচারকের কাছে এবং পৃথক বক্তব্যে কিশোরী তার সাথে একাধিকবার শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে বলে শিকার করেন। কিশোরীর বক্তব্যের আলোকে চাঁদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী ৫ জুন কিশোরীর বক্তব্য গ্রহনপূর্বক তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পরীক্ষা করতঃ তার মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়। আগামী ২৬ জুনের মধ্যে ডাক্তারি রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে বলে বিচারক আদেশ দেন।

ধর্ষণের শিকার কিশোরী পৃথক আরেক বক্তব্যে বলেন, সে চাকুরীতে যোগদানের পর এক মাস পর্যন্ত পরিবেশ ভালছিল। কিন্তু এক মাস পর থেকেই আল-আমিন কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এরপর তাকে অফিসের বাথরুমে এবং ঢাকায় অফিসের কাজে কথা বলে লঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ধর্ষণের চেষ্টা করে। এছাড়া কিশোরীকে দুর্বল করার জন্য সে পূর্বে যেসব নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে সেসব ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে উত্তেজিত করে এবং ধর্ষণের জন্য সম্মত করায়।

চাঁদপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহবুবুর রহমান। তাঁর কাছে অভিযুক্ত উচ্চমান সহকারী আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা চলমান আছে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি মামলার বিষয়ে তিনি কোন কিছুই জানেন। তিনি এখন জেনেছেন। এই বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এর পূর্বে তার বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে চাঁদপুরের সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর লেখা পোস্ট করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ওই মামলাটি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ও মামলার চার্জশীট দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই মামলায় ৪ জন আসামীর মধ্যে আল-আমিন সিকদার প্রধান আসামী।

এই বিষয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ জানান, আল-আমিন সিকদারের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবের পক্ষে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা চলমান অবস্থায়। এই ধরণের অপকর্ম করে সমাজে যারা অনাচার সৃষ্টি করে এবং তথ্য প্রযুক্তির অপব্যাবহার করে। নার্সিং ইনস্টিটিউএর মত জায়গায় নারীদের যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।