বিএনপির ডাকা ৩ দিনের অবরোধে দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের ২ মামলায় ১’শ ২৬ জনকে নামীয়সহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুরে ৪ জন এবং মঙ্গলবার ৭ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলা দুইটির মধ্যে একটিতে ৬১ জন ও অপরটিতে ৬৫ জন বিএনপির নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। এছাড়া দুইটি মামলা অজ্ঞাতনামা নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ।
এর আগে অবরোধকে সামনে রেখে মঙ্গলবার সকালে অবরোধ চলাকালীন সময়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাস্থল থেকে একজন ও বাকিলা বাজারে পিকেটিং করার সময় এক যুবদল নেতাসহ বিএনপির মোট ৪ জন এবং সোমবার সকালে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ নদী বাড়ি ক্যাপে এন্ড রেস্টুরেন্ট থেকে মিটিং চলাকালীন সময়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে অবরোধের দ্বিতীয় দিন বুধবার হাজীগঞ্জের কোথাও কোন ধরনের পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোন নেতৃবৃন্দকে সড়কে দেখা যায়নি। তবে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কে বা কারা পৌরসভাধীন মকিমাবাদ হোয়াইট হাউজের সামনে হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর সড়কে গাছের গুড়ি, কাঠ ও বাঁশ ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সড়কের প্রতিবন্ধকতা দূর করে।
এর আগে অবরোধের প্রথম দিনে মঙ্গলবার সকালে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের সেন্দ্রা বাজারে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গাড়ী চলাচলে বাঁধা দেয়। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতারা শান্তি সমাবেশের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলে তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এতে সাবেক ছাত্রনেতা আহসান হাবিবসহ বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন মজুমদার খোকন, ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মাসুম গাজী, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক শাহনেওয়াজ শরীফ আহত হয়। আহতদের মধ্যে আলাউদ্দিন মজুমদার খোকনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সড়কে প্রতিবন্ধকতাসহ পিকেটিংয়ের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের উপর অতর্কিত ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশের সাথে নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং যুবদলের একজনকে আটক করে।
একই দিন দুপুরে বাকিলা বাজারে পিকেটিং করার সময় মাহবুবে এলাহী নামের এক যুবদল কর্মীকে আটক করে পুলিশ। হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর সড়কের হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মকিমাবাদ রেলক্রসিং এলাকায় রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করার চেস্টা করলে পুলিশ পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
অবরোধের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদি হাসান মানিকের নেতৃত্বে ১ প্লাটুন বিজিবি নিয়ে পৌরসভাধীন টোরাগড়, হাজীগঞ্জ বাজার ও বাকিলা এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। তার সাথে ছিলেন, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিগার সুলতানা। একই সময়ে হাজীগঞ্জ বাজার ও বাকিলায় র্যাব সদস্যেরও টহল দিতে দেখা যায়।
এছাড়াও দুই দিনেই সকাল থেকে দিনব্যাপী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কর কুমার দে ও হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদের নেতৃত্বে থানা পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টহল দেয়। এ পর্যন্ত উপজেলার আইন-শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এ দিকে অবরোধের প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দীন, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মাসুদ ইকবাল ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন সোহেল, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল আলম বেপারী ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাছান রাব্বি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ্ আল মামুন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শরীফ মোল্লার নেতৃত্বে শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।