জলবায়ু পরিবর্তন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা পর্যায়ের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। ‘জলবায়ু পরিবর্তন, এসআরএইচআর ও সেবার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করে সিরাক-বাংলাদেশ এর ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট’ প্রকল্প।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকালে চাঁদপুর শহরে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতাটি ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ ও সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সিডা-এর অর্থায়নে আয়োজিত হয়। জানা যায়, ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট’ প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহর ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে তরুণদের অংশগ্রহণে এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চাঁদপুর বাংলাদেশের অন্যতম জলবায়ু-সংবেদনশীল জেলা। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল এ জেলায় প্রতিবছরই নদীভাঙন, বন্যা ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। এই প্রেক্ষাপটে তরুণদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি ও নীতিনির্ধারকদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়াই ছিল চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে- জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক- আবুল কাশেম মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন,
এই চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার মূল থিম ছিল জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনা তৈরি করাই ছিল আয়োজনের উদ্দেশ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু পরিবেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, এর প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনে, বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবায়। এসব বিষয়কে তরুণরা ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছে—এটাই এই প্রতিযোগিতার সাফল্য। তরুণদের চিন্তা, উপলব্ধি ও সৃজনশীলতা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তারা আজ যে বার্তা তাদের রঙ ও তুলি দিয়ে প্রকাশ করছে, তা আগামী দিনে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছে যাবে—সেই প্রত্যাশাই করছি। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে সচেতনতা, দায়িত্ববোধ ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তাই এই উদ্যোগ তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।
সিরাক-বাংলাদেশের এ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট মিজানুর রহমান এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—
সিভিল সার্জন- ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দ্বীন, উপপরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, নাসিমা আক্তার, মাতৃপীঠ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক – মোঃ আব্দুল রাজ্জাক।
অনুষ্ঠানে সেশনভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন- সিরাক-বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক অফিসার মোঃ কামরান মিয়া ও ফাইনান্স অ্যান্ড অ্যাডমিন অফিসার রাবেয়া আক্তার মুনমুন।
প্রতিযোগিতায় ৩৫ জন তরুণ শিল্পী অংশগ্রহণ করেন, যাদের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তারা চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তোলেন নদীভাঙনের ফলে স্থানচ্যুতি, স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা, মাতৃস্বাস্থ্য, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক বৈষম্যের বাস্তব চিত্র। প্রতিটি চিত্রের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ৫০–১০০ শব্দের সংক্ষিপ্ত বার্তা, যা শিল্পীর চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও আহ্বান প্রকাশ করে।
ডিজিএফপি, ডিজিএইচএস, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং সিরাক-বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী সৃজনশীলতা, প্রাসঙ্গিকতা ও বার্তার শক্তির ভিত্তিতে সেরা শিল্পকর্মগুলো নির্বাচন করেন। স্কুল ও কলেজ বিভাগ থেকে শীর্ষ দশজন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষপর্বে অনুষ্ঠিত হয় এক অংশগ্রহণমূলক আলোচনা সভা, যেখানে তরুণ শিল্পী, শিক্ষক, স্থানীয় নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন। নির্বাচিত শিল্পকর্মগুলো পরবর্তীতে জেলা ও জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনী এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি সংস্কার সভায় প্রদর্শিত হবে বলে আয়োজকরা জানান।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট’ প্রকল্প তরুণদেরকে সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে গড়ে তুলছে, যাতে তারা সৃজনশীলতা ও সচেতনতার মাধ্যমে একটি সহনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য ভবিষ্যৎ নির্মাণে অবদান রাখতে পারে।