ঢাকা ০৪:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মাত্র ৬ মাস পূর্বে বিয়ে করেছিলো নি হ ত পাইলট তৌকির

নিহত পাইলটের স্বজনদের রাজশাহী থেকে নেওয়া হলো ঢাকায়

ছবি-সংগৃহিত।

ঢাকায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যুর খবরে রাজশাহীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মহানগরীর উপশহরে তার বাসার সামনে দুপুর থেকে ভিড় করছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।

অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ কেউ হতভম্ব হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন ‘আশ্রয়’ নামের সেই বাসার সামনে।

রাজশাহী মহানগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়িটিতে ভাড়া থাকেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন এবং ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন। আশপাশের মানুষ জানান, এই পরিবার অত্যন্ত মিশুক। তৌকির ছিলেন ভদ্র ও মেধাবী তরুণ।

তৌকিরের পরিবার প্রায় ২৫ বছর ধরে রাজশাহীতে ভাড়া থাকেন। সর্বশেষ তারা ‘আশ্রয়’ নামের এ বাড়িটির তিনতলায় উঠেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি গ্রামে তাদের বাড়ি। তৌকির ছিলেন দুই ভাইবোনের বড়। তার ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

বিকালে বাসার সামনে উপস্থিত ছিলেন নিহত পাইলটের মামা রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বিকাল ৫টার দিকে র‌্যাবের একটি গাড়িতে করে তৌকিরের বাবা-মা, বোন সৃষ্টি খাতুন, বড় বোন বৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম এবং আরেক মামা মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর থেকে তাদের বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নেওয়া হয়।

নিহত তৌকির ইসলাম সাগরের স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছিলেন তৌকির ইসলাম।

তৌকিরের মামা রফিকুল ইসলাম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, এ রকম ভালো ছেলে আমি আর দেখিনি। তার মতো পরিশ্রমী, ভদ্র, মেধাবী ছেলেকে এভাবে হারিয়ে ফেলব ভাবতেই পারিনি।

স্বজনরা জানান, তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হলেও গত প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রাজশাহীতেই বসবাস করছেন। পেশায় তিনি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায়ী।

তৌকির রাজশাহীর গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ওই কলেজের ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তৌকির যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে।

তৌকিরের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ির সামনে এসেছেন পাবনা ক্যাডেট কলেজে তার সাবেক প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, তৌকির খুবই মেধাবী, ভীষণ ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। সে ছোটদের স্নেহ করত, বড়দের সম্মান দিত। ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

গত বছর থেকে রাজশাহীর সপুরায় নিজস্ব জমিতে তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন তৌকির ইসলাম সাগর। কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেই বাড়িটিতে আর উঠা হলো না তার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

নকল বই বিক্রিতে জড়িতের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে : গোলাম এলাহী

মাত্র ৬ মাস পূর্বে বিয়ে করেছিলো নি হ ত পাইলট তৌকির

নিহত পাইলটের স্বজনদের রাজশাহী থেকে নেওয়া হলো ঢাকায়

Update Time : ০৯:০৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

ঢাকায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের মৃত্যুর খবরে রাজশাহীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মহানগরীর উপশহরে তার বাসার সামনে দুপুর থেকে ভিড় করছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।

অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ কেউ হতভম্ব হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন ‘আশ্রয়’ নামের সেই বাসার সামনে।

রাজশাহী মহানগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়িটিতে ভাড়া থাকেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন এবং ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন। আশপাশের মানুষ জানান, এই পরিবার অত্যন্ত মিশুক। তৌকির ছিলেন ভদ্র ও মেধাবী তরুণ।

তৌকিরের পরিবার প্রায় ২৫ বছর ধরে রাজশাহীতে ভাড়া থাকেন। সর্বশেষ তারা ‘আশ্রয়’ নামের এ বাড়িটির তিনতলায় উঠেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি গ্রামে তাদের বাড়ি। তৌকির ছিলেন দুই ভাইবোনের বড়। তার ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

বিকালে বাসার সামনে উপস্থিত ছিলেন নিহত পাইলটের মামা রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, বিকাল ৫টার দিকে র‌্যাবের একটি গাড়িতে করে তৌকিরের বাবা-মা, বোন সৃষ্টি খাতুন, বড় বোন বৃষ্টি খাতুন ও তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম এবং আরেক মামা মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর থেকে তাদের বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নেওয়া হয়।

নিহত তৌকির ইসলাম সাগরের স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছিলেন তৌকির ইসলাম।

তৌকিরের মামা রফিকুল ইসলাম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, এ রকম ভালো ছেলে আমি আর দেখিনি। তার মতো পরিশ্রমী, ভদ্র, মেধাবী ছেলেকে এভাবে হারিয়ে ফেলব ভাবতেই পারিনি।

স্বজনরা জানান, তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হলেও গত প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রাজশাহীতেই বসবাস করছেন। পেশায় তিনি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায়ী।

তৌকির রাজশাহীর গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ওই কলেজের ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তৌকির যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে।

তৌকিরের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়ির সামনে এসেছেন পাবনা ক্যাডেট কলেজে তার সাবেক প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, তৌকির খুবই মেধাবী, ভীষণ ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। সে ছোটদের স্নেহ করত, বড়দের সম্মান দিত। ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

গত বছর থেকে রাজশাহীর সপুরায় নিজস্ব জমিতে তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন তৌকির ইসলাম সাগর। কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেই বাড়িটিতে আর উঠা হলো না তার।