ঢাকা ০২:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:১৫:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৩ Time View
সুজন দাস,
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার সারাদেশের ন্যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী লক্ষ্মী পূজা আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। ঘরে ঘরে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা, মন্দিরে পূজা-অর্চনা, আরতি ও ভক্তিগীতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার গ্রামাঞ্চল। ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি এই উৎসবকে ঘিরে সৃষ্টি হয় আনন্দ, সম্প্রীতি ও ঐক্যের এক চিত্র।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দেবী লক্ষ্মী হলেন ধন, ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য ও শান্তির অধিষ্ঠাত্রী। প্রতি বছর দুর্গোৎসবের সমাপ্তির পর আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে এই পূজা পালিত হয়। ধর্মীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ দিনকে “কোজাগরী পূর্ণিমা” নামেও অভিহিত করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এ রাতে দেবী লক্ষ্মী ধন ও সৌভাগ্যের আলো নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন, তাই ভক্তরা সারা রাত জেগে থাকেন দেবীর আরাধনায়।
হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে লক্ষ্মী পূজার আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সকাল থেকেই। ঘরদোর ধোয়া-মোছা করে গৃহিণীরা সাজিয়ে তোলেন পূজার স্থান। ধান, ফল, দুধ, দই, চিড়া, মিষ্টি, কলা ও প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয় পূজার আসন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ছোট-বড় সবাই অংশ নেয় দেবী আরাধনায়, যেখানে প্রার্থনা করা হয় সংসার জীবনের শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য।
এ বছরও হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখাল, বড়কুল, নাটেহরা, রামপুর, মকিমাবাদ, হাটিলা, কালচোঁ ও বাকিলা এলাকায় ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে বলাখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মী প্রতিমার মেলা। স্থানীয় কারিগরদের তৈরি রঙিন প্রতিমাগুলোর পাশাপাশি পাওয়া যায় পূজা সামগ্রী, খেলনা, মিষ্টি ও নানারকম খাবারের দোকান। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।
মেলার উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিবছরই এই মেলা হাজীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। শুধু পৌরসভা নয়, পাশের কচুয়া, মতলব উত্তর, শাহরাস্তি ও ফরিদগঞ্জ থেকেও অসংখ্য মানুষ আসেন এই মেলায় অংশ নিতে। শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার মধ্যেই থাকে উৎসবের আনন্দ।
হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার প্রতিটি মন্দিরে ও বাড়ির পূজায় নারীরা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। গৃহিণীরা দেবী লক্ষ্মীর অর্চনা করে সংসারের কল্যাণ কামনা করেন। অনেক পরিবারে পূজার পর অতিথি আপ্যায়ন ও ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশন করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই রাতে দেবী যাদের ঘরে প্রবেশ করেন, তাদের ঘর কখনো অন্ন ও সম্পদের অভাবে থাকে না।
হাজীগঞ্জ পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু বলেন,
“লক্ষ্মী পূজা কেবল ধনসম্পদের প্রতীক নয়, এটি শৃঙ্খলা, সততা ও পরিশ্রমের প্রতীকও বটে। হাজীগঞ্জে এই উৎসবকে ঘিরে চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গর্বিত যে, এখানে পূজা নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রাণ কৃষ্ণ সাহা মনা বলেন,
“হাজীগঞ্জে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব আমরা সম্প্রীতির পরিবেশে পালন করি। এবারও লক্ষ্মী পূজায় মানুষ আন্তরিকভাবে অংশ নিয়েছে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই চেতনায় আমরা একে অপরের পাশে আছি।”
পূজা উপলক্ষে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ, আনসার বাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
রাতভর চলেছে আরতি, ভক্তিগীতি ও পূজার আয়োজন। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী সবাই দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেছেন সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য। সর্বত্রই ছিল ভক্তির আবহ আর আনন্দের মেলবন্ধন।
ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে হাজীগঞ্জে এবারের লক্ষ্মী পূজা পরিণত হয়েছে এক মিলনমেলায়। ভক্তদের বিশ্বাস—এই রাতের আরাধনায় যে ঘরে দেবী লক্ষ্মীর আগমন ঘটে, সেই ঘর আলোয় ভরে ওঠে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির আলোয়।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবে আদর্শ স্কুলে ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত 

হাজীগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত

Update Time : ০৫:১৫:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
সুজন দাস,
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার সারাদেশের ন্যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী লক্ষ্মী পূজা আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। ঘরে ঘরে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা, মন্দিরে পূজা-অর্চনা, আরতি ও ভক্তিগীতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার গ্রামাঞ্চল। ধর্মীয় অনুশাসনের পাশাপাশি এই উৎসবকে ঘিরে সৃষ্টি হয় আনন্দ, সম্প্রীতি ও ঐক্যের এক চিত্র।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, দেবী লক্ষ্মী হলেন ধন, ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য ও শান্তির অধিষ্ঠাত্রী। প্রতি বছর দুর্গোৎসবের সমাপ্তির পর আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে এই পূজা পালিত হয়। ধর্মীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ দিনকে “কোজাগরী পূর্ণিমা” নামেও অভিহিত করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এ রাতে দেবী লক্ষ্মী ধন ও সৌভাগ্যের আলো নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন, তাই ভক্তরা সারা রাত জেগে থাকেন দেবীর আরাধনায়।
হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে লক্ষ্মী পূজার আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সকাল থেকেই। ঘরদোর ধোয়া-মোছা করে গৃহিণীরা সাজিয়ে তোলেন পূজার স্থান। ধান, ফল, দুধ, দই, চিড়া, মিষ্টি, কলা ও প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয় পূজার আসন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ঢাক-ঢোল, কাঁসর ও শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ছোট-বড় সবাই অংশ নেয় দেবী আরাধনায়, যেখানে প্রার্থনা করা হয় সংসার জীবনের শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য।
এ বছরও হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখাল, বড়কুল, নাটেহরা, রামপুর, মকিমাবাদ, হাটিলা, কালচোঁ ও বাকিলা এলাকায় ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে বলাখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মী প্রতিমার মেলা। স্থানীয় কারিগরদের তৈরি রঙিন প্রতিমাগুলোর পাশাপাশি পাওয়া যায় পূজা সামগ্রী, খেলনা, মিষ্টি ও নানারকম খাবারের দোকান। ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।
মেলার উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিবছরই এই মেলা হাজীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। শুধু পৌরসভা নয়, পাশের কচুয়া, মতলব উত্তর, শাহরাস্তি ও ফরিদগঞ্জ থেকেও অসংখ্য মানুষ আসেন এই মেলায় অংশ নিতে। শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার মধ্যেই থাকে উৎসবের আনন্দ।
হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার প্রতিটি মন্দিরে ও বাড়ির পূজায় নারীরা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। গৃহিণীরা দেবী লক্ষ্মীর অর্চনা করে সংসারের কল্যাণ কামনা করেন। অনেক পরিবারে পূজার পর অতিথি আপ্যায়ন ও ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশন করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই রাতে দেবী যাদের ঘরে প্রবেশ করেন, তাদের ঘর কখনো অন্ন ও সম্পদের অভাবে থাকে না।
হাজীগঞ্জ পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাধাকান্ত দাস রাজু বলেন,
“লক্ষ্মী পূজা কেবল ধনসম্পদের প্রতীক নয়, এটি শৃঙ্খলা, সততা ও পরিশ্রমের প্রতীকও বটে। হাজীগঞ্জে এই উৎসবকে ঘিরে চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গর্বিত যে, এখানে পূজা নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রাণ কৃষ্ণ সাহা মনা বলেন,
“হাজীগঞ্জে প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব আমরা সম্প্রীতির পরিবেশে পালন করি। এবারও লক্ষ্মী পূজায় মানুষ আন্তরিকভাবে অংশ নিয়েছে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই চেতনায় আমরা একে অপরের পাশে আছি।”
পূজা উপলক্ষে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ, আনসার বাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা একযোগে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
রাতভর চলেছে আরতি, ভক্তিগীতি ও পূজার আয়োজন। নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী সবাই দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেছেন সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য। সর্বত্রই ছিল ভক্তির আবহ আর আনন্দের মেলবন্ধন।
ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে হাজীগঞ্জে এবারের লক্ষ্মী পূজা পরিণত হয়েছে এক মিলনমেলায়। ভক্তদের বিশ্বাস—এই রাতের আরাধনায় যে ঘরে দেবী লক্ষ্মীর আগমন ঘটে, সেই ঘর আলোয় ভরে ওঠে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির আলোয়।