কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সোমবার শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষের পর গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকালও দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলার শিকার হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সরকার–সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে কোথাও কোথাও। এসব ঘটনায় চট্টগ্রামে তিনজন, রাজধানীতে দুজন এবং রংপুরে একজন—মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা চার শতাধিক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল বিকেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়।
এদিকে গতকাল রাতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলও ছাড়তে হবে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে সাড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিক্ষোভ করেন দেশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ দমনে লাঠিসোঁটা, কোথাও কোথাও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ঢাকার অন্তত ১৬টি জায়গায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা দুইটার পর থেকে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে ঢাকা কলেজ থেকে সায়েন্স ল্যাব, পুরান ঢাকা, নতুন বাজার ও মিরপুর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ, গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে।
ঢাকা কলেজের সামনে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা সিটি কলেজের সামনে আহত আরেকজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আরেকজন হলেন মো. শাহজাহান (২৫), তিনি নিউমার্কেট এলাকার হকার। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আহত ১২৬ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরে আহত কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। শহরের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রধারীরা গুলি ছুড়লে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
রংপুরে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। নিহত আবু সাঈদ (২২) রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন।