ঢাকা 12:20 am, Wednesday, 23 July 2025

যে কারণে দেশে প্রচণ্ড দাবদাহ

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:23:33 am, Friday, 2 June 2023
  • 16 Time View

গত কয়েকদিন ধরে চলছে প্রচণ্ড গরমে মানুষ জীবন উষ্ঠাগত। বাড়ছে হিটস্ট্রক। তীব্র দাবদাহে বাসাবাড়ীতে বাড়ছে শিশু রোগসহ নানান রোগ।

 দেখা নেই বৃষ্টির। সেই সঙ্গে আছে মেঘমুক্ত আকাশ থেকে সূর্যের দীর্ঘসময় ধরে খাড়াভাবে দেওয়া কিরণ। এই অবস্থায় বাতাসে আছে জলীয়বাষ্পের ব্যাপক আধিক্য। গাছের পাতার নড়াচড়াও কম। সবমিলে বাংলাদেশের প্রকৃতি দারুণ উত্তপ্ত।

চট্টগ্রাম বিভাগের কথা বাদ দিলে দেশের অন্য অঞ্চল গরমে পুড়ছে। কোথাও বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ, আবার কোথাও মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তবে এরচেয়েও ভয়ংকর হচ্ছে ‘অনুভব তাপমাত্রা’। ব্যারোমিটারে যে গরম ধরা পড়ছে বাস্তবে তার চেয়ে গড়ে ২ থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। সবমিলে অসহনীয় করে উঠেছে পরিস্থিতি। এই গরমে সব বয়সের মানুষেরই দুরবস্থা। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। খেটে খাওয়া মানুষেরও ত্রাহিদশা। এই খরতাপ আরও অন্তত ৬ দিন চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি)।

বিএমডি জানিয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সিলেট, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্ট অংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা ‘মৃদু’ এবং ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা ‘মাঝারি’ তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সেই হিসাবে দেশে স্থানভেদে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে যখন পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব থাকে তখন যে লু হাওয়া বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেটি মূলত রাজস্থান কিংবা পাকিস্তানের মরু এলাকা থেকে আসে। ভারতে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। সেই দাবদাহের ঝাপটা লাগছে বাংলাদেশে। দেশে তাপমাত্রা এখন ৩৩-৪১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ ডিগ্রি। এই দুই অঞ্চলের মধ্যে তাপমাত্রা ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.৪ এবং দিনাজপুরে ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এছাড়া বৃহস্পতিবার বগুড়ায় ৫.৭, রাজশাহী ৫.৬, সৈয়দপুরে ৭.১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি ছিল।

আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানান, জুন মাসে মাথার উপর সূর্য থাকে। এ মাসেই সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন। কিন্তু তাপমাত্রা যা থাকার কথা, উল্লিখিত ৬টি পরিস্থিতির কারণে তার চেয়ে ২ থেকে সাড়ে ৭ ডিগ্রি বেশি আছে। এছাড়া সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসে তাহলেও অসহনীয় গরম অনুভূত হয়। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেমন: ঢাকায় বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৪ আর সর্বনিম্ন ২৯.২ ডিগ্রি ছিল। এদিকে এদিন ঢাকায় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ছিল ৬১ শতাংশ। বাতাসের এই পরিস্থিতি কেবল গরমই বাড়ায়নি, ঘামের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এ কারণে শরীর জবজবে থাকায় অস্বস্তি বেশি ছিল। সরাসরি সূর্য কিরণ দেওয়ায় ভূপৃষ্ঠ এতটাই উত্তপ্ত হয় যে, ঘরের ভেতরে কলসি কিংবা জগের পানি পর্যন্ত গরম হয়ে ওঠে। ফলে সবমিলে মানুষের অস্বস্তিকর অবস্থা আর দুর্ভোগের সীমা ছিল না।

ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মানুষের শরীর হচ্ছে একটা তাপ ইঞ্জিন। ঘামের মাধ্যমে তাপ বিকীরণ করে মানুষ শরীরকে শীতল করে। কিন্তু বাতাসে বর্তমানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে শরীর থেকে সেই ঘাম বাতাসে মিশতে পারছে না। শরীরের ভেতরের ঘাম চামড়ায় লেপটে থাকছে। এতে অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে।

বিএমডি দেশের ৪২ স্টেশনে তাপমাত্রা পরিমাপ করে থাকে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার মাত্র ৩টি স্টেশনে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের তথ্য পাওয়া গেছে। আর এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় রাঙ্গামাটিতে ১৯ মিলিমিটার। গোপালগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ১৭ মিলিমিটার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

মাসে চারদিন হাজীগঞ্জ বাজার বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন

যে কারণে দেশে প্রচণ্ড দাবদাহ

Update Time : 08:23:33 am, Friday, 2 June 2023

গত কয়েকদিন ধরে চলছে প্রচণ্ড গরমে মানুষ জীবন উষ্ঠাগত। বাড়ছে হিটস্ট্রক। তীব্র দাবদাহে বাসাবাড়ীতে বাড়ছে শিশু রোগসহ নানান রোগ।

 দেখা নেই বৃষ্টির। সেই সঙ্গে আছে মেঘমুক্ত আকাশ থেকে সূর্যের দীর্ঘসময় ধরে খাড়াভাবে দেওয়া কিরণ। এই অবস্থায় বাতাসে আছে জলীয়বাষ্পের ব্যাপক আধিক্য। গাছের পাতার নড়াচড়াও কম। সবমিলে বাংলাদেশের প্রকৃতি দারুণ উত্তপ্ত।

চট্টগ্রাম বিভাগের কথা বাদ দিলে দেশের অন্য অঞ্চল গরমে পুড়ছে। কোথাও বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ, আবার কোথাও মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তবে এরচেয়েও ভয়ংকর হচ্ছে ‘অনুভব তাপমাত্রা’। ব্যারোমিটারে যে গরম ধরা পড়ছে বাস্তবে তার চেয়ে গড়ে ২ থেকে ৬ ডিগ্রি বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। সবমিলে অসহনীয় করে উঠেছে পরিস্থিতি। এই গরমে সব বয়সের মানুষেরই দুরবস্থা। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। খেটে খাওয়া মানুষেরও ত্রাহিদশা। এই খরতাপ আরও অন্তত ৬ দিন চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি)।

বিএমডি জানিয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সিলেট, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগের এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্ট অংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা ‘মৃদু’ এবং ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা ‘মাঝারি’ তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সেই হিসাবে দেশে স্থানভেদে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে যখন পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব থাকে তখন যে লু হাওয়া বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেটি মূলত রাজস্থান কিংবা পাকিস্তানের মরু এলাকা থেকে আসে। ভারতে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। সেই দাবদাহের ঝাপটা লাগছে বাংলাদেশে। দেশে তাপমাত্রা এখন ৩৩-৪১ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৪১ ডিগ্রি। এই দুই অঞ্চলের মধ্যে তাপমাত্রা ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.৪ এবং দিনাজপুরে ৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এছাড়া বৃহস্পতিবার বগুড়ায় ৫.৭, রাজশাহী ৫.৬, সৈয়দপুরে ৭.১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেশি ছিল।

আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানান, জুন মাসে মাথার উপর সূর্য থাকে। এ মাসেই সবচেয়ে দীর্ঘতম দিন। কিন্তু তাপমাত্রা যা থাকার কথা, উল্লিখিত ৬টি পরিস্থিতির কারণে তার চেয়ে ২ থেকে সাড়ে ৭ ডিগ্রি বেশি আছে। এছাড়া সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসে তাহলেও অসহনীয় গরম অনুভূত হয়। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেমন: ঢাকায় বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৪ আর সর্বনিম্ন ২৯.২ ডিগ্রি ছিল। এদিকে এদিন ঢাকায় বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ছিল ৬১ শতাংশ। বাতাসের এই পরিস্থিতি কেবল গরমই বাড়ায়নি, ঘামের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এ কারণে শরীর জবজবে থাকায় অস্বস্তি বেশি ছিল। সরাসরি সূর্য কিরণ দেওয়ায় ভূপৃষ্ঠ এতটাই উত্তপ্ত হয় যে, ঘরের ভেতরে কলসি কিংবা জগের পানি পর্যন্ত গরম হয়ে ওঠে। ফলে সবমিলে মানুষের অস্বস্তিকর অবস্থা আর দুর্ভোগের সীমা ছিল না।

ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মানুষের শরীর হচ্ছে একটা তাপ ইঞ্জিন। ঘামের মাধ্যমে তাপ বিকীরণ করে মানুষ শরীরকে শীতল করে। কিন্তু বাতাসে বর্তমানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি। ফলে শরীর থেকে সেই ঘাম বাতাসে মিশতে পারছে না। শরীরের ভেতরের ঘাম চামড়ায় লেপটে থাকছে। এতে অসহনীয় গরম অনুভূত হচ্ছে।

বিএমডি দেশের ৪২ স্টেশনে তাপমাত্রা পরিমাপ করে থাকে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার মাত্র ৩টি স্টেশনে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের তথ্য পাওয়া গেছে। আর এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় রাঙ্গামাটিতে ১৯ মিলিমিটার। গোপালগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ১৭ মিলিমিটার।