পতিত আওয়ামী লীগের ক্যাডার ছিলেন ছিলেন রিয়াদ। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্টের পর পালটে যায় তার জীবনযাপন। পোশাক-আশাকেও আসে আমূল পরিবর্তন। গায়ে উঠে দামি ব্র্যান্ডের শার্ট-প্যান্ট। গ্রামের বাড়িতে তৈরি করেন দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি। কোনো বছরই কুরবানি না দেওয়া পরিবারটি গত ঈদে লাখ টাকা খরচ করে দিয়েছেন কুরবানিও। ঘটনাটি গুলশানে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া আবদুল রাজ্জাক সোলায়মান রিয়াদের।
গ্রেফতার রিয়াদ নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বদলে যায় তার জীবন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার পলাতক মেয়র কাদের মির্জার অস্ত্রধারী ক্যাডারদের একজন ছিলেন রিয়াদ। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্ব পর্যন্ত কাদের মির্জার কাছে তার অবাধ যাতায়াত ছিল। দিনমজুর ও কখনো রিকশাচালক বাবার ছেলে রিয়াদের উত্থান হয় ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের পদ পান রিয়াদ। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্রপ্রতিনিধির দায়িত্বে আছেন বলেও চাউর হয়। পরে অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
এলাকাবাসী রিয়াদের উত্থান নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন। তাদের ভাষ্যমতে, রিয়াদের আয়-উপার্জনের দৃশ্যমান কোনো উৎস ছিল না। অথচ খুব অল্প সময়েই বিত্ত-বৈভবে এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন একজন ছাত্রপ্রতিনিধি ও সমন্বয়ক হিসাবে।
তার চাচা জসিম উদ্দিন জানান, রিয়াদের বাবা রিকশা চালাতেন। বয়স বেশি হওয়ায় এখন আর তিনি রিকশা চালান না। তবে তার বড়ভাই আবু রায়হান এখনো রিকশা চালান, পাশাপাশি কৃষি কাজও করেন।তাদের ভিটে ছাড়া আর কোনো জায়গা জমি নেই।
তিনি আরও জানান, আড়াই মাস আগে রিয়াদ বাড়ির পুরোনো টিনশেড বাড়ি ভেঙে পাকা ভবন নির্মাণ শুরু করেন। এতে এলাকাবাসী অবাক হয়। তবে রিয়াদ কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি চাচা জসিম।
প্রসঙ্গত, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে রোববার রিয়াদ ও তার সহযোগী কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শাম্মি আহম্মেদের বাসায় যায়। ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। পুলিশকে বিষয়টি জানালে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রিয়াদসহ পাঁচ আসামিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে এবং ওই সময় কাজী গৌরব অপু দৌড়ে পালিয়ে যায়।