ঢাকা ০৬:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিন-রাত টুং-টাং শব্দে মুখর কামারশালা, তবু হাসি নেই কামারের মুখে

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:২৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
  • ১৩৮ Time View

আর মাত্র কয়েক ২ দিন পর মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদে কোরবানি সামনে রেখে টঙ্গীর লোহা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। কোরবানির ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ জবাই ও গোশত কাটতে ব্যবহৃত হয় কামারদের তৈরি দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি। তবে কয়লার মূল্য ও মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ব্যস্ত সময়েও হাসি নেই কামারিদের মুখে।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ বাজারের কামারপট্রিতে কামাররা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাপর বা জাতি টানছে একজন। এর বাতাসে জ্বলছে কয়লা, সেই কয়লায় পুড়ছে লোহা। সেই দগদগে লাল লোহাকে পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছুরি, চাপাতি।

কোরবানি পশু জবাইয়ের এসব অস্ত্র তৈরি করার সময় হাপরের ফোঁস ফাঁস আর লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দে মুখর পুরো এলাকা। এর সঙ্গে চলছে পুরোনো দা-বঁটি ও ছুরিতে শান দেওয়ার কাজ। এভাবে ক্লান্তিহীন দিন পার করছেন হাজীগঞ্জ বাজারের কামারেরা।

কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের। পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতে লোকজন ভিড় করছেন কামারিদের দোকানে।

আগে যেসব দোকানে দুজন করে শ্রমিক কাজ করত, এখন সেসব দোকানে ৫-৬ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। তবে চায়না থেকে আসা মালামাল, লোহা, কয়লা ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর ঈদে কামারদের মুখে হাসি নেই।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হয়। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ১শ টাকা থেকে শুরু করে ২শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে কামারীদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে লোহা, কয়লা ও শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় তাদের তৈরি মালের দাম একটু বেশি।

হাজীগঞ্জ বাজারের কামারপট্রির কয়েকজন কামার বলেন, চায়না মালের জন্য আমাদের এ ব্যবসার ধস নেমেছে। আমাদের একটা চাপাতি তৈরি করতে যেখানে খরচ হয় ১ হাজার টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। সেখানে চায়না চাপাতি কিনতে পাওয়া যায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এরপর ঈদ মৌসুম এলেই লোহা ও কয়লার দাম ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের এখন মাল তৈরি করে পোষায় না। আবার অনেক সময় টাকা থাকে না তখন বড় বড় পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কাঁচামাল কিনে দা, বঁটি, ছুরি বানিয়ে তাদের বাজার থেকে কম দামে দিতে হয়।

এসব দা, বঁটি, ছুরির দাম জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, দা ছোট ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, বঁটি বড় ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, চাপাতি ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তৈরি মাল সব বিক্রি না হলে পরে এগুলো কী করেন- এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, বড় বড় হার্ডওয়্যারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে দেই। সব মাল বিক্রি করতে না পারলে এগুলো আবার পরের বছর বিক্রি করা হয়।

হাজীগঞ্জ বাজারের কামার প্রকাশ, রতিন্দ্রসহ কয়েকজন জানান, কাজের চাপে কখন সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রি ততই বাড়ছে। নতুন করে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের এখানে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের এলাকা থেকেও অর্ডার নেওয়া হয়। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা লাভ হয় এই ঈদ মৌসুমেই। তাই ঈদে সামান্য একটু বেশি নিয়ে থাকি।

কামারের দোকানে চাপাতি বানাতে আসা দেলোয়ার হোসেন জানান, আর এক কয়েকদিন পর কোরবানির ঈদ, তাই চাপাতি বানাতে কামারের দোকানে এসেছি।

হাজীগঞ্জ বাজারে রাজারগাঁও থেকে দা, বঁটি ও ছুরি কিনতে আসা এস এম চিশতী বলেন, এখানকার কামারশালার কারিগরদের হাতের কাজ খুব নিখুঁত। এদের তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করতে খুব আরাম। আমি প্রতি বছরই কিছু না কিছু দা, বঁটি কিনে নিয়ে যাই। কারণ কোরবানির ঈদের পরে আর কেউ এগুলোর খবর রাখে না। তাই খোঁজাখুঁজি না করে নতুন কিনে নিয়ে যাই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মতলবে জমি সংক্রান্ত বিরোধে, প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত ২, থানায় অভিযোগ 

দিন-রাত টুং-টাং শব্দে মুখর কামারশালা, তবু হাসি নেই কামারের মুখে

Update Time : ১০:২৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

আর মাত্র কয়েক ২ দিন পর মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই ঈদে কোরবানি সামনে রেখে টঙ্গীর লোহা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। কোরবানির ঈদে গরু, ছাগল, মহিষ জবাই ও গোশত কাটতে ব্যবহৃত হয় কামারদের তৈরি দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি। তবে কয়লার মূল্য ও মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ব্যস্ত সময়েও হাসি নেই কামারিদের মুখে।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ বাজারের কামারপট্রিতে কামাররা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাপর বা জাতি টানছে একজন। এর বাতাসে জ্বলছে কয়লা, সেই কয়লায় পুড়ছে লোহা। সেই দগদগে লাল লোহাকে পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ছুরি, চাপাতি।

কোরবানি পশু জবাইয়ের এসব অস্ত্র তৈরি করার সময় হাপরের ফোঁস ফাঁস আর লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দে মুখর পুরো এলাকা। এর সঙ্গে চলছে পুরোনো দা-বঁটি ও ছুরিতে শান দেওয়ার কাজ। এভাবে ক্লান্তিহীন দিন পার করছেন হাজীগঞ্জ বাজারের কামারেরা।

কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের। পশু জবাইয়ের সরঞ্জামাদি কিনতে লোকজন ভিড় করছেন কামারিদের দোকানে।

আগে যেসব দোকানে দুজন করে শ্রমিক কাজ করত, এখন সেসব দোকানে ৫-৬ জন করে শ্রমিক কাজ করছেন। তবে চায়না থেকে আসা মালামাল, লোহা, কয়লা ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর ঈদে কামারদের মুখে হাসি নেই।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হয়। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ১শ টাকা থেকে শুরু করে ২শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে কামারীদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে লোহা, কয়লা ও শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় তাদের তৈরি মালের দাম একটু বেশি।

হাজীগঞ্জ বাজারের কামারপট্রির কয়েকজন কামার বলেন, চায়না মালের জন্য আমাদের এ ব্যবসার ধস নেমেছে। আমাদের একটা চাপাতি তৈরি করতে যেখানে খরচ হয় ১ হাজার টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। সেখানে চায়না চাপাতি কিনতে পাওয়া যায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এরপর ঈদ মৌসুম এলেই লোহা ও কয়লার দাম ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পায়। তাই আমাদের এখন মাল তৈরি করে পোষায় না। আবার অনেক সময় টাকা থাকে না তখন বড় বড় পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কাঁচামাল কিনে দা, বঁটি, ছুরি বানিয়ে তাদের বাজার থেকে কম দামে দিতে হয়।

এসব দা, বঁটি, ছুরির দাম জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, দা ছোট ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, বঁটি বড় ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, চাপাতি ৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তৈরি মাল সব বিক্রি না হলে পরে এগুলো কী করেন- এ প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, বড় বড় হার্ডওয়্যারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে দেই। সব মাল বিক্রি করতে না পারলে এগুলো আবার পরের বছর বিক্রি করা হয়।

হাজীগঞ্জ বাজারের কামার প্রকাশ, রতিন্দ্রসহ কয়েকজন জানান, কাজের চাপে কখন সময় চলে যাচ্ছে আমরা টেরও পাই না। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে আমাদের বিক্রি ততই বাড়ছে। নতুন করে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের এখানে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের এলাকা থেকেও অর্ডার নেওয়া হয়। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা লাভ হয় এই ঈদ মৌসুমেই। তাই ঈদে সামান্য একটু বেশি নিয়ে থাকি।

কামারের দোকানে চাপাতি বানাতে আসা দেলোয়ার হোসেন জানান, আর এক কয়েকদিন পর কোরবানির ঈদ, তাই চাপাতি বানাতে কামারের দোকানে এসেছি।

হাজীগঞ্জ বাজারে রাজারগাঁও থেকে দা, বঁটি ও ছুরি কিনতে আসা এস এম চিশতী বলেন, এখানকার কামারশালার কারিগরদের হাতের কাজ খুব নিখুঁত। এদের তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করতে খুব আরাম। আমি প্রতি বছরই কিছু না কিছু দা, বঁটি কিনে নিয়ে যাই। কারণ কোরবানির ঈদের পরে আর কেউ এগুলোর খবর রাখে না। তাই খোঁজাখুঁজি না করে নতুন কিনে নিয়ে যাই।