মনিরুল ইসলাম মনির:
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো চাঁদপুরেও মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাত থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমতে শুরু করেছে। যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় এবার ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্টিকটন । কৃষকরা আগাম আলু লাগিয়েছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে। তবে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে ২ দিনের বৃষ্টিতে কিছু কিছু জমিতে পানি জমতে শুরু করেছে। ফসল বাঁচাতে তাই চিন্তিত কৃষকরা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বৃষ্টিতে ভিজে জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করছিলেন চরকাশিম এলাকার কৃষক ইব্রাহিম গাজী ও বজলুল রশীদ দেওয়ান।
তাদের সঙ্গে কথা হলে কৃষক ইব্রাহিম গাজী বলেন, আমি এবার তিন বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। তিন দিন আগেই জমিতে সেচ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর থেকেই জমিতে এই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পানি জমতে শুরু করেছে। ফসল বাঁচাতে তাই বৃষ্টিতে ভিজেই পানি নিষ্কাশন করছি।
চরকাশিম গ্রামের কৃষক বজলুর রশীদ দেওয়ান বলেন, আমি ১২ বিঘা আলু লাগিয়েছি। কিন্তু এই অসময়ের বৃষ্টিতে আমার আগাম জাতের আড়াই বিঘা জমিতে পানি জমেছে। তাই পানি নিষ্কাশন করছি। না হলে আলু গাছের গোড়া পচতে পারে এবং গাছ নুইয়ে যেতে পারে। এ রকম বৃষ্টি চলতে থাকলে ক্ষতির সম্মুখীন হবো।
তথ্যমতে, চাঁদপুর সদরে এবার আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৬শ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩৮ হাজার ৪শ মেট্টিক টন। মতলব উত্তরে ৬শ’ ৬৫ হেক্টর এবং উৎপাদন ১৮ হাজার ৩শ’ ৬০ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১শ’ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৫১ হাজার ৬শ’ মে.টন। হাজীগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫শ’ ৮৫ হেক্টর এবং উৎপাদন ১৪ হাজার ১শ’ মে.টন।
শাহরাস্তিতে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১ হাজার ৬শ ৮০ মে.টন। কচুয়ায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৪৯ হাজার ২শ মে.টন।
ফরিদগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১শ ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ২ হাজার ৮শ ৮০ মে.টন এবং হাইমচরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১শ ৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩ হাজার ৮শ ৪০ মে.টন।
চাঁদপুরে ১২টি হিমাগারে ৭০ হাজার মে. টন আলু সংরক্ষণ করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বাকি আলু হিমাগারের বাহিরে থাকে। এর মধ্যে কিছু পরিমাণ আলু উৎপাদন মৌসুম খেকে বিক্রি হয়ে আসছে এবং বাকি আলু কৃষকগণ কৃষিবিভাগের পরামর্শে কৃত্রিমভাবে মাচায় সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে কৃষি দপ্তর জানায়।
এ দিকে চাঁদপুরের সঙ্গে নৌ, সড়ক ও রেলপথের ভালো যোগাযোগ থাকায় দেশের সর্বত্র কৃষিপণ্য পরিবহন অন্য জেলার চেয়ে খুবই সহজ ও নিরাপদ ইত্যাদি সুযোগ থাকা সত্বেও আলু চাষিরা মার খাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আলু বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী সবজি। চাঁদপুর আলু উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন জেলা। মুন্সীগঞ্জের পরেই চাঁদপুরের অবস্থান। ফলে চাঁদপুরে বেসরকারিভাবে ১২টি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এগুলোর ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৭০ হাজার মে.টন। মতলবের করিম কোল্ডস্টোরেজে ধারণ ক্ষমতা বাড়ালেও বাকি আলু কৃষকদের নিজ দায়িত্বে মাচায় বা কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করতে হয়।
৮ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ ও উৎপাদন করে আসছে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই আলুর ফলন ও চাষাবাদ হয়। বিগত ক’বছর ধরেই চাঁদপুরে ব্যাপক আলু উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষ করে আলু উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর সদরের সফরমালী, রালদিয়া, মুন্সীরহাট, কুমারডুগি, শাহাতলী, মতলব দক্ষিণের আড়ং, বরদিয়া নারায়ণপুর, কেতুয়া এলাকা। বর্তমানে আলুর খুচরা মূল্য ৪০-৪৫ টাকা কেজি ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দীকি বলেন, জমিতে বেশি দিন পানি জমে থাকলে আলুর পচন ধরে কৃষকের ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে জমির পানি নিষ্কাশন করলে ক্ষতির সম্ভাবনা কিছুটা কম হবে। তবে এই বৃষ্টিতে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই আবহাওয়া ভালো হবে। তবুও আমরা পানি নিষ্কাশনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।