অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের একটি দলে যোগ দিয়েছে এক কিশোরীও। বয়স প্রায় ১৮-এর কাছাকাছি। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জান্তাদের ওপর ড্রোন হামলা চালানোর ইউনিটে। জান্তাবিরোধী ক্ষোভ ও বিপ্লবের ডাকে তার মায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই কিশোরী এখন সম্মুখ লড়াইয়ে অবতীর্ণ।
জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত সশস্ত্র শক্তি ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’-এর অধীনে পুরুষদের পাশাপাশি শত শত নারী লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন। মো মো নামের এই কিশোরীও তাদেরই একজন। তার বেড়ে ওঠাটা মিয়ানমারের গণতন্ত্রের এক বিরল সময়ে।
বর্তমানে ইওএ ও বার্মা কমিউনিস্ট পার্টির (বিসিপি) পুনর্গঠিত সশস্ত্র সংগঠন এমএনডিএএ ছাড়াও অভ্যুত্থানের কারণে ক্ষমতা হারানো এমপি ও রাজনীতিকদের গঠন করা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (এনইউজি) মদদপুষ্ট সশস্ত্র সংগঠন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) সম্মিলিত শক্তি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে।
মো মো প্রথম দিকে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আয়োজনকারী একটি গ্রুপের সঙ্গে কাজ করত। কিন্তু জান্তাদের কয়েক মাসের ভয়াবহ হামলার প্রেক্ষাপটে সে যোদ্ধা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যোগ দেয় মান্দালয় পিডিএফে। মো মো বলে, ‘আমার জন্ম মান্দালয়ে। আমি মান্দালয়ের মেয়ে। তাই আমি মান্দালয় পিডিএফে যোগ দিয়েছি।’ শান রাজ্যের পাশেই ঘনবসতিপূর্ণ মান্দালয় অঞ্চল।
শান রাজ্যে ড্রোন হামলা চালানোর পর মো মো বলে, ‘আমি সামরিক বাহিনীর অন্যায় মেনে নিতে পারিনি। তারা নিরীহ সাধারণ মানুষদের হত্যা করেছে। এই ক্ষোভ থেকেই আমি মূলত এখানে যোগ দিয়েছি।’
মো মোর পরনে ছিল মান্দালয় পিডিএফের ছদ্মবেশী পোশাক। মান্দালয় পিডিএফে তার অনেক বন্ধু আছে। তাদের ডাকেই তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। মো মো তার ছদ্মনাম। নিরাপত্তার খাতিরেই এই ছদ্মনাম নিয়েছে। মান্দালয় পিডিএফে প্রায় ১০০ নারী আছেন। তাঁরা শান রাজ্য ও মান্দালয়ে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। এই ইউনিটে যত সদস্য আছেন, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশই নারী।
মো মো বলে, ‘সামরিক বাহিনীর কোনো লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি বোমা ফেলতে পারলে পরের কয়েক দিনের জন্য খুব স্বস্তি পাই। এটি আমাকে উৎসাহ জোগায়। আমি বেশি বেশি ড্রোন মিশন চাই। আরও কতটা ভালো করতে পারি, তা দেখাতে চাই।’
ড্রোন ইউনিটের দলনেতা পুরুষ সহকর্মী সো থোয়া জ বলেন, ‘আমার নারী কমরেডরা যে কতটা শক্তিশালী সম্পদ, তা প্রমাণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নারীদের সক্ষমতায় বিশ্বাসী। নারী যোদ্ধাদের দক্ষতা সবচেয়ে ভালোভাবে কোথায় ব্যবহার করা যায়, তা ভেবে দেখলাম, ড্রোন বাহিনী সবচেয়ে উপযুক্ত হবে।’
মান্দালয় পিডিএফের নারী সদস্যরা যে শুধু ড্রোন হামলা চালান তা নয়, তাঁরা টহলেও কাজ করেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীর কাজও করেন।
কমব্যাট ট্রাউজার ও টি-শার্ট পরে এই নারীরা সকালে জগিং ও ডার্ট ট্র্যাক করেন। পরে তাঁরা ক্যানটিনে ভাত-মাংসের খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর আগপর্যন্ত স্কোয়াটস ও সিট-আপসের মতো রুটিনের মধ্য দিয়ে যান।
তাঁরা গ্রুপটিকে সচল রাখতে প্রশাসনিক শাখায়ও কাজ করেন। আরেকটি টেবিলে ল্যাপটপ ও এলোমেলোভাবে কাগজপত্র ছিটানো ছিল। সেখানে কাজ করছিলেন এক দল নারী। এমন সময় একটি হুইসেল বেজে উঠল। ঘোষণা এল বিমান মহড়ার। তাঁরা হাতে কাগজপত্র নিয়ে দৌড়ে কাছের পরিখায় আশ্রয় নিলেন।
অন্য আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে নারীরা দলটির মূল্যবান অস্ত্রভান্ডারকে পুরোনো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে তেল দেওয়ার কাজ করছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে মান্দালয় পিডিএফ শান রাজ্যে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে।
শেষ বিকেলে নারীরা ক্যাম্পে ফিরে অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে ঘিরে বসেন। কেউ কেউ গাছের সঙ্গে বাঁধা দড়িতে ঝোলানো কাপড় শুকায়। তবে তখনো দুজন নিরাপত্তা টহলে থাকেন।
রাত বাড়লে তাঁরা আগুনের আলোয়া খাবার খেয়ে নেন। ওই সময়টাতে তাঁরা পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। মো মো নিজেকে নিয়ে ও বিশেষ করে পরিবারের যাদের রেখে এসেছে, তাদের নিয়ে ভাবার সময় পায়। মো মো বলে, ‘অনেক সময় বাড়ির জন্য খারাপ লাগে। প্রতিবারই যখন মাকে ফোন দিই, মা বলেন, আমার মেয়ে, আমরা ভালো আছি, তুমি বিপ্লব শেষে বাড়ি ফিরে এসো। যখনই তাঁর কথাগুলো কানে বাজে, আমি অনুপ্রাণিত হই।’