ঢাকা 3:05 am, Sunday, 29 June 2025

মাত্রারিক্ত দূষণে বুড়িগঙ্গা নদীতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই

  • Reporter Name
  • Update Time : 03:23:02 pm, Saturday, 23 March 2024
  • 3 Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ৪ মিলিগ্রাম/লিটার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বুড়িগঙ্গা নদীতে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে শ্যামপুর বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল পর্যন্ত দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) মাত্র ০.১৪ থেকে ০.৭২ মিলিগ্রাম/লিটার বলে জানিয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র।

বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিজা ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মিঠা পানি নদীবেষ্টিত শহর ঢাকা। এই বিশাল মিঠা পানির জলাধার ইতোমধ্যে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া অভিন্ন নদীর পানি উজান থেকে প্রত্যাহার করায় ধীরে ধীরে উত্তরাঞ্চল মরুকরণের দিকে যাচ্ছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ পানির কারণে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এতে কোনো জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পরিজার সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মোস্তাক হোসেন।

বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে ২.২ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত এবং এদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যা ২ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। বর্তমানে বিশ্বে কৃষি খাতে ৭০ শতাংশ (যার বেশির ভাগই সেচ কাজে), শিল্প খাতে ২০ শতাংশ (বিশেষ করে জ্বালানি ও উৎপাদনে), গৃহস্থালি কাজে ১০ শতাংশ (যার এক শতাংশেরও কম সুপেয় পানি) হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদেশে ছোট বড় ৪০৫টি নদী রয়েছে। এরমধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমী নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুল্ক বালুচরে পরিণত হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে জীববৈচিত্র শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।

ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, নিরাপদ পানি অভাবে মানব শরীরের কিডনি, লিভার, হার্টসহ নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। নিরাপদ পানির অভাবে ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ পেটের সমস্যাসহ নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন।

ঢাকা শহরের লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত দাবি করে পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বলেন, সকালবেলায় বস্তির মানুষেরা এক কলসি পানির জন্য এই শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে; যা তাদের জীবন জীবিকাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলছে। সরকারকে এই প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

একটি রোডম্যাপ করে দেশব্যাপী পানির অধিকারের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সদস্য সচিব মাহবুল হক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

দরজা ভেঙে হিন্দু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে

মাত্রারিক্ত দূষণে বুড়িগঙ্গা নদীতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই

Update Time : 03:23:02 pm, Saturday, 23 March 2024

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ৪ মিলিগ্রাম/লিটার থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বুড়িগঙ্গা নদীতে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে শ্যামপুর বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল পর্যন্ত দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) মাত্র ০.১৪ থেকে ০.৭২ মিলিগ্রাম/লিটার বলে জানিয়েছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা) ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র।

বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিজা ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মিঠা পানি নদীবেষ্টিত শহর ঢাকা। এই বিশাল মিঠা পানির জলাধার ইতোমধ্যে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া অভিন্ন নদীর পানি উজান থেকে প্রত্যাহার করায় ধীরে ধীরে উত্তরাঞ্চল মরুকরণের দিকে যাচ্ছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ পানির কারণে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এতে কোনো জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। অপরিশোধিত শিল্পকারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

পরিজার সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মোস্তাক হোসেন।

বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে ২.২ বিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত এবং এদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যা ২ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। বর্তমানে বিশ্বে কৃষি খাতে ৭০ শতাংশ (যার বেশির ভাগই সেচ কাজে), শিল্প খাতে ২০ শতাংশ (বিশেষ করে জ্বালানি ও উৎপাদনে), গৃহস্থালি কাজে ১০ শতাংশ (যার এক শতাংশেরও কম সুপেয় পানি) হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদেশে ছোট বড় ৪০৫টি নদী রয়েছে। এরমধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমী নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো শুল্ক বালুচরে পরিণত হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে জীববৈচিত্র শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকা মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।

ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, নিরাপদ পানি অভাবে মানব শরীরের কিডনি, লিভার, হার্টসহ নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। নিরাপদ পানির অভাবে ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষ পেটের সমস্যাসহ নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন।

ঢাকা শহরের লক্ষ লক্ষ প্রান্তিক মানুষ পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত দাবি করে পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বলেন, সকালবেলায় বস্তির মানুষেরা এক কলসি পানির জন্য এই শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে; যা তাদের জীবন জীবিকাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলছে। সরকারকে এই প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

একটি রোডম্যাপ করে দেশব্যাপী পানির অধিকারের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের সদস্য সচিব মাহবুল হক।