অবশেষে রাজশাহীতে আট শর্তে বিএনপিকে বিভাগীয় মহাসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) পক্ষ থেকে এ অনুমতি দেওয়া হয়।
আরএমপির বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্রটি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মহাসমাবেশ কমিটির দলনেতা মিজানুর রহমান মিনুকে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসন বিএনপির মহাসমাবেশের জন্য ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ ব্যবহারের পৃথক অনুমতি দেয়।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠটি হাজী মোহাম্মদ মহসীন স্কুলের মালিকানাধীন এবং পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক এ স্কুলের সভাপতি।
এদিকে পুলিশের দেওয়া আট শর্তে আগামী ৩ ডিসেম্বর শনিবার রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশ আয়োজন ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ আয়োজন করা যাবে।
শর্তাবলীর মধ্যে রয়েছে- মাদ্রাসা ময়দান চত্বরের মধ্যেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া যাবে না এবং যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগতদের চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে- দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যকলাপ এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচারপত্র মহাসমাবেশে বিলি করা যাবে না। বিলি করলে পুলিশ আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
তৃতীয় শর্ত হচ্ছে- সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এরূপ কর্মকাণ্ড করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ও পতাকাতে কোনো লাঠিসোটা ও রড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
চতুর্থ শর্ত হচ্ছে- আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
পঞ্চম শর্ত হচ্ছে- মঞ্চ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত (আইডি কার্ডসহ) তারা ব্যতীত অন্য কেউ আগামী ৩ ডিসেম্বর সমাবেশ শুরুর পূর্বে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না। সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম ওইদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টার সময় শেষ করতে হবে। সমাগত নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বা আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
ষষ্ঠ শর্ত হচ্ছে- নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর/মাইক/সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও রাউটার ব্যবহার করা যাবে না।
সপ্তম শর্ত হচ্ছে- যানবাহনসমূহ শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে গণসমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনো যানবাহন পার্কিং করা যাবে না।
আর শেষ শর্তে বলা হয়েছে- এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আলাদা অনুমোদন নিতে হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। উল্লিখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, গত অক্টোবরের প্রথম দিকেই মাঠ বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। পরে নানা নাটকীয়তা শেষে অবশেষে অনুমতি দিল পুলিশ। তার আগে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসন মাঠ ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন যাতে আরও তিনটি শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়।
অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, পুলিশের সঙ্গে আমরা কয়েকদফা বৈঠক করেছি। তারা ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছেন। আমরা পুলিশের দেওয়া শর্ত মেনেই মহাসমাবেশ করবো। কোনো সমস্যা হবে না।