ঢাকা 1:43 pm, Friday, 18 July 2025

বেতন না পোষালে অন্য পেশায় চলে যান-প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:48:48 pm, Sunday, 26 January 2025
  • 12 Time View

ছবি-সংগৃহিত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ‘আমি শিক্ষকদের বলবো, যদি সমাজে আপনাদের জন্য যে শ্রদ্ধার আসন আছে, সেটা অটুট রাখতে হয় বা ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে শিক্ষকতা পেশাকে অর্থমূল্যে বিবেচনা করা যাবে না। অবশ্যই আপনাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য সরকারের উদ্যোগ আছে। কিন্তু যারা মনে করবেন যে, না আমার তো পোষাচ্ছে না, খুব ভালো, তাহলে আপনি প্রাথমিকে থাকবেন না, অন্য পেশায় চলে যান। আপনি একটা বিষয় ভেবে দেখেন, ভালো ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা হয়। তাহলে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে হয় না কেন? মানুষ ভাবে, সরকারি প্রাইমারি স্কুল– এখানে তো পড়ালেখা হয় না। সুতরাং নিজেদের সম্পর্কে মানুষের এ নেতিবাচক ভাবনাটা পাল্টানোর জন্য হলেও কাজ করা দরকার।’

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর চট্টগ্রাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘সব বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ চলছে। সব বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো নিবন্ধনের আওতায় আনতে আমরা সেগুলোকে নিবন্ধন করাচ্ছি। তবে নিবন্ধন না থাকলে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ বন্ধের মতো শর্ত আরোপ করা হবে। সরকারি-বেসরকারি সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমরা পাঠ্যপুস্তক দিয়ে থাকি। তাহলে আমরা শর্ত আরোপ করতে পারি, রেজিস্ট্রেশন না থাকলে আপনি পাঠ্যপুস্তক পাবেন না।’

বিধান রঞ্জন রায় বলেন, ‘প্রাইমারি এডুকেশন সেক্টরে আমরা অনেক ভালো ভালো শিক্ষক পাচ্ছি। তাদের সুন্দরভাবে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। সরকারি নানা উদ্যোগ তাদের জন্য আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শ্রেণিকক্ষে আমরা সেটার ফলাফল পাচ্ছি না। তাহলে এত যে ভালো, মেধাবী লোকজন প্রাইমারি লেভেলে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন, তারা কী শুধু কর্মসংস্থানের অভাবে আসছেন কি না, এ আলোচনাটা চলে আসে। এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টা। এটা নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে।’

তিনি বলেন, ‘আবার সহকারী শিক্ষক হিসেবে যিনি জয়েন করছেন, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে তিনি এই পদ থেকেই অবসরে যাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পদোন্নতি হবে না, বেতন-ভাতা বাড়বে না, এটা হতে পারে না। এখন এক্ষেত্রে বিগত সরকার কী করেছে? প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের চাকরিটাকে সেকেন্ড ক্লাস ঘোষণা করলো। কিন্তু ফাঁকটা রেখে দিল কোথায়- তাদের গ্রেডটা বাড়ানো হলো না। ফলে তারা সেকেন্ড ক্লাস অনুযায়ী যে বেতন-ভাতা পেতেন সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হলেন।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষকতায় এসে আমি কী পেয়েছি, কী পাইনি সেটার জন্য আফসোস করে আমি আমার পেশায় ফাঁকি দিচ্ছি কি না, ক্লাসে ফাঁকি দিচ্ছি কি না, সেটা ভাবতে হবে। ফাঁকি দিয়ে কিন্তু কোনও মহৎ কাজ হয় না। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের পদটার গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। অর্থমূল্যে এটার বিচার হবে না। কারণ, একটি শিশুর মানুষ হয়ে ওঠার প্রাথমিক পাঠটুকু সে পাচ্ছে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের কাছ থেকে।’

পদোন্নতি ও লোকবল সংকট নিরসনে তিনি বলেন, ‘শূন্য পদ পূরণে বা লোকবল সংকট নিরসনে আমরা উদ্যোগ নেবো। পদোন্নতিজনিত সমস্যা সমাধানেও আমরা কনসালটেন্ট কমিটি গঠন করেছি। কারণ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দাবিদাওয়াগুলো পরস্পর বিরোধী হয়ে যায় এবং এটার জন্য মামলা হয়। পরে মামলা হলে আমরা আটকে বসে থাকি। এই যে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি হচ্ছে না তা মামলার জন্য এবং সেটা তো আপনাদেরই আরেকজন কলিগ করেছেন। আমাদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রে বাধা আমরাই।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে আঁকা হচ্ছে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’র গ্রাফিতি

বেতন না পোষালে অন্য পেশায় চলে যান-প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা

Update Time : 10:48:48 pm, Sunday, 26 January 2025

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ‘আমি শিক্ষকদের বলবো, যদি সমাজে আপনাদের জন্য যে শ্রদ্ধার আসন আছে, সেটা অটুট রাখতে হয় বা ফিরিয়ে আনতে হয়, তাহলে শিক্ষকতা পেশাকে অর্থমূল্যে বিবেচনা করা যাবে না। অবশ্যই আপনাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য সরকারের উদ্যোগ আছে। কিন্তু যারা মনে করবেন যে, না আমার তো পোষাচ্ছে না, খুব ভালো, তাহলে আপনি প্রাথমিকে থাকবেন না, অন্য পেশায় চলে যান। আপনি একটা বিষয় ভেবে দেখেন, ভালো ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা হয়। তাহলে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে হয় না কেন? মানুষ ভাবে, সরকারি প্রাইমারি স্কুল– এখানে তো পড়ালেখা হয় না। সুতরাং নিজেদের সম্পর্কে মানুষের এ নেতিবাচক ভাবনাটা পাল্টানোর জন্য হলেও কাজ করা দরকার।’

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর চট্টগ্রাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘সব বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ চলছে। সব বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো নিবন্ধনের আওতায় আনতে আমরা সেগুলোকে নিবন্ধন করাচ্ছি। তবে নিবন্ধন না থাকলে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ বন্ধের মতো শর্ত আরোপ করা হবে। সরকারি-বেসরকারি সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমরা পাঠ্যপুস্তক দিয়ে থাকি। তাহলে আমরা শর্ত আরোপ করতে পারি, রেজিস্ট্রেশন না থাকলে আপনি পাঠ্যপুস্তক পাবেন না।’

বিধান রঞ্জন রায় বলেন, ‘প্রাইমারি এডুকেশন সেক্টরে আমরা অনেক ভালো ভালো শিক্ষক পাচ্ছি। তাদের সুন্দরভাবে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। সরকারি নানা উদ্যোগ তাদের জন্য আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শ্রেণিকক্ষে আমরা সেটার ফলাফল পাচ্ছি না। তাহলে এত যে ভালো, মেধাবী লোকজন প্রাইমারি লেভেলে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন, তারা কী শুধু কর্মসংস্থানের অভাবে আসছেন কি না, এ আলোচনাটা চলে আসে। এখানে একটা বিষয় হচ্ছে, শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টা। এটা নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে।’

তিনি বলেন, ‘আবার সহকারী শিক্ষক হিসেবে যিনি জয়েন করছেন, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে তিনি এই পদ থেকেই অবসরে যাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। পদোন্নতি হবে না, বেতন-ভাতা বাড়বে না, এটা হতে পারে না। এখন এক্ষেত্রে বিগত সরকার কী করেছে? প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের চাকরিটাকে সেকেন্ড ক্লাস ঘোষণা করলো। কিন্তু ফাঁকটা রেখে দিল কোথায়- তাদের গ্রেডটা বাড়ানো হলো না। ফলে তারা সেকেন্ড ক্লাস অনুযায়ী যে বেতন-ভাতা পেতেন সেটা থেকে তারা বঞ্চিত হলেন।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষকতায় এসে আমি কী পেয়েছি, কী পাইনি সেটার জন্য আফসোস করে আমি আমার পেশায় ফাঁকি দিচ্ছি কি না, ক্লাসে ফাঁকি দিচ্ছি কি না, সেটা ভাবতে হবে। ফাঁকি দিয়ে কিন্তু কোনও মহৎ কাজ হয় না। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের পদটার গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। অর্থমূল্যে এটার বিচার হবে না। কারণ, একটি শিশুর মানুষ হয়ে ওঠার প্রাথমিক পাঠটুকু সে পাচ্ছে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের কাছ থেকে।’

পদোন্নতি ও লোকবল সংকট নিরসনে তিনি বলেন, ‘শূন্য পদ পূরণে বা লোকবল সংকট নিরসনে আমরা উদ্যোগ নেবো। পদোন্নতিজনিত সমস্যা সমাধানেও আমরা কনসালটেন্ট কমিটি গঠন করেছি। কারণ অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দাবিদাওয়াগুলো পরস্পর বিরোধী হয়ে যায় এবং এটার জন্য মামলা হয়। পরে মামলা হলে আমরা আটকে বসে থাকি। এই যে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি হচ্ছে না তা মামলার জন্য এবং সেটা তো আপনাদেরই আরেকজন কলিগ করেছেন। আমাদের অগ্রগতির ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রে বাধা আমরাই।’