ঢাকা 12:40 am, Wednesday, 3 September 2025

চাঁদপুর বিআরটিএ অফিসে দালালদের কাছে জিম্মি সেবাগ্রহীতারা

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:42:58 pm, Thursday, 3 July 2025
  • 26 Time View

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চাঁদপুর কার্যালয় পরিণত হয়েছে দালালের আখড়ায়। দালালের তৎপরতা দেখে মনে হবে, তারা যেন এই কার্যালয়ে চাকরি করেন। আর তাদের ও কার্যালয়ের অসাধু কর্মীদের কারণে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা নিতে আসা গ্রাহকেরা। এই অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিনের হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, তা পর্যায়ক্রমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

চাঁদপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে সরকারি কর্মী আছেন তিনজন। তারা হলেন- একজন মোটরযান পরিদর্শক এবং একজন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার)। এ ছাড়া দৈনিক হাজিরাভিত্তিক একজন কর্মচারী কাজ করেন।

কার্যালয় ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে রীতিমতো সরকারি চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করে দালালি করার অভিযোগ রয়েছে মো. শহীদ, মো. শাহজাহান, মো. মানিক ও মোহাম্মদ আলী নামের চারজনের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া দালালি করার জন্য আসেন অটোরিকশাচালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রিপন এবং ট্রাক, লরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মন্টু। দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারী জিয়া হক তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন বলে অভিযোগ আছে। এ অফিসে টাকা ছাড়া কোন সেবা পাওয়া যায়না।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আঙুলের ছাপ দিতে গত মঙ্গলবার ভোরে কার্যালয়ে আসেন দুই শতাধিক সেবাগ্রহীতা। তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি জানান, লাইসেন্সের জন্য সরকারি ফি পরিশোধ করার পরও নানা রকম ভুল দেখিয়ে ভোগান্তিতে ফেলা হয়। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে টাকা দিলে খুব সহজেই কাজ হয়ে যায়। আঙুলের ছাপ দিতে লোকজনকে প্রতি সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে এই কার্যালয়ে আসতে হয়। তখন সেখানে একাধিক দালাল থাকেন।

দালালির সময় সাংবাদিক টের পেয়ে নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যান শহীদ। তিনি বলেন, ভাই, আমার বিষয়ে কিছু লেইখেন না। আরেক দালাল শাহজাহান ক্ষমতাধর আত্মীয়স্বজনের পরিচয় দেন। অন্যদিকে মানিক বলেন, আমি এখন কাজ করি না। চিকিৎসার জন্য আসছি। এমনিতে অফিসের সামনে বসে আছি। এ ছাড়া মোহাম্মদ আলীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এলোমেলো উত্তর দিয়ে কেটে পড়েন।

পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো অফিসের পিয়ন এবায়েদুল হক আঙুলের ছাপ দিতে আসা লোকদের কোনো ঝামেলা ছাড়া কাজ শেষ করে দিতে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, আমি সকাল ৬টায় আসি। এখানে যারা আসেন, তাদের কাজ করে দিলে ২০০ টাকা করে পাই।

সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, মোটরসাইকেল বিক্রির কেন্দ্রগুলোর বিক্রয়কর্মী কিংবা ম্যানেজারও এই দপ্তরের দালাল হিসেবে কাজ করেন। তারা মোটরসাইকেল নিবন্ধনে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা নিয়ে বিআরটিএ দপ্তরকে দেন।

ফরিদগঞ্জ থেকে আসা একজন জানান, চাঁদপুরের সুমাইয়া মোটরসের মাধ্যমে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সব কাজ ওই প্রতিষ্ঠানটি করে দেবে।

এদিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে তথ্য নেয়ার সময় দৈনিক হাজিরার কর্মচারী জিয়া বারবার সাংবাদিকদের বাধা দেন।

জানা যায়, এই কার্যালয়ের অনিয়মের অভিযোগ জানতে গেলে সাংবাদিকদের হাত করার চেষ্টা করেন জিয়া। তার সঙ্গে কয়েকজন কথিত সাংবাদিকের সম্পর্ক রয়েছে। তারা কিছু নিবন্ধনহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাড়ি পরিচালনা করেন। জিয়া বলেন, আমি কোনো অনিয়মে নাই। আমি সবার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করি।

এই ব্যাপারে কথা হলে বিআরটিএ চাঁদপুর কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক আলা উদ্দিন বলেন, আমি গত পাঁচ মাস আগে এই কার্যালয়ে যোগ দিয়েছি। অনিয়ম থাকতে পারে। তবে আমার চোখে পড়ে না।

কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি দুই জেলার দায়িত্বে। লক্ষ্মীপুর জেলায় কাজ করতে হয়। আবার চাঁদপুর কার্যালয়ে আসি। এই কার্যালয়ের যেসব অনিয়মের কথা জানতে পেরেছি, খোঁজ-খবর নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করব।(চ্যানেল ২৪)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মেয়াদ ছাড়া রসমালাই, রং মিশিয়ে ঘি তৈরি করায় জরিমানা

চাঁদপুর বিআরটিএ অফিসে দালালদের কাছে জিম্মি সেবাগ্রহীতারা

Update Time : 04:42:58 pm, Thursday, 3 July 2025

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চাঁদপুর কার্যালয় পরিণত হয়েছে দালালের আখড়ায়। দালালের তৎপরতা দেখে মনে হবে, তারা যেন এই কার্যালয়ে চাকরি করেন। আর তাদের ও কার্যালয়ের অসাধু কর্মীদের কারণে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা নিতে আসা গ্রাহকেরা। এই অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিনের হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, তা পর্যায়ক্রমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

চাঁদপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে সরকারি কর্মী আছেন তিনজন। তারা হলেন- একজন মোটরযান পরিদর্শক এবং একজন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার)। এ ছাড়া দৈনিক হাজিরাভিত্তিক একজন কর্মচারী কাজ করেন।

কার্যালয় ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে রীতিমতো সরকারি চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করে দালালি করার অভিযোগ রয়েছে মো. শহীদ, মো. শাহজাহান, মো. মানিক ও মোহাম্মদ আলী নামের চারজনের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া দালালি করার জন্য আসেন অটোরিকশাচালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রিপন এবং ট্রাক, লরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মন্টু। দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারী জিয়া হক তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন বলে অভিযোগ আছে। এ অফিসে টাকা ছাড়া কোন সেবা পাওয়া যায়না।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আঙুলের ছাপ দিতে গত মঙ্গলবার ভোরে কার্যালয়ে আসেন দুই শতাধিক সেবাগ্রহীতা। তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি জানান, লাইসেন্সের জন্য সরকারি ফি পরিশোধ করার পরও নানা রকম ভুল দেখিয়ে ভোগান্তিতে ফেলা হয়। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে টাকা দিলে খুব সহজেই কাজ হয়ে যায়। আঙুলের ছাপ দিতে লোকজনকে প্রতি সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে এই কার্যালয়ে আসতে হয়। তখন সেখানে একাধিক দালাল থাকেন।

দালালির সময় সাংবাদিক টের পেয়ে নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যান শহীদ। তিনি বলেন, ভাই, আমার বিষয়ে কিছু লেইখেন না। আরেক দালাল শাহজাহান ক্ষমতাধর আত্মীয়স্বজনের পরিচয় দেন। অন্যদিকে মানিক বলেন, আমি এখন কাজ করি না। চিকিৎসার জন্য আসছি। এমনিতে অফিসের সামনে বসে আছি। এ ছাড়া মোহাম্মদ আলীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এলোমেলো উত্তর দিয়ে কেটে পড়েন।

পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো অফিসের পিয়ন এবায়েদুল হক আঙুলের ছাপ দিতে আসা লোকদের কোনো ঝামেলা ছাড়া কাজ শেষ করে দিতে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, আমি সকাল ৬টায় আসি। এখানে যারা আসেন, তাদের কাজ করে দিলে ২০০ টাকা করে পাই।

সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, মোটরসাইকেল বিক্রির কেন্দ্রগুলোর বিক্রয়কর্মী কিংবা ম্যানেজারও এই দপ্তরের দালাল হিসেবে কাজ করেন। তারা মোটরসাইকেল নিবন্ধনে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা নিয়ে বিআরটিএ দপ্তরকে দেন।

ফরিদগঞ্জ থেকে আসা একজন জানান, চাঁদপুরের সুমাইয়া মোটরসের মাধ্যমে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সব কাজ ওই প্রতিষ্ঠানটি করে দেবে।

এদিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে তথ্য নেয়ার সময় দৈনিক হাজিরার কর্মচারী জিয়া বারবার সাংবাদিকদের বাধা দেন।

জানা যায়, এই কার্যালয়ের অনিয়মের অভিযোগ জানতে গেলে সাংবাদিকদের হাত করার চেষ্টা করেন জিয়া। তার সঙ্গে কয়েকজন কথিত সাংবাদিকের সম্পর্ক রয়েছে। তারা কিছু নিবন্ধনহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাড়ি পরিচালনা করেন। জিয়া বলেন, আমি কোনো অনিয়মে নাই। আমি সবার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করি।

এই ব্যাপারে কথা হলে বিআরটিএ চাঁদপুর কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক আলা উদ্দিন বলেন, আমি গত পাঁচ মাস আগে এই কার্যালয়ে যোগ দিয়েছি। অনিয়ম থাকতে পারে। তবে আমার চোখে পড়ে না।

কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমি দুই জেলার দায়িত্বে। লক্ষ্মীপুর জেলায় কাজ করতে হয়। আবার চাঁদপুর কার্যালয়ে আসি। এই কার্যালয়ের যেসব অনিয়মের কথা জানতে পেরেছি, খোঁজ-খবর নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করব।(চ্যানেল ২৪)