হাজীগঞ্জে বড়কুলে জোড়া খুনের ঘটনায় বিএনপির সাবেক নেতা হাছান মিয়াজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজধানী ঢাকার বিশিষ্ট ট্রাভেলস্ ব্যবসায়ী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ। তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় তাঁকে (হাছান মিয়াজী) গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আগামিকাল (শনিবার) তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
জানা গেছে, জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত, বর্তমানে জেলহাজতে থাকা আসামিদের পৃষ্টপোষকতার অভিযোগে হাছান মিয়াজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। হাছান মিয়াজী সামাজিক ব্যক্তিত্ববোধ সম্পন্ন একজন মানুষ। তিনি তাঁর সামর্থ অনুযায়ী স্থানীয় ও এলাকাবাসীসহ ইউনিয়নের অসহায়, অসচ্ছল ও দরিদ্র মানুষকে নিয়মিত সহযোগিতা করে থাকেন।
তারা সংবাদকর্মীদের মাঝে প্রশ্ন রেখে আরো জানান, সহযোগিতাপ্রাপ্ত কেউ যদি অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকে, তার দ্বায়ভার হাছান মিয়াজী নিবেন কেন ? এ সময় তারা ন্যয়-বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। পরিবার সদস্যরা আরো বলেন, হাছান মিয়াজী ষড়যন্ত্রের শিকার।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দণি বড়কুল গ্রামের পান্নার বাড়ি পাশে (কালা সিতার বাড়ি) দুলাল সাহার বসতঘরের জানালার গ্রীল কেটে দালানঘরে প্রবেশ করে উত্তম চন্দ্র বর্মন তুফান (৭০) ও তার স্ত্রী কাজলী রানি বর্মনকে (৫৫) শ^াসরোধ করে হত্যা করে।
ঘটনার পরের দিন শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের শিকার তুফান স্থানীয় রায়চোঁ (নোয়াহাট) বাজারের মাছ বিক্রেতা ছিলেন। তিনি উত্তর বড়কুল গ্রামের দাস বাড়ির মৃত হর্মণ চন্দ্র বর্ধনের ছেলে।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের হাতে আটক মো. সোহাগ ও সন্দেহভাজন হিসাবে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে ১২ জনসহ মোট ১৩ জনকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে মো. সোহাগ ও মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
তারা জানায়, ওই দিন রাতে মো. সোহাগ ও মিজানুর রহমানসহ চোর চক্র মদ পান করে চুরির উদ্দেশ্যে দুলাল সাহার বসতঘরে প্রবেশ করলে ঘরে থাকা উত্তম চন্দ্র বর্মন তুফান ও তার স্ত্রী কাজলী রানি বর্মণ ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং তাদেরকে চিনে ফেলে। এ সময় তারা ডাক-চিৎকারের চেষ্টা করলে হাত-পা, চোখ বেঁধে বিছানার উপর বালিশ চাঁপা দিয়ে তাদেরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় চোরচক্র।
এরপর চুরিকৃত মালামাল ওই দিন রাতেই মিজানের ঘরে রাখা হয় এবং পরে মিজান একটি কাসা/পিতলের মগ রেখে অন্য মালামাল একজন ভ্রাম্যমান হকারের কাছে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করে দেন।
পরবর্তীতে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকালে মো. সোহাগ ও মিজানুর রহমানকে নিয়ে পুলিশ চুরিকৃত মালামালের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে একটি কাসা/পিতলের মগ আসামি মিজানুর রহমানের ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।