• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
হাজীগঞ্জের গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ পোস্ট মাস্টার হলেন হাজীগঞ্জের খোরশেদ আলম ধার্মিক ছেলে পেলে অভিনয় ছেড়ে বিয়ে করবেন মডেল প্রিয়াঙ্কা হাজীগঞ্জে নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হচ্ছে দুর্গোৎসব হাজীগঞ্জের মনিনাগে সম্পতিগত বিরোধের জেরধরে হামলা, ৮জন আহত ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’ মতলব উত্তরে ১০ম গ্রেডের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ শাহরাস্তিতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে রবি শস্য বীজ ও নগদ অর্থ প্রদান শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ফরিদগঞ্জ ॥ বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প জমিতে অবাধে গড়ে উঠছে আবাসন

ত্রিনদী অনলাইন
ত্রিনদী অনলাইন
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪

মনিরুল ইসলাম মনির:
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের জমিতে অবাধে গড়ে উঠছে আবাসন। এতে কমে গেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। এখনও সেচ সুবিধা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতায় নষ্ট হচ্ছে দুই থেকে দেড় হাজার হেক্টর জমির ফসল। ফসল উৎপাদন কমছে প্রায় ২৪ হাজার টন। প্রায় ১০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সেচকর বকেয়া পড়েছে। ৩০ বছরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

কমছে আবাদি জমি : মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে অবাধে বাড়িঘর নির্মাণ করায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমি। গত এক যুগে প্রকল্পে অন্তত ৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আবাসন, হাটবাজার, রাস্তাঘাট গড়ে উঠেছে। ফসল উৎপাদন কমেছে প্রায় ২৪ হাজার টন। এভাবে অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এ হাটবাজার করতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেচ প্রকল্পটি ‘আবাসন প্রকল্পে’ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা প্রকল্প করা হয়। শুরুতে কৃষি ও অকৃষিজমির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৫৮৪ হেক্টর। ২০১৩ সালে প্রকল্পের কৃষিজমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮৮০ হেক্টরে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষের দাবি, গত আমন মৌসুমে সেচ সুবিধা দেওয়া হয় মাত্র ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলায় প্রতিবছর গড়ে ১৮ হেক্টর কৃষিজমি কমছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০১০ সালে প্রকল্পের ধানি জমিতে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার টন। ২০১২ সালে আবাদি জমিতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৬ হাজার টন। ২০১৩ সালে উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ৪৮ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ধান উৎপাদন হয় মাত্র ২৫ হাজার ৬৭২ টন। অথচ মতলব উত্তর উপজেলায় খাদ্য উদ্বৃত্ত ১৮ হাজার টন থেকে নেমে এসেছে ১১ হাজার টনে।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের সিপাইকান্দি, ঠেটালিয়া, গজরা, আবুরকান্দি, মান্দারতলী, গনিয়ারপাড়, রাঢ়ীকান্দি, ছৈয়ালকান্দি, বড় ও ছোট হলদিয়া, নাউরী, ওটারচর, নন্দালালপুর ও নবুরকান্দি এলাকায় কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি।

কলেজশিক্ষক কামরুজ্জামান জানান, প্রকল্প উন্নয়নে গবেষণা না থাকায় সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। এভাবে চলতে থাকলে প্রকল্পটি একসময় মৌলিক কাঠামো হারাবে।
উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্যমতে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী যে কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে জেলা কালেক্টরের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ আইনের তোয়াক্কা করছে না প্রকল্পের কেউ।

কথা হয় মুন্সি আজিম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সুখরঞ্জন দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকায় জীববৈচিত্র্যের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। মাটি ও পানির গুণগত মান পরিবর্তনের কারণে সরীসৃপ অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সেচকর বকেয়া : ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে প্রকল্প এলাকায় সেচকর ধার্য করা হয়। বার্ষিক কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ লাখ টাকা। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর আদায় হয় ৮ লাখ টাকা। সেচকর আদায়ের সঠিক কোনো পদ্ধতি না থাকায় মাঠ পর্যায়ে বিনা রসিদে কর আদায় করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। গত ৩০ বছরে সেচকর বকেয়া পড়েছে প্রায় ৮ কোট ৭৫ লাখ টাকা।
বরাদ্দ খরচে শুভঙ্করের ফাঁকি : প্রতিবছর প্রকল্পের সেচ খাল সংস্কার কাজে প্রায় ২ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দ আসে। যার বেশির ভাগই লুটপাট হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি করে অর্ধেক কাজ, বাকি কাজ হয় দরপত্রের মাধ্যমে। সংস্কার কাজের অনিয়ম নিয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে আসছে। সমিতির লোকজন বলছে, দরপত্রের কাজগুলো ৫০ শতাংশ আদায় হয় না। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, সমিতির কাজে গাফলা থাকে, দরপত্রে নয়।

কৃষকরা বলছেন, দু’পক্ষের একই অবস্থা। সংস্কার কাজের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৬ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার অর্ধেক টাকার কাজ করছে ৩০টি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি। বাকি টাকার কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অনিয়মের কারণের একই কাজ প্রতিবছর করতে হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নদী রক্ষা, ফেরোসিমেন্ট ক্যানেল নির্মাণ, পানি নিষ্কাশন খাল নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব কাজের দরপত্র পায় অফিস ও রাজনৈতিক যোগসাজশ রয়েছে এমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

মতলব ও কালিপুর অফিসে দু’জন সাব-ডিভিশন প্রকৌশলী থাকার নিয়ম রয়েছে। তবে অফিসগুলোতে একজন পিয়ন ছাড়া থাকেন না কেউ। দীর্ঘদিন ধরেই ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে অফিস দুটিতে। চাঁদপুর শহরে প্রকল্পের বিভাগীয় কার্যালয় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপস্থিতি, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বড় বড় জলাশয় ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ইজারা ও দখলদারের শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ও দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ বন্ধ করে সেচ ও নিষ্কাশন খালগুলো উদ্ধার করতে পারলে সুফল মিলবে বলে দাবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলীর।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত পাল জানান, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়হীনতায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবাসন চাহিদা বাড়ছে। কৃষিজমি রক্ষায় সরকারের নীতিমালা আছে; কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুক

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০