ঢাকা 9:45 pm, Tuesday, 9 September 2025
উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রুপালি ইলিশ

ভারতে ইলিশ যাচ্ছে অর্ধেক দামে

বাজারে ইলিশ যেন এখন সোনার হরিণ। উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রুপালি ইলিশ। খুচরা বাজারে বড় সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা বা তারও উপরে। এতে মধ্যবিত্ত মানুষের ইলিশ কেনা যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন- যেন দেশের মানুষের পাতে ইলিশ ওঠাই এখন দায়। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে অর্থেক দামে ভারতকে ইলিশ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছে সরকার। ইতোমধ্যে ১২.৫ ডলার বা ১৫২৫ টাকা কেজি দরে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, দেশের সাধারণ মানুষ উচ্চমূল্যের কারণে ইলিশ কিনতে পারছেন না। সেখানে ভারতের দাদাদের কম টাকায় ইলিশ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে সরকার। তারা অভিযোগ করছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের মতোই এই সরকারও ভারতপ্রীতি দেখাচ্ছে। তাদের দাবি, কম টাকায় ভারতে নয়, দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সোমবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানান, খুচরা বাজারে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২৫০০-২৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি এক কেজি ওজনের বেশি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৩০০০ টাকা বা তারও উপরে বিক্রি হচ্ছে। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৭০০ টাকা।

এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও ভারতে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য সাড়ে ১২ ডলার অর্থাৎ প্রায় এক হাজার ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শর্তসাপেক্ষে দুর্গাপূজায় ভারতে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই আলোকে আগ্রহী রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে আবেদন গ্রহণ করা হবে। আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র ও মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সসহ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি দাখিল করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা সরকারের আহ্বান ছাড়াই আবেদন করেছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদেরও নতুনভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে।

গতবারের চেয়ে অর্ধেক ইলিশ রপ্তানির অনুমতি : গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে দুই হাজার ৪২০ টন করা হয়। গত বছর রপ্তানির অনুমতি পায় ৪৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে দুই হাজার ৪০০ টন, আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন ইলিশ রপ্তানি করে। ওই সময় প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানিমূল্য ধরা হয়েছিল ১০ মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা। তবে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে অর্ধেক ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলো।

এর আগে গত ২৯ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে ইলিশ চেয়ে চিঠি দেয় পশ্চিমবঙ্গের ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’। চিঠিতে বলা হয়, তারা আগামী সেপ্টেম্বরে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ইলিশ আমদানি করতে চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এদিকে ভরা মৌসুমেও দেশে চলছে ইলিশের তীব্র সংকট। নদী সাগরে ইলিশ নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে ইলিশ গেলে দেশের বাজারে দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে-বলছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী জহির সিকদার বলেন, মৌসুমে মোকামে যেখানে ২-৩ হাজার টন ইলিশ আসে, সেখানে এবার দিনে ১০০ টনও আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকরা ইলিশ সংগ্রহে নামলে দেশের বাজারে আর দেখা মিলবে না ইলিশের। সেইসঙ্গে দামও চলে যাবে নাগালের বাইরে। দেশের বাজারেই যেখানে এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম প্রতি কেজি প্রায় তিন হাজার টাকা সেখানে দেড় হাজার টাকারও কম রেটে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত কি করে দিল সরকার? এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে। (যুগান্তর)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

র‌্যাপার থেকে নেপালের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী, কে এই বালেন

উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রুপালি ইলিশ

ভারতে ইলিশ যাচ্ছে অর্ধেক দামে

Update Time : 01:33:23 pm, Tuesday, 9 September 2025

বাজারে ইলিশ যেন এখন সোনার হরিণ। উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রুপালি ইলিশ। খুচরা বাজারে বড় সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা বা তারও উপরে। এতে মধ্যবিত্ত মানুষের ইলিশ কেনা যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন- যেন দেশের মানুষের পাতে ইলিশ ওঠাই এখন দায়। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে অর্থেক দামে ভারতকে ইলিশ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছে সরকার। ইতোমধ্যে ১২.৫ ডলার বা ১৫২৫ টাকা কেজি দরে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, দেশের সাধারণ মানুষ উচ্চমূল্যের কারণে ইলিশ কিনতে পারছেন না। সেখানে ভারতের দাদাদের কম টাকায় ইলিশ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে সরকার। তারা অভিযোগ করছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের মতোই এই সরকারও ভারতপ্রীতি দেখাচ্ছে। তাদের দাবি, কম টাকায় ভারতে নয়, দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সোমবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানান, খুচরা বাজারে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ২৫০০-২৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি এক কেজি ওজনের বেশি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৩০০০ টাকা বা তারও উপরে বিক্রি হচ্ছে। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০-১৭০০ টাকা।

এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও ভারতে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য সাড়ে ১২ ডলার অর্থাৎ প্রায় এক হাজার ৫২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শর্তসাপেক্ষে দুর্গাপূজায় ভারতে ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই আলোকে আগ্রহী রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার মধ্যে আবেদন গ্রহণ করা হবে। আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র ও মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সসহ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি দাখিল করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য সাড়ে ১২ মার্কিন ডলার সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা সরকারের আহ্বান ছাড়াই আবেদন করেছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদেরও নতুনভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে।

গতবারের চেয়ে অর্ধেক ইলিশ রপ্তানির অনুমতি : গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কমিয়ে দুই হাজার ৪২০ টন করা হয়। গত বছর রপ্তানির অনুমতি পায় ৪৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে দুই হাজার ৪০০ টন, আরেকটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন ইলিশ রপ্তানি করে। ওই সময় প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানিমূল্য ধরা হয়েছিল ১০ মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা। তবে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে অর্ধেক ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলো।

এর আগে গত ২৯ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে ইলিশ চেয়ে চিঠি দেয় পশ্চিমবঙ্গের ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’। চিঠিতে বলা হয়, তারা আগামী সেপ্টেম্বরে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ইলিশ আমদানি করতে চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এদিকে ভরা মৌসুমেও দেশে চলছে ইলিশের তীব্র সংকট। নদী সাগরে ইলিশ নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতে ইলিশ গেলে দেশের বাজারে দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে-বলছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী জহির সিকদার বলেন, মৌসুমে মোকামে যেখানে ২-৩ হাজার টন ইলিশ আসে, সেখানে এবার দিনে ১০০ টনও আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকরা ইলিশ সংগ্রহে নামলে দেশের বাজারে আর দেখা মিলবে না ইলিশের। সেইসঙ্গে দামও চলে যাবে নাগালের বাইরে। দেশের বাজারেই যেখানে এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম প্রতি কেজি প্রায় তিন হাজার টাকা সেখানে দেড় হাজার টাকারও কম রেটে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত কি করে দিল সরকার? এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো ঘাপলা আছে। (যুগান্তর)