আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমবারের মতো দেউলিয়াত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে মার্কিন সরকারের সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কংগ্রেসের রিপাবলিকান স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির মধ্যকার বৈঠক কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বাড়ানো না হলে আগামী ১ জুনের পর সরকারি ব্যয় পরিশোধের উপায় থাকবে না। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হতে পারে।
এ বিষয়টি মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন সোমবার এক চিঠিতে স্পিকারকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফা বৈঠকের পর সোমবারের বৈঠকেও তারা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। খবর রয়টার্স, এবিসি নিউজ, সিএনএন, এএফপি।
দেউলিয়াত্বের পরিস্থিতি পরিহার করতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সরকারের ব্যয়সীমা নির্ধারণ করার দায়িত্ব কংগ্রেসের। স্পিকার ইতোমধ্যে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন সামাজিক কর্মসূচিতে ব্যয় সঙ্কোচন প্রশ্নে সরকার সম্মত না হলে ব্যয়ের সীমা তিনি বাড়াবেন না। সরকারের ব্যয়সীমা এখন ৩১ দশমকি ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এ সীমা বাড়ানো সরকারের নিয়মিত কাজের অংশ হলেও রাজনৈতিকভাবে এটা ব্যবহার করার অভিযোগে গত কয়েক বছর ধরেই বিতর্ক চলছে।
২০২১ সালে প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতাদের নাটকীয়তার পর সর্বশেষ সরকারের ব্যয়সীমা বাড়ানো হয়েছিল। ব্যক্তিগত এবং করপোরেট করই হচ্ছে মার্কিন সরকারের রাজস্বের প্রাথমিক উৎস। প্রাপ্ত রাজস্ব থেকেই সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি এবং সেবামূলক কাজে সহায়তা করে থাকে।
বাইডেন এবং ম্যাককার্থির মধ্যকার বৈঠক ফলপ্রসূ না হলেও তারা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাতেই আবারও বাইডেন এবং কেভিন ম্যাকার্থি বৈঠকে বসবেন।
বৈঠক শেষে ওভাল অফিস থেকে বের হয়ে স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি জোর দিয়ে বলেছেন, দেশ দেউলিয়া হওয়ার আগেই ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রশ্নে দুপক্ষই একমত।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা এখনো কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে পারিনি, তবে আমার মনে হয়ে যেসব ক্ষেত্রে আমাদের মতবিরোধ রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে আলোচনা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। আগের যেকোনো বৈঠকের চেয়ে সোমবারের বৈঠকের ‘টোন’ অনেক ভালো ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ম্যাকার্থির সঙ্গে ওভাল অফিসের বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ উল্লেখ করে বাইডেন স্বীকার করেছেন তাদের মধ্যে এখনো মতভেদ রয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমরা আবারও বলছি সমস্যা টেবিলের বাইরেই রয়েছে এবং এক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো দুপক্ষেরই পরস্পরের প্রতি আস্থা নিয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আসা। তিনি বলেন, বেশ কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকলেও স্পিকার, আমি ও তার শীর্ষ মধ্যস্থতাকারী এবং আমাদের কর্মকর্তারা এ আলোচনা চালিয়ে যাব।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন জানিয়েছেন, মার্কিন কোষাগারে আর মাত্র দিন দশেক সরকারি ব্যয় মেটানোর অর্থ রয়েছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে বর্তমান ঋণগ্রহণ সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে না বাড়ানো হলে কোষাগার শূন্য হয়ে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তিনি মার্কিন কংগ্রেসের নেতাদেরকে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে আমরা বাস্তবে চরম পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস যদি সরকারের সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পরিবার ভয়াবহ আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হবে। বিশ্বে আমাদের নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতাও প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সরকারি ব্যয় সঙ্কোচনের জন্য চাপ দিচ্ছে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টি বলছে, সরকারি ব্যয় সঙ্কোচন ছাড়াই সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়ানো হোক। এ বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও দুপক্ষই একমত যে, দেউলিয়াত্ব এড়াতে ঋণগ্রহণ সীমা বাড়াতে হবে। (রয়টার্স, এবিসি নিউজ, সিএনএন, এএফপি)