হাজীগঞ্জে ফাহিমা আক্তার (৩৬) নামের এক নারী পরকিয়ার জেরে কয়েকজনের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পাড়ায়, কয়েকবার চেস্টা করেও তাকে সঠিক পথে আনতে না পেরে, সকল তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, প্রবাসী স্বামী বুলবুল আহম্মেদ (৫৪)।
বিষয়টি জানতে পেরে ওই নারী আত্মহত্যা, স্বামীকে দোষারোপ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, হত্যা ও মিথ্যা মামলার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আর স্ত্রীর নির্যাতন ও হুমকির ভয়ে গত পাঁচ মাস ধরে নিজ বাড়ি-ঘর ছাড়া বুলবুল আহমেদ।
রোববার এমন অভিযোগ এনে এবং নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, ভুক্তভোগী মো. বুলবুল আহমেদ। তিনি ব্রুনাই প্রবাসী ও উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সোনাইমুড়ী গ্রামের মিজি বাড়ির (পাথুলিয়া বাড়ি) বাসিন্দা। এই ঘটনায় তিনি গত ৯ আগস্ট, ২১ বীর আর্মি ক্যাম্প হাজীগঞ্জ, ১২ মে লিগ্যাল নোটিশ ও গত ২৭ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
জানা গেছে, ১৩ বছর ধরে প্রবাসে আছেন বুলবুল আহম্মেদ। এর মধ্যে তিনি চারবার ছুটিতে দেশে আসেন। এই সুযোগে তার স্ত্রী পরকিয়া জড়িত হয়ে অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। বিষয়টি জানতে পেরে ২০২০ সালে তালাকনামা পাঠান, কিন্তু সন্তানদের কথা চিন্তা করে স্ত্রীকে ক্ষমা দেন। পরে তিনি ছুটি শেষে প্রবাসে চলে যাওয়ার পর আবারো পরকিয়া ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তার স্ত্রী। যার স্বীকারোক্তিসহ প্রমাণাদী রয়েছে।
বিষয়টি জানতে পেরে গত ২১ এপ্রিল নোটারী পাবলিকের (রেজি. নং- ৩৪৮) মাধ্যমে স্ত্রী ফাহিমা আক্তারকে তালাক দেন, স্বামী বুলবুল আহমেদ। এসব ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে তাকে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেন তার স্ত্রী। ওইসব অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রতিয়মান হয়। এদিক তালাকের কপি স্ত্রীর বাবার বাড়ি ঠিকানায় এবং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের কাছে একাধিকবার ডাকযোগে পাঠানো হয়।
তালাকপ্রাপ্তের পরও ফাহিমা আক্তার তার স্বামীর বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাচ্ছেনা না। উল্টো তিনি আত্মহত্যা, স্বামীকে দোষারোপ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, হত্যা ও মিথ্যা মামলার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এমনকি তার স্ত্রী ভাই সোহেল আহমেদ, বায়রা হেলাল উদ্দিনও তাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আর স্ত্রী ও তার স্বজনদের নির্যাতন এবং হুমকির ভয়ে গত পাঁচ মাস ধরে নিজ বাড়ি-ঘর ছাড়া বলে জানান, স্বামী বুলবুল আহমেদ।
তিনি বলেন, সাড়ে চার মাস হলো আমি তাকে (ফাহিমা আক্তার) তালাক দিয়েছি। কিন্তু সে আমার বাড়ি-ঘর ছাড়ছেনা। উল্টো সে ও তার স্বজনেরা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। না, জানি কোন অঘটন ঘটিয়ে আমার উপর দ্বায়ভার চাপায় কিংবা আমাকে মেরে ফেলে। এই ভয়ে এবং নিরাপত্তার হুমকিতে আমি আমার নিজ বাড়ি-ঘর ছাড়া।
কান্নাজিড়ত কন্ঠে বুলবুল আহম্মেদ বলেন, আমার বাড়ি-আমার ঘর। কিন্তু আমি তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তারা আমার বাড়ি-ঘর জোরপূর্বক দখল করে আছে। তাই, আমি পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশি তদন্তে সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও আমি বাড়িতে যেতে পারছিনা। পরবর্তীতে আমি উকিল নোটিশ (লিগ্যাল নোটিশ) ও আর্মি ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছি। এখন আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে আমি ন্যায়-বিচার চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে তার (ফাহিমা আক্তার) স্বীকারোক্তি’সহ অসংখ্য তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু তথ্য ও রেকর্ড সংবাদকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেছি।
এদিকে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ফাহিমা আক্তার বলেন, গত দুই বছর ধরে আমি ও আমার সন্তানদের ভরণ-পোষনের খরচ না দিয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সবশেষ গত ৭ মাস আগে দেশে এসেছেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে না এসে আমার নামে নানা কথা রটাচ্ছেন। আর থানা, পুলিশ, সাংবাদিক’সহ কত লোককে বাড়িতে পাঠাচ্ছেন।
তালাকের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে সংসার করি। আমার উপযুক্ত দুই সন্তান আছে। কথা নেই-বার্তা নেই, তালাক দিলেই হবে। আত্মীয়-স্বজন ও দেশের লোকজন আছে। সবাইকে নিয়ে বসুক (বৈঠক)। এসময় তিনি তার ভাই সোহেল আহমেদ ফোন দেন। তখন সংবাদকর্মীরা তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি তার বোনের মাধ্যমে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং সংবাদকর্মীদের নাম-পরিচয় রাখার জন্য বলেন।
বুলবুল আহম্মদের বাড়ির চাচাতো ভাই ও বায়রা হেলাল উদ্দিন বলেন, ফাতেমা-বুলবুল দুইজনের আমার আত্মীয়। আমি কার পক্ষে যাবো। আর কাকেই হুমকি-ধমকি দিবো? তবে আমি চাই, বিষয়টির সমাধান হোক।
ইউপি সদস্য হাছান খাঁ বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এছাড়া বুলবুল তালাকের কাগজ আমাকে দেখিয়েছেন। তবে ডাকযোগে পাঠানো তালাকের কপি এখনো পাইনি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত রয়েছে। সেখানে অভিযোগ দিলে বিষয়টির বিধি অনুযায়ী চেয়ারম্যান দেখবেন।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, এসপি স্যারের কার্যালয়ে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উভয় পক্ষকে আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন যদি তিনি (বুলবুল আহম্মেদ) নিরাপত্তার হুমকি মনে করেন, তাহলে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।