ঢাকা ০২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মার্কিন যন্ত্র হলে উত্তর কাশীতে সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককেই নিরাপদে উদ্ধার করা যাবে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:০২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩
  • ৭৯ Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘অগার ড্রিলিং মেশিন’ নতুন করে কাজে নামানো হয়েছে। এই যন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারলে আড়াই-তিন দিনের মধ্যে উত্তরাখন্ড রাজ্যের উত্তর কাশীতে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককেই নিরাপদে উদ্ধার করা যাবে। না হলে অপেক্ষা করতে হতে পারে আরও দুই সপ্তাহ। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব অনুরাগ জৈন বুধবার এ কথা বলেছেন।

অগার ড্রিলিং মেশিন দিয়ে আড়াআড়িভাবে সুড়ঙ্গের ধস সরানোর চেষ্টা চলছে। গত শুক্রবার ওই মেশিনে গোলমাল দেখা দিয়েছিল। ফলে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে তা আবার কাজে লাগানো হয়েছে।

অনুরাগ জৈন সাংবাদিকদের বলেছেন, অগার মেশিন কার্যকর হবে বলেই তাঁদের আশা। না হলে বিকল্প ব্যবস্থাও জারি রাখা হয়েছে। মেশিন কার্যকর হলে আড়াই-তিন দিনের মধ্যে সাফল্য আসবে। না হলে সপ্তাহ দুয়েক লাগতে পারে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পাহাড়ের ওপর যন্ত্র নিয়ে গিয়ে লম্বালম্বি ড্রিল করা হচ্ছে। ড্রিলিং চলছে সুড়ঙ্গের অন্য প্রান্ত দিয়েও। সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য সাড়ে চার কিলোমিটার।

আশার আলো প্রথম দেখা দেয় মঙ্গলবার। ছয় ইঞ্চির একটি পাইপ আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়। সেই পাইপ দিয়ে পাঠানো হয় খাদ্য, পানীয়, ওষুধ। তা ছাড়া নিয়ে যাওয়া হয় একটা এন্ডোস্কপিক ফ্লেক্সি ক্যামেরাও। সেই ক্যামেরার ছবি দেখায়, ৪১ শ্রমিকই সুস্থ আছেন। তাঁদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ কথাও বলে। তাঁদের মনোবল অটুট রাখার পরামর্শ দিয়ে বলে, শিগগিরই তাঁদের উদ্ধার করা হবে।

বুধবার ওই পাইপ দিয়ে নিরামিষ পোলাও, রুটি ও মটর-পনিরের তরকারি শ্রমিকদের পাঠানো হয়। খাবার তৈরি করা হয়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখেই। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ফলও। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, সঞ্জিত রানা নামের এক পাচক চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে খাবার তৈরি করছেন। তিনি বলেছেন, হজম করতে সুবিধা হবে, এমন খাবার তৈরির পরামর্শ তাঁকে দেওয়া হয়েছে। রান্নায় কম তেল ও মসলা ব্যবহার করা হয়েছে। রুটি তৈরি করা হয়েছে মাখন দিয়ে। পাইপ মারফত পাঠানো হয়েছে খাবারের দেড় শ প্যাকেট। ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কলা ও কমলালেবু। সোমবার পাঠানো হয়েছিল গরম খিচুড়ি।

সরকারি বরাতে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মানসিক অবসাদ যাতে না আসে, সে জন্য শ্রমিকদের অবসাদ নিরোধক ট্যাবলেটও পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল সঈদ হাসনাইন জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গের ভেতর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পানীয় জল রয়েছে। আছে খাদ্যও। শ্রমিকেরাও সুরক্ষিত। কিছু শ্রমিকের বাড়ির লোকজনকেও ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। উদ্দেশ্য, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের মনোবল অটুট রাখা।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মনোবিদ অভিষেক শর্মাকে কর্তৃপক্ষ সুড়ঙ্গমুখে নিয়ে এসেছেন। তিনি শ্রমিকদের শারীরিকভাবে চাঙা থাকার উপায় বাতলাচ্ছেন। সুড়ঙ্গের মধ্যে দিনে অন্তত দুই কিলোমিটার হাঁটতে বলেছেন সবাইকে। সব সময় একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। যোগাসন করার পরামর্শ দিয়েছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেককে পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে।

১২ নভেম্বর সাড়ে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে ধস নামে। ৮ মিটার প্রশস্ত ওই সুড়ঙ্গে ৪১ শ্রমিক আটকে রয়েছেন। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা। জীবিকার জন্য তাঁরা এই কাজে এসেছেন ওডিশা, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ, আসাম, বিহার, হিমাচল প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় এসএসসি ২০০০ ব্যাচ ফ্রেন্ডস ক্লাবের বন্ধুত্বদের মিলন মেলা

মার্কিন যন্ত্র হলে উত্তর কাশীতে সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককেই নিরাপদে উদ্ধার করা যাবে

Update Time : ০৭:০২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘অগার ড্রিলিং মেশিন’ নতুন করে কাজে নামানো হয়েছে। এই যন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারলে আড়াই-তিন দিনের মধ্যে উত্তরাখন্ড রাজ্যের উত্তর কাশীতে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককেই নিরাপদে উদ্ধার করা যাবে। না হলে অপেক্ষা করতে হতে পারে আরও দুই সপ্তাহ। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব অনুরাগ জৈন বুধবার এ কথা বলেছেন।

অগার ড্রিলিং মেশিন দিয়ে আড়াআড়িভাবে সুড়ঙ্গের ধস সরানোর চেষ্টা চলছে। গত শুক্রবার ওই মেশিনে গোলমাল দেখা দিয়েছিল। ফলে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে তা আবার কাজে লাগানো হয়েছে।

অনুরাগ জৈন সাংবাদিকদের বলেছেন, অগার মেশিন কার্যকর হবে বলেই তাঁদের আশা। না হলে বিকল্প ব্যবস্থাও জারি রাখা হয়েছে। মেশিন কার্যকর হলে আড়াই-তিন দিনের মধ্যে সাফল্য আসবে। না হলে সপ্তাহ দুয়েক লাগতে পারে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে পাহাড়ের ওপর যন্ত্র নিয়ে গিয়ে লম্বালম্বি ড্রিল করা হচ্ছে। ড্রিলিং চলছে সুড়ঙ্গের অন্য প্রান্ত দিয়েও। সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য সাড়ে চার কিলোমিটার।

আশার আলো প্রথম দেখা দেয় মঙ্গলবার। ছয় ইঞ্চির একটি পাইপ আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়। সেই পাইপ দিয়ে পাঠানো হয় খাদ্য, পানীয়, ওষুধ। তা ছাড়া নিয়ে যাওয়া হয় একটা এন্ডোস্কপিক ফ্লেক্সি ক্যামেরাও। সেই ক্যামেরার ছবি দেখায়, ৪১ শ্রমিকই সুস্থ আছেন। তাঁদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ কথাও বলে। তাঁদের মনোবল অটুট রাখার পরামর্শ দিয়ে বলে, শিগগিরই তাঁদের উদ্ধার করা হবে।

বুধবার ওই পাইপ দিয়ে নিরামিষ পোলাও, রুটি ও মটর-পনিরের তরকারি শ্রমিকদের পাঠানো হয়। খাবার তৈরি করা হয়েছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখেই। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ফলও। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, সঞ্জিত রানা নামের এক পাচক চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে খাবার তৈরি করছেন। তিনি বলেছেন, হজম করতে সুবিধা হবে, এমন খাবার তৈরির পরামর্শ তাঁকে দেওয়া হয়েছে। রান্নায় কম তেল ও মসলা ব্যবহার করা হয়েছে। রুটি তৈরি করা হয়েছে মাখন দিয়ে। পাইপ মারফত পাঠানো হয়েছে খাবারের দেড় শ প্যাকেট। ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, কলা ও কমলালেবু। সোমবার পাঠানো হয়েছিল গরম খিচুড়ি।

সরকারি বরাতে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মানসিক অবসাদ যাতে না আসে, সে জন্য শ্রমিকদের অবসাদ নিরোধক ট্যাবলেটও পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল সঈদ হাসনাইন জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গের ভেতর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পানীয় জল রয়েছে। আছে খাদ্যও। শ্রমিকেরাও সুরক্ষিত। কিছু শ্রমিকের বাড়ির লোকজনকেও ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। উদ্দেশ্য, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের মনোবল অটুট রাখা।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মনোবিদ অভিষেক শর্মাকে কর্তৃপক্ষ সুড়ঙ্গমুখে নিয়ে এসেছেন। তিনি শ্রমিকদের শারীরিকভাবে চাঙা থাকার উপায় বাতলাচ্ছেন। সুড়ঙ্গের মধ্যে দিনে অন্তত দুই কিলোমিটার হাঁটতে বলেছেন সবাইকে। সব সময় একে অন্যের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন। যোগাসন করার পরামর্শ দিয়েছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেককে পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে।

১২ নভেম্বর সাড়ে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে ধস নামে। ৮ মিটার প্রশস্ত ওই সুড়ঙ্গে ৪১ শ্রমিক আটকে রয়েছেন। তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা। জীবিকার জন্য তাঁরা এই কাজে এসেছেন ওডিশা, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ, আসাম, বিহার, হিমাচল প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে।