মোহাম্মদ হাবীব উল্যার রিপোর্টে মহিউদ্দিন আল আজাদের ক্যামেরায় বিস্তারিত
হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের খলাপাড়া থেকে কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের নওহাটা পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারের গ্রামীণ রাস্তারটির বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। জন্মলগ্ন থেকে পাকাকরণ ও দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় ভাঙা সড়ক, খানাখন্দ, কাদা ও জলাবদ্ধতা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। ভরা বর্ষায় স্থানীয়দের চলাচলে স্থানীয় মনির হোসেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের নির্দেশে কিছু স্থানে রাবিশ ও ইট দিয়ে বিচিয়ে দিয়েছে।
তবে মনির হোসেন জানান, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি প্রতিহিংসা বশবর্তী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অহেতুক মিথ্যা অযুহেত তুলছে। বিষয়টি সঠিক নয়। স্থানীয় জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি আমাদের কাছে টাকা চেয়েছিলো। ইঞ্জিনিয়ারকে দেয়ার জন্য। এখানে চেয়ারম্যানের নাম আসার প্রশ্নই আসেনা।
সরেজিমন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের খলাপাড়া ব্রীজ থেকে কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের নওহাটা পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার বিস্তৃত সড়কটির বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ, কাঁদা ও জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে সিদলা অংশে পায়ে হেঁটে চলা দ্বায়।
এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন স্কুলপড়ুয়া, কৃষক, দিনমজুর থেকে শুরু করে হাজারো মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু রাস্তাটির এ দুরবস্থা যান চলাচলকে প্রায় অচল করে তুলেছে। ভ্যান, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা কোনোভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও প্রায় সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনটিই জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুকনো মৌসুমেও রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী থাকে। যানবাহনের যাতায়াত ব্যাহত হওয়ায় বিকল্প রুটে যেতে হয়, এতে সময় ও খরচ দুটিই বাড়ছে। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বারবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কাজ হচ্ছে না। তারা দ্রুত রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি জানিয়েছেন।
এ সময় সত্তরোর্ধ্ব বয়সি ফুলছোঁয়া গ্রামের তাজুল ইসলাম বেপারী জানান, রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দে ভরা। এরমধ্যে বর্ষার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কাঁদা ও জলাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। অবস্থা এমন যে, বৃষ্টি হলে হেঁটে চলারও সুযোগ থাকেনা। বিকল্প না থাকায় অবর্ণনীয় ভোগান্তি নিয়ে এ সড়ক দিয়েই আমাদের চলাচল করতে হয়।
দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া সিদলা গ্রামের শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার জানান, বর্ষায় কাদায় পিচ্ছিল ও খানাখন্দের কারণে সিএনজি, অটোরিকশা চলাচল করলেও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এ্যাম্বুলেন্স চালকেরা এ রাস্তা দিয়ে যেতে চায় না। এলাকার শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও রোগীদের নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খলাপাড়া গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল আজিজ জানান, মৃত্যুর আগে রাস্তাটি পাকা দেখে যেতে চাই। কারণ, হিসেবে তিনি বলেন, আমরা যে কস্ট পাচ্ছি, এমন কস্ট যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম না পায়।
খলাপাড়ার দোকানী আলমগীর হোসেন ও সিদলা গ্রামের জহির হোসেন জানান, রাস্তাটি নিজ উদ্যোগে সংস্কার ও টাকা তোলার ব্যবস্থা এবং সরকারিভাবে পাকাকরণের জন্য কথা বলেছি। কিন্তু পরে আর টাকা তোলা হয়নি।
এ বিষয়ে বাকিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন বলেন, ব্যক্তিগত ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে প্রায় সময় খানাখন্দ ভরাট করে দেই। এ বছর ব্রীকফিল্ড (ইটভাটা) থেকে ভাঙ্গা ইট ও সুরকি পাওয়াটা একটু কঠিন হয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ সময়মতো পাচ্ছি না। তাই, খানাখন্দ ভরাট করতে একটু দেরি হচ্ছে।
সম্প্রতি এক অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রটিয়েছে। যার প্রমাণ তারা দিতে পারবেনা। এই রাস্তাটিসহ ইউনিয়নে একাধিক কাঁচা রাস্তা রয়েছে। যা পাকাকরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইঞ্জিনিয়ার অফিসে তালিকা দেওয়া আছে। আমি উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, বরাদ্দ এলেই কাজ হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক বলেন, বর্তমানে যেসব রাস্তা বিবিজির তালিকা রয়েছে, সেসব রাস্তা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। আর এই রাস্তাটির আইডি নম্বর আছে, তবে বিবিজির তালিকায় নেই। ভবিষ্যতে বিবিজির তালিকায় অর্ন্তভুক্তকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী এবং পাকাকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।