ঢাকা 9:11 pm, Wednesday, 6 August 2025

বাজারে আসছে, কলাগাছের সুতার তৈরি ‘কলাবতী’ শাড়ি

  • Reporter Name
  • Update Time : 03:40:34 pm, Sunday, 2 April 2023
  • 19 Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

মৌলভীবাজারে ১৯৯২ সাল থেকে মণিপুরি শাড়ি বানাচ্ছেন কারিগর রাধাবতী দেবী। এ পর্যন্ত তিনি কত শাড়ি বানিয়েছেন, তার হিসাব নেই। তবে এবার তিনি বুনেছেন কলাগাছের সুতার শাড়ি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু থেকে শাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন রাধাবতী দেবীকে।  তখন তিনি একটু দমে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘জীবনে কলাগাছের সুতা চোখে দেখি নাই। কীভাবে শাড়ি করব? নকশার বইও নাই।’

পরে অবশ্য রাধাবতী ঠিকই কলাগাছের সুতা বা তন্তু দিয়ে শাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। বললেন, ‘বান্দরবানের ডিসি স্যার এই শাড়ির নাম দিছেন কলাবতী শাড়ি। শাড়ি বানানোর পর খুব ভালো লাগছে। তবে আরও গবেষণা করা লাগব।’

আজ রোববার বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও রাধাবতী দেবীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রথম আলোকে বললেন, তিনি গত ৩০ মার্চ বান্দরবান ডিসির ফেসবুক থেকে দেশে আর কেউ কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি বানিয়েছেন কি না, তা  জানানোর জন্য ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে এখন পর্যন্ত দেশে কেউ এই শাড়ি দেখেছেন বলে জানাননি। ভারতের আগ্রা, মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় শাড়ি দেখেছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন। সে দিক থেকে এখন পর্যন্ত বলা যায়, রাধাবতী দেবী যে শাড়িটি বানিয়েছেন, তা দেশে প্রথম কলাগাছের সুতার তৈরি শাড়ি।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি আরও বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কলা গাছের তন্তু থেকে হস্তজাতশিল্প তৈরির জন্য পাইলট বা পরীক্ষামূলক একটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ধাপে ধাপে সদর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪০০ নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষকেরা অন্য উপজেলায় গিয়ে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেন। এভাবে উদ্যোগটি জেলার প্রায় সব উপজেলায় ছড়িয়ে গেছে।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রথম আলোকে বলেন, অফিস আদালত বা সভা সেমিনারে ব্যবহারের জন্য ফোল্ডার, ঝুড়ি, শতরঞ্জি, কলমদানি, পাঁচ তারকা হোটেলের ঘরের ভেতর পরার জন্য জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে কলাগাছের তন্তু দিয়ে। এই তন্তু দিয়ে কাপড় বা শাড়ি বানানো যায় কি না, তা দেখার জন্যই প্রথমে কাপড় বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে কাপড়টি অনেক মোটা আর খসখসে হয়। কাপড় যেহেতু বানানো গেছে, তাই চেষ্টা করলে শাড়িও বানানো সম্ভব এ চিন্তা থেকেই অগ্রসর হতে হতে অবশেষে আস্ত একটি শাড়িই বানিয়ে ফেলেছেন রাধাবতী দেবী।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বললেন, শাড়িটি বানিয়ে দেওয়ার জন্যই রাধাবতী দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদি না বানাতে পারেন, তাই তিনি কিছুটা ভয় পাচ্ছিলেন। তবে অবশেষে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেন। সব মিলে শাড়ি বানাতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগেছে। শাড়ি বানানোর জন্য মৌলভীবাজার থেকে তাঁতও আনা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারিগরের মজুরিসহ শাড়ির দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হতে পারে।

শাড়ির গুণগত মান সম্পর্কে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানালেন, শাড়িটি অনেকটা মণিপুরি শাড়ির মতোই। স্থানীয় পদ্ধতিতে শাড়িটাকে একটু নরম বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শাড়িতে কোনো রং ব্যবহার করা হয়নি। লাল ও সবুজ সুতা ব্যবহার করা হয়েছে নকশার জন্য। ভবিষ্যতে সিল্ক সুতা ব্যবহারের ইচ্ছে আছে। বড় আকারে বাজারে এই শাড়ি বিক্রি করতে হলে আরও গবেষণা লাগবে। বড় আকারে প্রকল্প নিতে হবে। তিনি জানালেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, তাঁত বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠানো হচ্ছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে।

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মেয়ে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানালেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে বান্দরবানে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সময় বান্দরবানের পর্যটন খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মূলত স্যুভেনির তৈরির সময় এলাকায় কলা গাছের প্রাধান্যের বিষয়টি মাথায় আসে। তখন সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে কলাগাছের তন্তু নিয়ে কাজ শুরু হয়।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বললেন, কলার ফলন ধরার পরে কলা গাছগুলো আর কাজে লাগে না। এ গাছগুলোকেই এখন কাজে লাগানো হচ্ছে। মেশিনে যে সুতা তৈরি হচ্ছে তার মান ভালো। তবে মসৃণ নয়। তাই শাড়ি তৈরি করাটা বেশ কষ্টের কাজ। উন্নতমানের শাড়িসহ অন্যান্য পণ্য তৈরি করা সম্ভব হলে এসব পণ্য রপ্তানিও করা সম্ভব হবে।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু নিয়ে কাজের সঙ্গে সার্বিক সহায়তা করার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাই সাই উ নিনিসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

রাধাবতী দেবী জানালেন, তিনি বান্দরবান এসেছিলেন ১২ মার্চ। আজ তিনি মৌলভীবাজার ফিরে যাচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসক বলেছেন আরও শাড়ি বানিয়ে দিতে হবে। তাই তিনি আবার আসবেন বান্দরবানে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় পরিবারের সদস্যদের বেঁধে দুটি ঘরে ডাকাতি

বাজারে আসছে, কলাগাছের সুতার তৈরি ‘কলাবতী’ শাড়ি

Update Time : 03:40:34 pm, Sunday, 2 April 2023

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

মৌলভীবাজারে ১৯৯২ সাল থেকে মণিপুরি শাড়ি বানাচ্ছেন কারিগর রাধাবতী দেবী। এ পর্যন্ত তিনি কত শাড়ি বানিয়েছেন, তার হিসাব নেই। তবে এবার তিনি বুনেছেন কলাগাছের সুতার শাড়ি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু থেকে শাড়ি বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন রাধাবতী দেবীকে।  তখন তিনি একটু দমে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘জীবনে কলাগাছের সুতা চোখে দেখি নাই। কীভাবে শাড়ি করব? নকশার বইও নাই।’

পরে অবশ্য রাধাবতী ঠিকই কলাগাছের সুতা বা তন্তু দিয়ে শাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। বললেন, ‘বান্দরবানের ডিসি স্যার এই শাড়ির নাম দিছেন কলাবতী শাড়ি। শাড়ি বানানোর পর খুব ভালো লাগছে। তবে আরও গবেষণা করা লাগব।’

আজ রোববার বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও রাধাবতী দেবীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রথম আলোকে বললেন, তিনি গত ৩০ মার্চ বান্দরবান ডিসির ফেসবুক থেকে দেশে আর কেউ কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি বানিয়েছেন কি না, তা  জানানোর জন্য ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। তাতে এখন পর্যন্ত দেশে কেউ এই শাড়ি দেখেছেন বলে জানাননি। ভারতের আগ্রা, মধ্যপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় শাড়ি দেখেছেন বলে অনেকেই জানিয়েছেন। সে দিক থেকে এখন পর্যন্ত বলা যায়, রাধাবতী দেবী যে শাড়িটি বানিয়েছেন, তা দেশে প্রথম কলাগাছের সুতার তৈরি শাড়ি।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি আরও বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কলা গাছের তন্তু থেকে হস্তজাতশিল্প তৈরির জন্য পাইলট বা পরীক্ষামূলক একটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ধাপে ধাপে সদর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪০০ নারী ও পুরুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষকেরা অন্য উপজেলায় গিয়ে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেন। এভাবে উদ্যোগটি জেলার প্রায় সব উপজেলায় ছড়িয়ে গেছে।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রথম আলোকে বলেন, অফিস আদালত বা সভা সেমিনারে ব্যবহারের জন্য ফোল্ডার, ঝুড়ি, শতরঞ্জি, কলমদানি, পাঁচ তারকা হোটেলের ঘরের ভেতর পরার জন্য জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে কলাগাছের তন্তু দিয়ে। এই তন্তু দিয়ে কাপড় বা শাড়ি বানানো যায় কি না, তা দেখার জন্যই প্রথমে কাপড় বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে কাপড়টি অনেক মোটা আর খসখসে হয়। কাপড় যেহেতু বানানো গেছে, তাই চেষ্টা করলে শাড়িও বানানো সম্ভব এ চিন্তা থেকেই অগ্রসর হতে হতে অবশেষে আস্ত একটি শাড়িই বানিয়ে ফেলেছেন রাধাবতী দেবী।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বললেন, শাড়িটি বানিয়ে দেওয়ার জন্যই রাধাবতী দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদি না বানাতে পারেন, তাই তিনি কিছুটা ভয় পাচ্ছিলেন। তবে অবশেষে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেন। সব মিলে শাড়ি বানাতে ১০ থেকে ১২ দিন লেগেছে। শাড়ি বানানোর জন্য মৌলভীবাজার থেকে তাঁতও আনা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারিগরের মজুরিসহ শাড়ির দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হতে পারে।

শাড়ির গুণগত মান সম্পর্কে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানালেন, শাড়িটি অনেকটা মণিপুরি শাড়ির মতোই। স্থানীয় পদ্ধতিতে শাড়িটাকে একটু নরম বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শাড়িতে কোনো রং ব্যবহার করা হয়নি। লাল ও সবুজ সুতা ব্যবহার করা হয়েছে নকশার জন্য। ভবিষ্যতে সিল্ক সুতা ব্যবহারের ইচ্ছে আছে। বড় আকারে বাজারে এই শাড়ি বিক্রি করতে হলে আরও গবেষণা লাগবে। বড় আকারে প্রকল্প নিতে হবে। তিনি জানালেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, তাঁত বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠানো হচ্ছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে।

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মেয়ে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানালেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে বান্দরবানে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সময় বান্দরবানের পর্যটন খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। মূলত স্যুভেনির তৈরির সময় এলাকায় কলা গাছের প্রাধান্যের বিষয়টি মাথায় আসে। তখন সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে কলাগাছের তন্তু নিয়ে কাজ শুরু হয়।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বললেন, কলার ফলন ধরার পরে কলা গাছগুলো আর কাজে লাগে না। এ গাছগুলোকেই এখন কাজে লাগানো হচ্ছে। মেশিনে যে সুতা তৈরি হচ্ছে তার মান ভালো। তবে মসৃণ নয়। তাই শাড়ি তৈরি করাটা বেশ কষ্টের কাজ। উন্নতমানের শাড়িসহ অন্যান্য পণ্য তৈরি করা সম্ভব হলে এসব পণ্য রপ্তানিও করা সম্ভব হবে।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি কলাগাছের তন্তু নিয়ে কাজের সঙ্গে সার্বিক সহায়তা করার জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাই সাই উ নিনিসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

রাধাবতী দেবী জানালেন, তিনি বান্দরবান এসেছিলেন ১২ মার্চ। আজ তিনি মৌলভীবাজার ফিরে যাচ্ছেন। তবে জেলা প্রশাসক বলেছেন আরও শাড়ি বানিয়ে দিতে হবে। তাই তিনি আবার আসবেন বান্দরবানে।