ঢাকা ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩০:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
  • ৭০ Time View

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি :

টাকার বিনিময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন করে নেক্কারজনক দৃষ্টান্ত দেখালেন এক জনপ্রতিনিধি। মামলার বাদী পক্ষকে তাদের পছন্দমত প্রতিবেদন দেখিয়ে দশ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু আদালতে ভিন্ন প্রতিবেদন দাখিল করেন। জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকান্ডে হতবম্ব এলাকাবাসী।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে চাঁদপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট সিআর নং ১৮৫/২৪ (ফরিদগঞ্জ) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব প্রদান করে। যার স্মারক নাম্বর ৩৪৫, তারিখ : ২৫.০৩.২০২৪। চিঠিটি ২৮ মার্চ চেয়ারম্যানের হস্তগত হয়। যা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আবু তাহের পাটওয়ারী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে তিনি তৎকালিন প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরামকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তিনি চলতি বছরের ৫ মে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে আদালতে প্রেরণ করেন। তারও আগে তিনি বাদী পক্ষকে একটি তদন্ত প্রতিবেদনের কপি দেন বলে দাবী করেন বাদী পক্ষ।

প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরাম আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন- উপস্থিত বিবাদির স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুঝা যায় যে, বাদী ও বিবাদির মাঝে সাংসারিক জগড়া বিবাদ বিদ্ধমান রহিয়াছে। বাদিনী যৌতুক ও নির্যাতন সম্পর্কে যে দাবী করিয়াছেন তাহার সত্যতা খুজিয়া পাওয়া যায় নাই। অপরদিকে আরেকটি প্রতিবেদন যা প্যানেল চেয়ারম্যান কর্তৃক বাদীনির কাছে দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন- উপস্থিত বিবাদীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুঝা যায় বিবাদি মাঝে মাঝে বাদিনীর উপর শারীরিক নির্যাতন করিয়াছেন।

দু’টি প্রতিবেদনে দুই রকম তথ্য, বাক্য এবং শব্দ চয়নে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী পক্ষ। তাদের দাবী প্যানেল চেয়ারম্যান তাদের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়েছেন প্রতিবেদন সঠিক দিবেন বলেন। কিন্তু তিনি প্রতিপক্ষের কাছে এর চেয়ে বেশী টাকা নিয়ে তাদের পক্ষে লিখেছেন। তার প্রমাণ হিসেবে তারা উক্ত প্যানেল চেয়ারম্যানের ভয়েজ রেকর্ড এবং তাদেরকে দেওয়া প্রতিবেদন কপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেন।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৭ মে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কেরোয়া গ্রামের কবির হোসেন এর মেয়ে শারমিনের সাথে ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের কাসারা গ্রামের মৃত শাহজাহান সর্দারের পুত্র ইউসুফ আলীর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। সংসার জীবনে তাদের এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বয়স ৮ বছর এবং ছেলের ৩ বছর। মেয়ের শ্লীলতাহানীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শারমিন ইউসুফ দম্পত্তীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। বাবা হয়ে মেয়ের শ্লীলতাহানীকারীর পক্ষ নেওয়াতে সংসারে অশান্তি শুরু হয় বলে জানান শারমিন আক্তার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী ইউসুফ আলী স্ত্রী শারমিনকে শারীরিক নির্যাতন করে ঘরে থেকে বের করার অভিযোগ করা হয়। আস্তে আস্তে দুই সংসারে অশান্তির দানা বাধতে থাকে।

এক প্রর্যায়ে শারমীন আক্তার বাদী হয়ে স্বামী ইউসুফ আলী এবং শাশুড়ি আয়েশা বেগমকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। সেই মামলারই তদন্ত প্রতিবেদন ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রদান করে মহামান্য আদালত। চেয়ারম্যান শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তিনি দায়িত্ব দেন তৎকালিক প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরাম।

এ বিষয়ে মামলার বাদী শারমীন আক্তার এ প্রতিনিধিকে বলেন- আমি অনেক চেষ্টা করেছি সংসারটিকে টিকিয়ে রাখতে। অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। নিজের সর্বচ্চ দিয়ে স্বামীকে খুশি রাখতে পারিনি। মায়ের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা এনে তার চিকিৎসা করিয়েছি, সংসার চালিয়েছি কিন্তু এই অমানুষ তারপরও আমার উপর অত্যাচার করে। আমি তার সেবা করার সময়ও সে আমার শরীরের আঘাত করে। সে বাপ হয়ে মেয়ের শ্লীলতাহানীকারীর কাছে তার মেয়েকে কীভাবে পাঠায়? তাই বাধ্য হয়ে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।

এ বিষয়ে বিবাদী ইউসুফ আলী বলেন- আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি অসুস্থ হয়ে তাদেরই বাসায়, এ অবস্থায় কীভাবে তাকে নির্যাতন করতে পারি? আরেকটি ঘটনা যে উল্লেখ করেছে সে সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। যে ছেলে আমার মেয়ের শ্লীলতাহানী করেছে তার বিরুদ্ধে বিচার হয়েছে এবং সে সাজাও ভোগ করেছে।

এ বিষয়ের অন্যতম পঞ্চায়েত ওহিদ পাটওয়ারী বলেন, ইউসুফ আলী সম্পুর্ণ শ^শুরের উপর নির্ভরশীল। সে পঙ্গু হওয়ার পর সব খরচ মেয়েটি চালাতো। তারপরও সে মেয়েটির উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করতো।

অভিযুক্ত তৎকালিন প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরামকে তিন দিন ধরে অসংখ্যবার একাধিক নাম্বার থেকে কল দিয়েও (০১৭৯৮-৪৩২৬০৯) তাকে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহের পাটওয়ারীকে দুই দিন ধরে অসংখ্যবার একাধিক নাম্বার থেকে কল দিয়েও (০১৯২২-১২৬৯৮৭) তাকে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

কচুয়ায় ফাউন্ডেশন ফর ডাঃ আব্দুল হাই শিক্ষাবৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ!

Update Time : ০৬:৩০:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি :

টাকার বিনিময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন করে নেক্কারজনক দৃষ্টান্ত দেখালেন এক জনপ্রতিনিধি। মামলার বাদী পক্ষকে তাদের পছন্দমত প্রতিবেদন দেখিয়ে দশ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু আদালতে ভিন্ন প্রতিবেদন দাখিল করেন। জনপ্রতিনিধির এমন কর্মকান্ডে হতবম্ব এলাকাবাসী।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে চাঁদপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট সিআর নং ১৮৫/২৪ (ফরিদগঞ্জ) মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব প্রদান করে। যার স্মারক নাম্বর ৩৪৫, তারিখ : ২৫.০৩.২০২৪। চিঠিটি ২৮ মার্চ চেয়ারম্যানের হস্তগত হয়। যা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আবু তাহের পাটওয়ারী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে তিনি তৎকালিন প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরামকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তিনি চলতি বছরের ৫ মে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে আদালতে প্রেরণ করেন। তারও আগে তিনি বাদী পক্ষকে একটি তদন্ত প্রতিবেদনের কপি দেন বলে দাবী করেন বাদী পক্ষ।

প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরাম আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন- উপস্থিত বিবাদির স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুঝা যায় যে, বাদী ও বিবাদির মাঝে সাংসারিক জগড়া বিবাদ বিদ্ধমান রহিয়াছে। বাদিনী যৌতুক ও নির্যাতন সম্পর্কে যে দাবী করিয়াছেন তাহার সত্যতা খুজিয়া পাওয়া যায় নাই। অপরদিকে আরেকটি প্রতিবেদন যা প্যানেল চেয়ারম্যান কর্তৃক বাদীনির কাছে দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন- উপস্থিত বিবাদীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুঝা যায় বিবাদি মাঝে মাঝে বাদিনীর উপর শারীরিক নির্যাতন করিয়াছেন।

দু’টি প্রতিবেদনে দুই রকম তথ্য, বাক্য এবং শব্দ চয়নে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী পক্ষ। তাদের দাবী প্যানেল চেয়ারম্যান তাদের কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়েছেন প্রতিবেদন সঠিক দিবেন বলেন। কিন্তু তিনি প্রতিপক্ষের কাছে এর চেয়ে বেশী টাকা নিয়ে তাদের পক্ষে লিখেছেন। তার প্রমাণ হিসেবে তারা উক্ত প্যানেল চেয়ারম্যানের ভয়েজ রেকর্ড এবং তাদেরকে দেওয়া প্রতিবেদন কপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেন।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৭ মে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কেরোয়া গ্রামের কবির হোসেন এর মেয়ে শারমিনের সাথে ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের কাসারা গ্রামের মৃত শাহজাহান সর্দারের পুত্র ইউসুফ আলীর সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। সংসার জীবনে তাদের এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বয়স ৮ বছর এবং ছেলের ৩ বছর। মেয়ের শ্লীলতাহানীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শারমিন ইউসুফ দম্পত্তীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। বাবা হয়ে মেয়ের শ্লীলতাহানীকারীর পক্ষ নেওয়াতে সংসারে অশান্তি শুরু হয় বলে জানান শারমিন আক্তার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামী ইউসুফ আলী স্ত্রী শারমিনকে শারীরিক নির্যাতন করে ঘরে থেকে বের করার অভিযোগ করা হয়। আস্তে আস্তে দুই সংসারে অশান্তির দানা বাধতে থাকে।

এক প্রর্যায়ে শারমীন আক্তার বাদী হয়ে স্বামী ইউসুফ আলী এবং শাশুড়ি আয়েশা বেগমকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। সেই মামলারই তদন্ত প্রতিবেদন ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে প্রদান করে মহামান্য আদালত। চেয়ারম্যান শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তিনি দায়িত্ব দেন তৎকালিক প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরাম।

এ বিষয়ে মামলার বাদী শারমীন আক্তার এ প্রতিনিধিকে বলেন- আমি অনেক চেষ্টা করেছি সংসারটিকে টিকিয়ে রাখতে। অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। নিজের সর্বচ্চ দিয়ে স্বামীকে খুশি রাখতে পারিনি। মায়ের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা এনে তার চিকিৎসা করিয়েছি, সংসার চালিয়েছি কিন্তু এই অমানুষ তারপরও আমার উপর অত্যাচার করে। আমি তার সেবা করার সময়ও সে আমার শরীরের আঘাত করে। সে বাপ হয়ে মেয়ের শ্লীলতাহানীকারীর কাছে তার মেয়েকে কীভাবে পাঠায়? তাই বাধ্য হয়ে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।

এ বিষয়ে বিবাদী ইউসুফ আলী বলেন- আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি অসুস্থ হয়ে তাদেরই বাসায়, এ অবস্থায় কীভাবে তাকে নির্যাতন করতে পারি? আরেকটি ঘটনা যে উল্লেখ করেছে সে সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। যে ছেলে আমার মেয়ের শ্লীলতাহানী করেছে তার বিরুদ্ধে বিচার হয়েছে এবং সে সাজাও ভোগ করেছে।

এ বিষয়ের অন্যতম পঞ্চায়েত ওহিদ পাটওয়ারী বলেন, ইউসুফ আলী সম্পুর্ণ শ^শুরের উপর নির্ভরশীল। সে পঙ্গু হওয়ার পর সব খরচ মেয়েটি চালাতো। তারপরও সে মেয়েটির উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করতো।

অভিযুক্ত তৎকালিন প্যানেল চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম আকরামকে তিন দিন ধরে অসংখ্যবার একাধিক নাম্বার থেকে কল দিয়েও (০১৭৯৮-৪৩২৬০৯) তাকে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহের পাটওয়ারীকে দুই দিন ধরে অসংখ্যবার একাধিক নাম্বার থেকে কল দিয়েও (০১৯২২-১২৬৯৮৭) তাকে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।