অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) বিকাশের গ্রাহকের ঋণ নেওয়ার সীমা বাড়াচ্ছে বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংক। বর্তমানে বিকাশের গ্রাহকেরা ঋণমানের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন। এই সীমা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি ব্যাংক।
ঋণের সীমা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিকাশের আরও ছয় লাখ গ্রাহককে ঋণ নেওয়ার তালিকায় যুক্ত করতে যাচ্ছে ব্যাংকটি। ফলে বিকাশের ১৮ লাখ গ্রাহক ঋণ নেওয়ার উপযোগী হবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর সিটি ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সীমা দিলেও ঝুঁকি বিবেচনায় সিটি ব্যাংক এখনই ঋণের সীমা না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বাড়াতে চায়।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিকাশের সঙ্গে মিলে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া শুরু করে সিটি ব্যাংক। বিকাশের লেনদেন প্রতিবেদন ও ব্যবহারের ধরন দেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই ঠিক করে দেয় যে কোন গ্রাহক ঋণ পাওয়ার যোগ্য। বিকাশের অ্যাপের মাধ্যমেই এই ঋণের জন্য আবেদন করা যায়।
গ্রাহক ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত হলে তৎক্ষণাৎ ঋণ দেয় সিটি ব্যাংক। এ জন্য কোনো জামানত লাগে না। এ ছাড়া নেই কোনো কাগজপত্রের ঝামেলাও। নির্ধারিত হারে সুদসহ ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করা যায় সহজে। বর্তমানে বিকাশের গ্রাহকেরা তিন মাস মেয়াদে ঋণ পান। নানা মানদণ্ডের ভিত্তিতে যোগ্য গ্রাহকদের ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে সিটি ব্যাংক।
সিটি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সেবাটি চালু হওয়ার পর মোট ২ লাখ ৪৫ হাজার বিকাশ গ্রাহক এই ঋণ নিয়েছেন। এসব গ্রাহক একাধিকবার ঋণ নিয়েছেন ও পরিশোধ করেছেন। ফলে ঋণের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজারে। এসব গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৬৮৬ কোটি টাকা ঋণ। তবে ঋণের স্থিতি এখন ৮৮ কোটি টাকা।
বর্তমানে বিকাশের ১২ লাখ গ্রাহক ঋণ পাওয়া উপযোগী। এর মধ্যে ‘এ’ রেটিং বা ঋণমানপ্রাপ্ত গ্রাহকের সংখ্যা এক লাখ। এসব গ্রাহক সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা ঋণ পেতেন। এখন তাঁদের ঋণের সীমা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন করে আরও গ্রাহক ‘এ’ রেটিংভুক্ত হচ্ছেন। জানা গেছে যে সব মিলিয়ে বিকাশের ছয় লাখ গ্রাহককে নতুন করে ঋণের আওতাভুক্ত করছে ব্যাংকটি।
সিটি ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান অরুপ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আরও বেশি বিকাশ গ্রাহককে সহজে ঋণের সুযোগ করে দিতে চাই। যাঁরা ছোট অঙ্কের টাকার জন্য উচ্চ সুদে মহাজনের ওপর নির্ভরশীল, আমরা তাঁদের কাছে সহজে পৌঁছাতে চাই। এতে মানুষের কষ্টও কমবে। সহজে কম সুদে ঋণ পেলে ছোট ব্যবসায়ীরা ভালো থাকবেন। ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সামনে আরও নতুন কিছু অপেক্ষা করছে।’
জানা গেছে, বিকাশের যেসব গ্রাহক বায়োমেট্রিক পদ্ধতির (ই-কেওয়াইসি) মাধ্যমে হিসাব খুলেছেন, তাঁরাই শুধু সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ পাচ্ছেন। যাঁরা বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করছেন এবং নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করেন, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অগ্রাধিকার পান। এই ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে, গ্রাহকদের দীর্ঘদিন বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু বিকাশের লেনদেন পর্যালোচনা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে ঋণ পাওয়ার যোগ্য গ্রাহক নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাই কোনো গ্রাহক যত বেশি বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করেন, তিনি তত দ্রুত ঋণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
এদিকে গ্রাহকদের সহজে ‘ডিজিটাল ক্ষুদ্রঋণ’ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল, যেখান থেকে ১ শতাংশ সুদে টাকা নিতে পারছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকগুলো এই তহবিল থেকে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋণ দিচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল অ্যাপস, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে দেওয়া এ ধরনের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এই তহবিলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যবহৃত হয়েছে। তহবিলের সিংহভাগ নিয়েছে সিটি ব্যাংক। কিছু টাকা নিয়েছে ঢাকা ব্যাংক। সিটি ব্যাংকের পাশাপাশি ঢাকা ও প্রাইম ব্যাংক ডিজিটাল মাধ্যমে ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ করছে।