যতদূর চোখ যায়, চোখে মায়া ধরিয়ে দেয় বেগুনি রঙের ফুল। প্রথম দেখায় মনে হবে, কোনো বড় ফুল বাগানে প্রবেশ করেছেন। এমন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য নওগাঁর শিমক্ষেতগুলোতে। এটি নওগাঁর চিত্র নই।
কৃষিপ্রধান চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ছেংগারচর ঢালীকান্দি মাঠে অন্য বছরগুলোর মতো চলতি বছরেও চাষ হচ্ছে আগাম জাতের শিম। আগাম জাতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
অন্যদিকে শীতের আগেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের ভাদ্রা ও বুলবুলি জাতের শিম।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মতলব উত্তরে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ হয়েছে। উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা, ১৪টি ইউনিয়ন ও চরাঞ্চলে এসব শিমের চাষ হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে দেয়া যায়, মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। তার ওপর হালকা বেগুনি রঙের ফুল। পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। কেউ শিম তুলছেন, আবার কেউ শিম ক্ষেত পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মাথার ওপর তীব্র রোদ ও গরম হলেও যেন এতটুকুু ক্লান্তি নেই চাষিদের মধ্যে। কারণ শীতে চাষ ভালো হওয়ায় খুশি তারা। সেই সঙ্গে আগাম জাত হওয়ায় মিলছে বেশি দামও।
কৃষক ফয়েজ আহমেদ বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেছি। এরই মধ্যে ক্ষেত থেকে শিম উঠানো শুরু করেছি। এখন ৮০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করছি, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে।
একই এলাকার শিমচাষি মোকরম আলী দেওয়ান বলেন, এবার আমি শিম চাষ করেছি এক বিঘায়। শিমের বীজ রোপণ করার ৩ মাসের মধ্যেই শিম পাওয়া যায়। বর্তমানে ক্ষেতে শোষক পোকার কিছুটা উপদ্রব হয়েছে বলে জানান তিনি। তাই স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ওষুধ দিচ্ছেন মোকরম আলী। অতিরিক্ত খরার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলার চরকাশিম গ্রামের শিম চাষি ইব্রাহিম গাজী বলেন, আমি ৪ বিঘায় আগাম বুলবুলি জাতের শিমের চাষ করেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই শিম উঠানো শুরু করব।
তিনি জানান, প্রতি বিঘায় সার, সেচ, ওষুধ, শ্রমিকসহ তার খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মতো। মে মাসে শিমের বীজ রোপণ করেছেন তিনি। আগামী ৬ মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম উঠানো যাবে।
আমান উল্যাহ বলেন, আশা করছি বাজারদর ভালো থাকলে সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ করতে পারব।
উপজেলার গ্রামের চাষি ইয়াকুব আলী বলেন, শিমের বাজার এবার ভালো। তবে আগামী দুই-এক মাস পর দাম অনেকটাই কমে যাবে। যদি তেমন রোগবালাই না হয় শিম ক্ষেতে তাহলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি লাভ থাকবে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে শিম চাষিদের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তীব্র খরার কারণে শিমক্ষেতে কিছুটা শোষক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। চাষি ভাইদের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে আর তেমন কোনো রোগবালাই নেই। বাজারে এখন শিমের দামও বেশ ভালো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, চলতি মৌসুমে আগাম জাতের শিমের চাষ হয়েছে। আশানুরুপ ফলন হবে। দামও ভালো।
মাঠপর্যায়ে চাষিদের সমস্যা শুনে তা সমাধানে উপসহাকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দেন।