হাজীগঞ্জে পরকীয়া প্রেমের জেরে স্বামী খুনের ঘটনায় হত্যা মামলার প্রধান আসামি সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুকে (৩২) গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকালে তাকে হাজীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে র্যাব ও ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতারের পর হাজীগঞ্জে নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স।
জানা গেছে, ঘটনার দিন রোববার রাতেই আসামি সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবু রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অবস্থান করে। এরপর বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করে এবং সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহে চলে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়ার পূর্বেই র্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল ও ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ দিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুকে নিয়ে ঘটনাস্থল হাজীগঞ্জ বাজারের ট্রাক রোডস্থ আমেনা ভিলার ৩য় তলায় নিহত এমরানের বাসায় যান হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ। এসময় বেশ কিছু আলামত জব্দ করে পুলিশ। এসময় উৎসুক জনতার ভীড় জমে। তারা ফাঁসি চাই বলে শ্লোগান ও চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত আসামি সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবু শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দণি ইউনিয়নের আজাগরা গ্রামের মুন্সী বাড়ির সৈয়দ মাসুদ মুন্সীর ছেলে। এর আগে গত রোববার (৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন হাজীগঞ্জ বাজারের ট্রাক রোডস্থ আমেনার বাসার ৩য় তলায় জবাই করে হত্যা করা হয় সৌদি প্রবাসী মো. এমরান হোসেনকে (৪০)।
তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের দালাল বাড়ির মো. আবুল বাশারের ছেলে। এই ঘটনায় নিহতের বোন রিনা বেগম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দিন মামলার দ্বিতীয় আসামি স্ত্রী ফারাজানা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
পরে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের জাখনি গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের মেয়ে। তারা স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আফনানকে (৮) নিয়ে হাজীগঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন, ফারজানা বেগমের বোন মারজান ও তার মা নাজমা খানম।
বাদি রিনা বেগম জানান, ভাবির (এমরান হোসেনের স্ত্রী ফারজানা বেগম) সাথে তার পরকীয়া প্রেমিক সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুর দীর্ঘদিন প্রেম ছিল। এঘটনায় পারিবারিকভাবে শালিসি বৈঠক ও থানায় অভিযোগ হওয়ার পরে ভাবি ও তার পরিবার ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে ভাবি এমন কাজ করবেননা বলে জানান। একমাত্র ছেলের কথা ভেবে ভাইও তাকে মা করে দেন।
তিনি বলেন, আমার ভাই ছুটি শেষে সৌদিতে যাবার পর ভাবী আবারো পরকীয়া জড়িয়ে পড়ে। এরপর ভাই ছুটিতে দেশে এলে ভাবি ও তার প্রেমিক দুইজনে মিলে পরিকল্পিতভাবে ভাইকে জবাই করে হত্যা করে। এর সাথে জড়িত ভাবির মা ও বোন। ভাবির বোনের চাচাতো দেবর হলেন, সৈয়দ আশেকে এলাহি বাবু। এ ঘটনায় তিনি সংশ্লিষ্ট ৪জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, সৈয়দ আশেকে এলাহি বাবুকে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বিকালে তাকে থানায় নিয়ে আনা হয়েছে। পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদকর্মীদের সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পংকজ কুমার দে’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধারসহ আমরা প্রয়োজনীয় কাজ করছি। পরবর্তীতে জেলা পুলিশের প্রেস বিফিংয়ের মাধ্যমে আপনাদেরকে (সাংবাদিক) বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, রোববার (৮ অক্টোবর) রাতে হাজীগঞ্জ বাজারের ট্রাক রোডস্থ আমেনার বাসার ৩য় তলায় নিজ ভাড়া বাসায় খুনের শিকার হন সৌদিআরব প্রবাসী মো. এমরান হোসেন। এই ঘটনায় প্রেমিক সৈয়দ আশেকে এলাহী বাবুকে নিয়ে স্বামীকে জবাই করে খুনের অভিযোগ উঠে স্ত্রী ফারজানা বেগমের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পালিয়ে যায় পরকীয়া প্রেমিক এবং ওই দিন রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারজানাকে আটক করে পুলিশ।