হাজীগঞ্জে মরিয়ম বেগম (২৩) নামের এক গৃহবধূ তার ৬ বছর বয়সি শিশু সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। এই ঘটনায় গত এক মাস ধরে খুঁজছেন স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন।
গত ৬ অক্টোবর শুক্রবার সকালে বাবার বাড়ি উপজেলার হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের বাংলা বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীর বাড়ি বাকিলা ইউনিয়নের সন্না গ্রামের হাজি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন মরিয়ম বেগম।
তিনি সন্না গ্রামের হাজী বাড়ির হাবিবুর রহমানের স্ত্রী ও অলিপুর গ্রামের বাংলা বাড়ির বাবুলের মেয়ে। স্ত্রী-সন্তান নিখোঁজের ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর হাজীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ (এসডিআর নং-২৬১৫) দিয়েছেন হাবিবুর রহমান।
হাবিবুর রহমানের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হাবিবুর রহমান ও মরিয়ম বেগম। বিয়ের পর থেকে মরিয়ম তার খেয়াল-খুশি ও ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতেন এবং সবসময় মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই বিষয়ে বাবা ও স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে বারংবার নিষেধ করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
গত বছর সন্তানের ঔষধ কেনার কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে বাকিলা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হন এবং তিন দিন পর বাড়িতে ফিরে আসেন মরিয়ম বেগম। এই ঘটনায় পারিবারিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ভবিষ্যতে এমনটি করবেন না বলে জানান তিনি।
অসুস্থ সন্তানের কথা বিবেচনা করে মরিয়কে ক্ষমা করে দেন এবং তাকে নিয়ে আবারো সংসার শুরু করেন হাবিবুর রহমান। সবশেষ গত ৬ অক্টোবর স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে শিশু-সন্তানকে নিয়ে বের হন মরিয়ম বেগম।
যাওয়ার সময় তিনি দেড় ভরি স্বর্ণ, নগদ ২ লাখ টাকা ও একটি স্মার্টফোন নিয়ে যান। কিন্তু হাবিবের শশুর বাড়ির লোকজন জানায়, মরিয়ম তাদের বাড়িতে যায়নি। এরপর থেকে তাকে খুঁজতে শুরু করেন স্বামী হাবিবুর রহমানসহ তার শশুর বাড়ির লোকজন।
স্থানীয়দের ধারণা, মরিয়ম বেগম পরকীয়ায় আসক্ত। এর আগে তিনি নিখোঁজ হয়ে যার কাছে গিয়েছিলেন, এখনো হয়তো তার কাছেই গিয়েছেন। বিষয়টি তার স্বামী ও বাবার বাড়ির লোকজন জানলেও পরকীয়া প্রেমিকের পরিচয় ও ঠিকানা না জানার কারণে তারা মরিয়মের খোঁজ পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে মরিয়মের মায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, মেয়ের সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মরিয়ম নাতিনকে নিয়ে কোথায় আছে, কেমন আছে জানিনা। মোবাইল ফোনও বন্ধ। জামাই (হাবিব) তাদেরকে খুঁজছেন, আমরাও খুঁজছি।
এর আগে নিখোঁজের পর আবার ফিরে আসার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, তিন দিন নয়, একদিন পর সে (মরিয়ম) ফিরে এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জামাই ভালো মানুষ। তিনি মেয়ে-নাতিকে পাওয়ার জন্য থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তাই, আমরা দেইনি।
এ ব্যাপারে হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। বাড়িতে তার (মরিয়ম) বেপরোয়া চলাফেরার কারণে ঢাকায় বাসা নিয়েছি। সে রাত-বিরাতে মোবাইলে কথা বলতে না পেরে বাসা ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে এবং গত কোরবান ঈদের পর আমাদের বাড়িতে না থেকে বেশিরভাগ সময় তার বাবার বাড়িতে থাকতেছে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে আমাদের বাড়িতে এসে এক রাত থেকে আবারো বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সে বাবার বাড়িতে না গিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে নিখোঁজ হয় এবং যাওয়ার সময় আমার দেড় ভরি স্বর্ণ ও নগদ ২ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
এসময় তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ের হার্টে ফুটা (ছিদ্র)। তার চিকিৎসা চলছে। নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হয়। অথচ গত একমাসের বেশি সময় ধরে তাকে ডাক্তার দেখাতে পারছিনা। কোথায় আছে, কেমন আছে জানিনা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুজন কুমার দাশ জানান, পরিবারের সদস্যরা বলছেন মরিয়ম তার সন্তানকে নিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটিও বন্ধ। তাই, তাদেরকে নিখোঁজ ডায়েরী করার পরামর্শ দিয়েছি।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।