চাঁদপুরে ‘মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত শহরের বিষ্ণুদী সিনিয়র মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে এই সভার আয়োজন করে জমিয়াতুল মুদার্রেসিন চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলা।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন-ঢাকা ইসলামি আরবি বিশ্ব বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ।
তিনি বক্তব্যে বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা আজকের কোন নতুন শিক্ষা নয়। এটি সেই প্রাচীন শিক্ষা। নবী করিম (সা.) যেটি শুরু করলেন মসজিদে নববী থেকে। এই মাদ্রাসা শিক্ষা এখন চলছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলবে। কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। যিনি মাদ্রাসাগুলো পরিচালনা করার জন্য আমাকে আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। এটি ওই ধরণের দায়িত্ব নয়, এটি হচ্ছে নূরানী দায়িত্ব। কারণ মাদ্রাসায় শিক্ষকরা পবিত্র কুরআন ও প্রিয় নবী (সা.) এর মধূর বানী শিক্ষা দেন। যারা শিক্ষাগ্রহন করেন তারা হলেন শিক্ষার্থী। যাদের চলার পথে ফেরেশতারা নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয়। যাদের সন্তানরা মাদ্রাসা পড়েন সেই অভিভাবকদেরকে সম্পর্কে হাদিসে বলা আছে কিয়ামতের দিন তাদেরকে জতিরময় ও নূরানী টুপি পড়িয়ে উঠানো হবে। আর যারা আপনারা শিক্ষক তারা সম্মানিত। মূলত আপনাদের সেবা করার জন্যই আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আলেম উলামাদের ১০০ বছরের দাবী ছিল দেশে একটি ইসলামি ও আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রয়োজন। এটির জন্য আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করেছি। কেউ পুরণ করেনি আপনাদের দাবী। কিন্তু পুরন করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ আলেম সমাজের এই দাবীর সাথে অন্য কেউ সাহস করে একমত হতে পারেননি। কিন্তু তিনি পেরেছেন কারণ তিনি ওলী বংশের একজন। যার কারণে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মহান সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে এই আলেম সমাজের জন্য একটি বিশ^বিদ্যালয় তিনি দিয়েগেছেন। আর এ বিষয়ে চাঁদপুর ও হাইমচরবাসীর ভূমিকা ছিল। কারণ আপনারা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং সংসদে পাঠিয়েছেন। যে কারণে তিনি মন্ত্রী হয়ে আমাদের জন্য কাজ করতে পেরেছেন। আমরা যখনই শিক্ষামন্ত্রীর নিকট গিয়েছি, তখনই তিনি আমাদের কথাগুলো শুনেছেন এবং গুরুত্ব দিয়ে করার চেষ্টা করেছেন।
আব্দুর রশীদ বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আমরা কেন কাজ করবো। নিতান্তই নিজেদের জন্য। নাকি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি তাহলে আমাদের কোন সমস্যাই সমস্যা থাকবে না। সকল সমস্যা সমাধনের রূপ নিয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছাবে। আজকের আলোচনায় অনেকগুলো বিষয়ে উঠে এসেছে। যেগুলো বাস্তবিক। এসব বিষয়েগুলো নিয়ে আমরা কাজ করতে পারবো।
উপাচার্য বলেন, দ্বিনী ইলমের জন্য অনেক আলেম তাদের জীবন দিয়েগেছেন। অনেক কষ্ট করে এলেম গ্রহণ করেছেন। সেই সাড়ে ১৪শ’ বছরের পূর্বে এই দ্বিনী শিক্ষা এখন আমাদের কাছে। এই শিক্ষার জন্য আমাদেরকে ত্যাগ করতে হবে। কারণ হিসেবে আমি বলছি-মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষায় ৩লাশ শিক্ষার্থী। আলিম পরীক্ষায় এসে দেখি ৮০ হাজার। এরপর ফাযিল ও কামিলে আরো কম। এটি কেন হবে। এসব শিক্ষার্থী কোথায় গেল, কেন আমরা তাদেরকে ধরে রাখতে পারি না। কোথায় আমাদের ঘাটতি। এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহ দেখতে হবে। অষ্টম শ্রেনী থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতে হবে।
জমিয়াতুল মুদার্রেসিন চাঁদপুর সদর উপজেলা সভাপতি ও চান্দ্রা বাজার নূরীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ টি এম মোস্তফা হামিদীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন-জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ার্যামন প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম।
আরো বক্তব্য দেন-দিনাজপুর ভবানীপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. হাসান মাসুদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক উপ-পরীক্সা নিয়ন্ত্রক সালেহ আহমদ, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এইচ এম আনোয়ার মোল্লা, বিষ্ণুদি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দিন, ফরাজিকান্দি ওয়ায়েছিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আতাউল করিম মুজাহিদ, রাজারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আনিসুর রহমান, ভোলদিঘী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন।
শিক্ষক ও সাংবাদিক এম আর ইসলাম বাবু’র সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-রামপুর আলিম আদর্শ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু জাফর মো. মানুদ্দীন, মতলব দারুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া ও আলগী বাজার আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জিল্লুর রহমান।
সভায় বক্তারা মাদ্রাসা শিক্ষার সকিয়তা বজায় রেখে আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। একই সাথে তারা বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা মাদ্রাসা শিক্ষায় বর্তমান ঘাটতিগুলোও তুলে ধরেন এবং এসব সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন- জমিয়াতুল মুদার্রেসিন চাঁদপুর সদর উপজেলা সভাপতি ও চান্দ্রা বাজার নূরীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ টি এম মোস্তফা হামিদী।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসলে মন্ত্রীর নিকট মাদ্রাসা শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষর্থীদের লিখিত কিছু তুলে ধরেন আলগী বাজার আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জিল্লুর রহমান। এর মধ্যে ইবতেদায়ী শিক্ষাকে জাতীয় করণ, শিক্ষকদের বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি, অনার্স সম্মান শ্রেনী উত্তীর্ণদের বিসিএসে অংশগ্রহন অন্যতম।
অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্যদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। সভার শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বিষ্ণুদী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন এবং নাতে রাসূল (সা.) পেশ করেন একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান।
সভায় চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, সুপার ও বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।