গ্রীষ্মকাল ফলের ঋতু। এ সময়ে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায়। দেশীয় গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে কাঁচা তাল অন্যতম, যা বছরের অল্প সময় পাওয়া যায়। কাঁচা তালের মধ্যে থাকা সুস্বাদু নরম জলীয় অংশ তালশাঁস নামে পরিচিত।
তালশাঁস নরম, হালকা নরম বা একটু শক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। কেউ নরম শাঁস খেতে বেশি পছন্দ করেন, আবার কেউ একটু শক্তটা খেতে পছন্দ করেন। এই তালশাঁস খেতেও যেমন সুস্বাদু তেমনি রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। মৌসুমি এ ফলটি খেলে মিলবে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।
জেনে নেই তালশাঁসের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ। এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন মিরপুর ইসলামি ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো মৌসুমি ফল শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। মৌসুমি ফল নির্দিষ্ট মৌসুমে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গরমকালে তালের শাঁস শরীরের জন্য উপকারী।’
তালশাঁসের পুষ্টিগুণ
তালের শাঁসের প্রায় ৮০ শতাংশ পানি। এতে রয়েছে কার্বহাইড্রেট, অল্প পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট। রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক ইত্যাদি। আরও রয়েছে ফাইবার এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
উপকারিতা
গরমের কারণে আমাদের শরীর ঘেমে অনেক পানি বের হয়ে যায়। তালের শাঁস শরীর ঠান্ডা করে এবং পানীয় অংশ শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
গরমে পানিশূন্যতার কারণে চুলকানি বা এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমে খাদ্যতালিকায় তালের শাঁস রাখলে এই সমস্যা কমবে।
এতে রয়েছে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম, যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে গরমের ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর সতেজ থাকে।
গরমের কারণে সানবার্ন হয়, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তালশাঁসের উপাদানগুলো এ সমস্যা প্রতিরোধ করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গরমে শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এসব রোগ প্রতিহত হতে পারে তালশাঁস খেলে।
এটি খেলে হজমশক্তি বাড়ে। পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ হয়। আঁশ সমৃদ্ধ তালশাঁস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও কার্যকরী।
তালশাঁস লো-ক্যালরির খাবার। এতে পানি ও ফাইবার থাকায় পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধাভাব কমায়। এভাবে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
তালশাঁস খেলে মুখের অরুচি এবং বমি বমি ভাব দূর হয়।
তালশাঁসে থাকা ক্যালসিয়াস, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের অ্যালার্জি, পানি পড়া ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন থাকায় তালশাঁস রক্তশূন্যতা দূর করতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খেলে শরীরে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয়।
তালশাঁস লিভারের সুরক্ষায় কাজ করে। এটি লিভার থেকে ক্ষতিকর ও দূষিত পদার্থ বের করতে ভূমিকা রাখে।
তালশাঁস খেলে স্মৃতিশক্তি ভালো হয়, দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।
চুল পড়া রোধ করে চুলের মসৃণতা বাড়াতেও সাহায্য করে তালশাঁসের পুষ্টি উপাদানগুলো।
সতর্কতা
তালশাঁস নিঃসন্দেহে উপকারী। তবে তা অতিরিক্ত খাওয়া হলে পেট গরম হয়ে পেট ব্যাথা, বমি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
যাদের কিডনির সমস্যা আছে তারা তালশাঁস খেলে শরীরে পটাশিয়াম বেড়ে যেতে পারে। তাই কিডনি রোগীরা খেতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।