ঢাকা 10:39 pm, Sunday, 29 June 2025

হাজীগঞ্জে অনারারী ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

  • Reporter Name
  • Update Time : 05:20:20 pm, Monday, 29 January 2024
  • 13 Time View
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, ০১৭১০-২২৮৮২২
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও পাঠান বাহিনীর প্রধান অনারারী ক্যাপ্টেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত (দাফন) করা হয়েছে। গতকাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাযা ও গার্ড অব অনারসহ পুস্পস্তবক শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
এদিন ভোরে রাজধানী জুরাইন এলাকায় তাঁর প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শনিবার সকালে নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন কন্যা, নাতি-নাতনিসহ আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি ওই গ্রামের পাঠান বাড়ির মৃত মো. আব্দুল গনি পাঠানের ছেলে।
জানাযার পূর্বে পৃথক গার্ড অব. অনার প্রদান করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপ্টেন ফারহানের নেতৃত্বে কুমিল্লা সেনানিবাসের চৌকস সেনাদল। পরে সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষে মরহুমের কফিনে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীলের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার ও পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
গার্ড অব অনারে সালাম প্রদর্শন করেন, হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিন্টু কুমার দত্তের নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ থানার চৌকস পুলিশের একটি দল। এসময় বিউগলের করুণ সুর বেজে উঠে। পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিশেষ মরহুমের কপিনে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান। দাফনের পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে বিদায়ী সম্মাননা জানান।
জানাযা অনুষ্ঠানে অনারারী ক্যাপ্টেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠানের প্রতি স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাইনুদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ আহাম্মদ মজুমদার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. আবু তাহের, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউছুফ প্রধানীয়া সুমন, পরিবারের পক্ষে শিল্পপতি জাভেদ ইকবাল পাঠান প্রমুখ। এ সময় বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক শতাধীক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে অনারারী ক্যাপ্টেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান, চাঁদপুর- ৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম ফারুক মুরাদ, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার অনারারী ক্যাপ্টেন ও পাঠান বাহিনীর প্রধান জহিরুল হক পাঠান ছিলেন, পাকবাহিনীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত, সাহসী আর শক্ত মনোবলের এক প্রতীক। তিনি যুদ্ধকালীন চাঁদপুর মহকুমা ও সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকায় মুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পাঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা মরহুম আবদুল গণি পাঠান, মাতা মরহুমা তাহেরুন নেছা, স্ত্রী নার্গিস হক। তিনি আট ভাই-বোনের মধ্যে সপ্তম এবং তিন সন্তানের জনক। শৈশবে জহিরুল হক পাঠান অলিপুর প্রাইমারি স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে বলাখাল হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ছোটবেলা থেকে জহিরুল হক পাঠান ছিলেন একজন ভালো খেলোয়াড়, তাই সেনাবাহিনীতে তিনি ভালো খেলোয়াড় হিসেবেও সুনাম অর্জন করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছাড়লেন ৬ সন্তানের জননী

হাজীগঞ্জে অনারারী ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

Update Time : 05:20:20 pm, Monday, 29 January 2024
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্, হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি, ০১৭১০-২২৮৮২২
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও পাঠান বাহিনীর প্রধান অনারারী ক্যাপ্টেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত (দাফন) করা হয়েছে। গতকাল রোববার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাযা ও গার্ড অব অনারসহ পুস্পস্তবক শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
এদিন ভোরে রাজধানী জুরাইন এলাকায় তাঁর প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শনিবার সকালে নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন কন্যা, নাতি-নাতনিসহ আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি ওই গ্রামের পাঠান বাড়ির মৃত মো. আব্দুল গনি পাঠানের ছেলে।
জানাযার পূর্বে পৃথক গার্ড অব. অনার প্রদান করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপ্টেন ফারহানের নেতৃত্বে কুমিল্লা সেনানিবাসের চৌকস সেনাদল। পরে সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষে মরহুমের কফিনে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীলের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার ও পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
গার্ড অব অনারে সালাম প্রদর্শন করেন, হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিন্টু কুমার দত্তের নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ থানার চৌকস পুলিশের একটি দল। এসময় বিউগলের করুণ সুর বেজে উঠে। পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিশেষ মরহুমের কপিনে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান। দাফনের পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে বিদায়ী সম্মাননা জানান।
জানাযা অনুষ্ঠানে অনারারী ক্যাপ্টেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠানের প্রতি স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাইনুদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ আহাম্মদ মজুমদার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. আবু তাহের, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউছুফ প্রধানীয়া সুমন, পরিবারের পক্ষে শিল্পপতি জাভেদ ইকবাল পাঠান প্রমুখ। এ সময় বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক শতাধীক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে অনারারী ক্যাপ্টেন বীরমুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান, চাঁদপুর- ৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) পঙ্কজ কুমার দে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম ফারুক মুরাদ, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার অনারারী ক্যাপ্টেন ও পাঠান বাহিনীর প্রধান জহিরুল হক পাঠান ছিলেন, পাকবাহিনীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত, সাহসী আর শক্ত মনোবলের এক প্রতীক। তিনি যুদ্ধকালীন চাঁদপুর মহকুমা ও সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকায় মুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার অলিপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পাঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর পিতা মরহুম আবদুল গণি পাঠান, মাতা মরহুমা তাহেরুন নেছা, স্ত্রী নার্গিস হক। তিনি আট ভাই-বোনের মধ্যে সপ্তম এবং তিন সন্তানের জনক। শৈশবে জহিরুল হক পাঠান অলিপুর প্রাইমারি স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে বলাখাল হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৫৩ সালের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ছোটবেলা থেকে জহিরুল হক পাঠান ছিলেন একজন ভালো খেলোয়াড়, তাই সেনাবাহিনীতে তিনি ভালো খেলোয়াড় হিসেবেও সুনাম অর্জন করেন।