শওকত আলী:
চাঁদপুর জেলাধীন মতলব দক্ষিন উপজেলার নায়েরগাঁওয়ে মাদক ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছে। এতে করে এলাকার যুব সমাজ ও স্কুল,কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এ মাদক সেবন করে ধ্বংশের দিকে প্রতিনিয়ত ধাবিত হতে দেখা যাচ্ছে,বলে এলাকা বাসীর অভিযোগ। এ মাদক ব্যবসার আরালে যেন কোন একটি অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। সেটি প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও ধারনা করা যাচ্ছে,্এর পিছনে কোন একটি চক্র গোপনে মাদক ব্যবসায়ীকে সহায়তা করে এ জগন্য কাজ করার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়েও যেন কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না এ মাদক ব্যবসা। তাই এ মাদক ব্যবসা জমজমাট ভাবে চলছেই।
যার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে , মতলব মক্ষিন এলাকার বহু মাদক মামলার অন্যতম আসামি রাজিয়ার খুঁটির জোর কোথায় ?
ঘটনায় প্রকাশ, মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁওয়ের একটি পরিবারের মাদক ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না কেন। যতই দিন যাচ্ছে তাদের মাদক ব্যবসা জমজমাট আকার ধারণ করে চলছেই।
নায়েরগাঁও বাজার এলাকায় মাদকের সর্গরাজ্য সৃষ্টি করেছে রাজিয়া সুলতানার পরিবার। রাজিয়া সুলতানা ও তার দুটি সন্তানের নামে ডজন দুয়ের উপরে মাদকের মামলা চলমান থাকা সত্বেও থেমে নেই তাদের মাদক ব্যবসা। রাজিয়া সুলতানা নায়েরগাঁও বাজারস্থ পাটন গ্রামের সফিকুল ইসলাম মেম্বারের স্ত্রী। তার পূর্বের স্বামীর নাম খলিলুর রহমান।
এলাকায় সরোজমিনে ঘুরে জানা যায়, রাজিয়া সুলতানা তার দুই সন্তানকে দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকের রমরমা ব্যবসা করে আসছে। দাউদকান্দি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদকের একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলে তাঁরা। এমনকি নায়েরগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসা জমিয়ে তোলায় এক নামে সবাই চিনেন রাজিয়া সুলতানাকে। এ মাদক ব্যবসা নিয়ে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছে না ।
একটি সূত্র জানান, গত ২৩ জুলাই গোপন ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে রাজিয়া সুলতানার বাড়ীতে অভিযান করেন চাঁদপুরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ওইদিন দীর্ঘসময় অভিযান চালিয়ে রাজিয়া সুলতানার ঘরে থাকা মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল খালেকের কাছ থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা ও রাজিয়া সুলতানার কাছ থেকে ৮০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
পরে খালেক ও রাজিয়াসহ তার এক সন্তান ডালিম প্রধানের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কয়েকমাস জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় তাঁরা মাদক ব্যবসা প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর ও মতলব দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, রাজিয়া সুলতানার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সেলিম একাধিকবার মাদকসহ বিভিন্ন থানায় আটক হয়। তার বিরুদ্ধে মতলব দক্ষিণ থানায় ৫টি,যাত্রাবাড়ী থানায় একটি, দাউদকান্দি থানায় দুইটি এবং রামপুরা থানায় ১টিসহ ৯টি মাদকের মামলা রয়েছে।
অপরদিকে রাজিয়া সুলতানার ছোট ছেলে ডালিম প্রধানও বেশ কয়েকবার মাদকসহ পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের হাতে আটক হয়। তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় ১৭ টি মাদকের মামলা রয়েছে। তন্মোধ্যে মতলব দক্ষিণ থানায় ১৫ টি এবং দাউদকান্দি থানায় ২ টি মাদকের মামলা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে নায়েরগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী ও ৪/৫জন বিভিন্ন দোকান মালিক জানান,তাদের এ অবৈধ মাদক ব্যবসার কারনে বাজারের দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের মামলা হামলার হুমকি ধমকি দিয়ে থাকে তারা। গত কয়েকদিন আগে রাজিয়া সুলতানা ও খালেক নামে ২জনকে ইয়াবাসহ হাতেনাতে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরে তাদেরকে মাদক মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে উল্টো চাঁদপুরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে রাজিয়া সুলতানা তার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা একটি অভিযোগ করেন। তাই রাজিয়া সুলতানার ভয়ে ও আতঙ্কে থাকেন নায়েরগাঁও বাজারের দোকান মালিক ও সাধারণ মানুষ। কখন আবার কার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
নায়েরগাঁও বাজার বনিক ও জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা পাটোয়ারী বলেন,‘মাদকের বিরুদ্ধে বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ ইতিমধ্যে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। যারা এসব ব্যবসা করে আসছে তাদেরকে কয়েকবার পুলিশ আটকও করেছে। এছাড়া তাদেরকে শতর্ক করাসহ মাদক ব্যবসা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে রাজিয়া সুলতানার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে বলে আগে মাদক ব্যবসা করতাম। এখন করিনা। তবে আমার ও পরিবারের লোকদের এ সব মামলা চালাতে অনেক টাকা লাগে। আমি করিনা পরিবারের অন্যেরা এ কাজ করে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম বলেন, রাজিয়া সুলতানার পুরো পরিবারটি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এ ব্যবসা করে আসছে বিধায় স্থানীয় লোকজনের নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩ জুলাই তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয় এবং খালেক( ২০০০ পিস ইয়াব) ও রাজিয়া সুলতানার (৮০০ পিস ইয়াবা)সহ আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে ।
মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ রিপন বালা এ প্রতিনিধিকে জানান,রাজিয়া ও তার দু’ছেলের বিরুদ্ধে মতলব দক্ষিণ থানায় মাদকের অসংখ্য মামলা রয়েছে। তবে ওই মামলায় তারা জামিনে আছেন। তারা যদি আবারো মাদক ব্যবসা করে এবং হাতেনাতে পাওয়া যায় কোন ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।