ঢাকা 12:29 pm, Thursday, 17 July 2025

হাজীগঞ্জের সাড়ে ৩’শ বছরের পুরনো আলমগীরী মসজিদ

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:43:56 am, Friday, 14 March 2025
  • 29 Time View

আলমগীরী মসজিদ। ছবি-ত্রিনদী

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর গ্রামে অবস্থিত আলমগীরী মসজিদ বা অলিপুর শাহী মসজিদটি প্রায় সাড়ে ৩শ বছরের পুরো মসজিদ। ১৬ খ্রীস্টাব্দের শুরুতে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। সেই সময় বাদশাহর খাজনা উত্তোলণের জন্য অলিপুরে একজন খাজেগান নিয়োগ প্রদান করা হয়। এর আশেপাশে প্রচুর ঘাস থাকায় এবং পাশে নদী থাকায় সম্রাট শাহজাহানের সময় এখানে সম্রাটের ঘোড়াগুলো লালন পালন করা হতো। ফলে এ অঞ্চলে সম্রাট শাহজাহানের অনেক সেনাপতির আগমণ ঘটে।তারাই এখানে নামাজের জন্য ২টি মসজিদ নির্মাণ করেন।

আলমগীরী মসজিদের প্রবেশপথে নাস্তালিক লিপিতে ফারসি ভাষায় লেখা শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৬৯২ সালে আওরঙ্গজেবের শাসনামলে আবদুল্লাহ নামে একজন মসজিদটি নির্মাণ করেন। একই এলাকায় শাহ সুজা মসজিদ নামে আরেকটি প্রাচীন মসজিদ আছে।

শাহ সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খাঁ ছিলেন বাংলার একজন নবাব। তিনি মুর্শিদ কুলি খাঁ’র কন্যা জয়নব উন-নিসা বেগম ও আজমত উন-নিসা বেগমকে বিয়ে করেছিলেন। তার তৃতীয় স্ত্রীর নাম দুরদানা বেগম সাবিহা। ৩০শে জুন ১৭২৭ সালে তার শ্বশুর মুর্শিদ কুলি খানের মৃত্যুর পর তিনি নবাব সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার নাম অনুসারেই শাহ সুজা মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ অলিপুর মসজিদ সংস্কার কাজ হাতে নেয়। বিভিন্ন সময় একাধিক সংস্কারের ফলে অলিপুর শাহী মসজিদ প্রাচীনতম অনেক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। মসজিদের ৬০ ফুট পূর্বে রয়েছে একটি বড় পুকুর। পুকুরটি মসজিদ নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষই খনন করেছিল।

সাধারণ মোগল স্থাপত্যরীতির তাৎপর্যপূর্ণ ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় এ মসজিদে। সাধারণত মোগলরা তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদই তৈরি করত। কিন্তু এ মসজিদে আছে পাঁচ গম্বুজ। মসজিদের প্রধান দরজার ওপরে স্থাপিত রয়েছে ১.১০ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে ১১ ইঞ্চি প্রস্থের ফারসি ভাষায় লিখিত শিলালিপি। প্রধান প্রবেশপথের দুই পাশে বহির্গত খিলানসহ আরও দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। উত্তর আর দক্ষিণের প্রতিটি দেয়ালে এক জোড়া খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি করে মোট সাতটি খিলান পথ। এ ছাড়া ইমারতের চার কোণে রয়েছে কলসাকৃতির গম্বুজ। মসজিদের নির্মাতা আবদুল্লাহর সমাধি আছে এখানে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জের সাড়ে ৩’শ বছরের পুরনো আলমগীরী মসজিদ

Update Time : 09:43:56 am, Friday, 14 March 2025

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর গ্রামে অবস্থিত আলমগীরী মসজিদ বা অলিপুর শাহী মসজিদটি প্রায় সাড়ে ৩শ বছরের পুরো মসজিদ। ১৬ খ্রীস্টাব্দের শুরুতে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইবরাহিম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। সেই সময় বাদশাহর খাজনা উত্তোলণের জন্য অলিপুরে একজন খাজেগান নিয়োগ প্রদান করা হয়। এর আশেপাশে প্রচুর ঘাস থাকায় এবং পাশে নদী থাকায় সম্রাট শাহজাহানের সময় এখানে সম্রাটের ঘোড়াগুলো লালন পালন করা হতো। ফলে এ অঞ্চলে সম্রাট শাহজাহানের অনেক সেনাপতির আগমণ ঘটে।তারাই এখানে নামাজের জন্য ২টি মসজিদ নির্মাণ করেন।

আলমগীরী মসজিদের প্রবেশপথে নাস্তালিক লিপিতে ফারসি ভাষায় লেখা শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৬৯২ সালে আওরঙ্গজেবের শাসনামলে আবদুল্লাহ নামে একজন মসজিদটি নির্মাণ করেন। একই এলাকায় শাহ সুজা মসজিদ নামে আরেকটি প্রাচীন মসজিদ আছে।

শাহ সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খাঁ ছিলেন বাংলার একজন নবাব। তিনি মুর্শিদ কুলি খাঁ’র কন্যা জয়নব উন-নিসা বেগম ও আজমত উন-নিসা বেগমকে বিয়ে করেছিলেন। তার তৃতীয় স্ত্রীর নাম দুরদানা বেগম সাবিহা। ৩০শে জুন ১৭২৭ সালে তার শ্বশুর মুর্শিদ কুলি খানের মৃত্যুর পর তিনি নবাব সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার নাম অনুসারেই শাহ সুজা মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ অলিপুর মসজিদ সংস্কার কাজ হাতে নেয়। বিভিন্ন সময় একাধিক সংস্কারের ফলে অলিপুর শাহী মসজিদ প্রাচীনতম অনেক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। মসজিদের ৬০ ফুট পূর্বে রয়েছে একটি বড় পুকুর। পুকুরটি মসজিদ নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষই খনন করেছিল।

সাধারণ মোগল স্থাপত্যরীতির তাৎপর্যপূর্ণ ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয় এ মসজিদে। সাধারণত মোগলরা তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদই তৈরি করত। কিন্তু এ মসজিদে আছে পাঁচ গম্বুজ। মসজিদের প্রধান দরজার ওপরে স্থাপিত রয়েছে ১.১০ ফুট দীর্ঘ ও সাড়ে ১১ ইঞ্চি প্রস্থের ফারসি ভাষায় লিখিত শিলালিপি। প্রধান প্রবেশপথের দুই পাশে বহির্গত খিলানসহ আরও দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। উত্তর আর দক্ষিণের প্রতিটি দেয়ালে এক জোড়া খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি করে মোট সাতটি খিলান পথ। এ ছাড়া ইমারতের চার কোণে রয়েছে কলসাকৃতির গম্বুজ। মসজিদের নির্মাতা আবদুল্লাহর সমাধি আছে এখানে।