ঢাকা 11:29 pm, Monday, 17 November 2025

আন্দোলনে আহত শিক্ষিকা ফাতেমার মৃত্যুতে শোক; মতলব উত্তরে ১৮০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কালো ব্যাজ

ঢাকায় ১০ম গ্রেডের শিক্ষকদের আন্দোলনে সাউন্ড গ্রেনেডের আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণকারী ৫নং ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার (৪৫)-এর মৃত্যুত সোমবার (১৭নভেম্বর) মতলব উত্তর উপজেলার ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে কালো ব্যাজ ধারণ করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ কর্মসূচি আসে কেন্দ্রীয় শিক্ষক সমিতির নির্দেশনা অনুযায়ী।
শিক্ষাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে সকালে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পড়ে নীরবতা পালন করেন এবং শ্রদ্ধা জানানো হয় মরহুমার প্রতি।
ফাতেমা আক্তারের মৃত্যুতে মতলব উত্তরের শিক্ষা অঙ্গনে এখনো শোকের আবহ বিরাজ করছে। শিক্ষক সমাজ তাঁর জন্য দোয়া চেয়েছেন এবং পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
ঝিনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিফাত ঢালী বলেন, ফাতেমা ম্যাডাম আমাদের খুব ভালোবাসতেন। তাঁর ক্লাস আমরা খুব উপভোগ করতাম। তিনি আর কখনো ক্লাস নেবেন না এটা ভাবতেই পারছি না।
একই শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাফিয়া সাওরিন ইকরা বলেন, ম্যাডাম খুব হাসিখুশি ছিলেন। আমাদের ভুল করলেও বকা না দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আমরা ম্যাডামকে খুব মিস করব।
ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু নাছের বলেন, ফাতেমা আপা আমাদের বিদ্যালয়ের সবচেয়ে পরিশ্রমী শিক্ষকদের একজন ছিলেন। প্রতিটি শিশুকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। তাঁর হঠাৎ মৃত্যু বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবার হৃদয়ে শূন্যতা তৈরি করেছে।
রাজুরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোহিনুর আক্তার বলেন, ফাতেমা আপা ছিলেন শান্ত, বিনয়ী ও সহনশীল মানুষ। আন্দোলনের দিনটিতে তিনি সামনে ছিলেন সেই ঘটনার অভিঘাতেই তাঁর মৃত্যু। আমরা একজন আদর্শ শিক্ষককে হারালাম।
৯২নং গজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, এ মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো শিক্ষক সমাজের। ফাতেমা আক্তারের মতো দক্ষ শিক্ষিকা খুব কমই পাওয়া যায়। তাঁর চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন বলেন, ফাতেমা আক্তারের মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর বেদনার। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্বশীল, কোমল-স্বভাবের ও শিক্ষার্থীপ্রিয় শিক্ষক। আন্দোলনের ঘটনায় তিনি যেভাবে আহত হলেন এবং পরে মৃত্যু হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আমরা এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মেহাম্মাদ হারুন অর রশীদ মোল্লা বলেন, শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি দায়িত্বশীল, সৎ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একজন শিক্ষক ছিলেন। আন্দোলনের ঘটনার পর তিনি যে শারীরিক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জীবন হারিয়েছেন এটি আমাদের পুরো শিক্ষা পরিবারকে শোকাহত করেছে। তাঁর মৃত্যুতে মতলব উত্তরের শিক্ষা বিভাগ একটি মূল্যবান সম্পদ হারালো। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

বিএনপি ও ধানের শীষের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে, সজাগ থাকতে হবে : ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন

আন্দোলনে আহত শিক্ষিকা ফাতেমার মৃত্যুতে শোক; মতলব উত্তরে ১৮০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কালো ব্যাজ

Update Time : 10:16:54 pm, Monday, 17 November 2025
ঢাকায় ১০ম গ্রেডের শিক্ষকদের আন্দোলনে সাউন্ড গ্রেনেডের আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণকারী ৫নং ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তার (৪৫)-এর মৃত্যুত সোমবার (১৭নভেম্বর) মতলব উত্তর উপজেলার ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একযোগে কালো ব্যাজ ধারণ করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ কর্মসূচি আসে কেন্দ্রীয় শিক্ষক সমিতির নির্দেশনা অনুযায়ী।
শিক্ষাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে সকালে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা কালো ব্যাজ পড়ে নীরবতা পালন করেন এবং শ্রদ্ধা জানানো হয় মরহুমার প্রতি।
ফাতেমা আক্তারের মৃত্যুতে মতলব উত্তরের শিক্ষা অঙ্গনে এখনো শোকের আবহ বিরাজ করছে। শিক্ষক সমাজ তাঁর জন্য দোয়া চেয়েছেন এবং পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
ঝিনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিফাত ঢালী বলেন, ফাতেমা ম্যাডাম আমাদের খুব ভালোবাসতেন। তাঁর ক্লাস আমরা খুব উপভোগ করতাম। তিনি আর কখনো ক্লাস নেবেন না এটা ভাবতেই পারছি না।
একই শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাফিয়া সাওরিন ইকরা বলেন, ম্যাডাম খুব হাসিখুশি ছিলেন। আমাদের ভুল করলেও বকা না দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আমরা ম্যাডামকে খুব মিস করব।
ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু নাছের বলেন, ফাতেমা আপা আমাদের বিদ্যালয়ের সবচেয়ে পরিশ্রমী শিক্ষকদের একজন ছিলেন। প্রতিটি শিশুকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। তাঁর হঠাৎ মৃত্যু বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবার হৃদয়ে শূন্যতা তৈরি করেছে।
রাজুরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোহিনুর আক্তার বলেন, ফাতেমা আপা ছিলেন শান্ত, বিনয়ী ও সহনশীল মানুষ। আন্দোলনের দিনটিতে তিনি সামনে ছিলেন সেই ঘটনার অভিঘাতেই তাঁর মৃত্যু। আমরা একজন আদর্শ শিক্ষককে হারালাম।
৯২নং গজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, এ মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো শিক্ষক সমাজের। ফাতেমা আক্তারের মতো দক্ষ শিক্ষিকা খুব কমই পাওয়া যায়। তাঁর চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন বলেন, ফাতেমা আক্তারের মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর বেদনার। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্বশীল, কোমল-স্বভাবের ও শিক্ষার্থীপ্রিয় শিক্ষক। আন্দোলনের ঘটনায় তিনি যেভাবে আহত হলেন এবং পরে মৃত্যু হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আমরা এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।
মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মেহাম্মাদ হারুন অর রশীদ মোল্লা বলেন, শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি দায়িত্বশীল, সৎ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একজন শিক্ষক ছিলেন। আন্দোলনের ঘটনার পর তিনি যে শারীরিক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জীবন হারিয়েছেন এটি আমাদের পুরো শিক্ষা পরিবারকে শোকাহত করেছে। তাঁর মৃত্যুতে মতলব উত্তরের শিক্ষা বিভাগ একটি মূল্যবান সম্পদ হারালো। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।