মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়ক ও জনপথের (সওজ) খালটি হাজীগঞ্জ অংশের সিংহভাগ অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, সওজ’সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে দিনে দিনে খালটি দখল হলেও দখলকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর বা আইনি কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বড়জোর দখলকারীদের বিরুদ্ধে একটি নোটিশ পাঠিয়ে সওজ কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব পালন ও শেষ করে থাকেন।
দেখা গেছে, সিএন্ডবির খাল নামক সওজের ৩০ ফুটের খালটির হাজীগঞ্জ অংশের কোথাও ভরাট করে বাড়ি ও দোকানঘর, কোথাও ১০ ফুটের কালভার্ট, আবার কোথাও ৫ ফুটের ড্রেনসহ ছোট বক্স কালভাট করে কালভার্টের দুই পাশ ভরাট করে বাড়ির রাস্তা নির্মান কাজ করা হয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে দিন-দুপুরে দিনের পর দিন খালটি দখল করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে ১০ ফুটের কালভার্ট করতে দেখা গেছে।
আর কালভার্টটি যৌথভাবে নির্মাণ করছেন, উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের সিদলা গ্রামের পাঠান বাড়ির আব্দুল মালেক ও বাকিলা ইউনিয়নের রাধাসার গ্রামের মনির হোসেন। তারা নির্মিত কালভার্টের দুই পাশে মাটি দিয়ে ভরাট করবেন। এতে খালের ওই অংশে ৩০ ফুটের স্থলে ১০ ফুটে পরিনত হবে। অথচ উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে তারা কালভার্টটি নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও নেন সরকারি কোন অনুমোদন। একই এলাকার পশ্চিম দিকে ৫ ফুটের ড্রেন করা হয়েছে। হয়তো যেকোন সময় মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে।
খোঁজ নিয়ে ও সরজমিনে জানা গেছে, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া খালটির একক মালিকানা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। খালের উপরে বিভিন্ন রাস্তার অংশে সরকারি বড় কালভার্ট ও ব্রীজ রয়েছে। এসব কালভার্টের নিচ দিয়ে সড়কের উত্তরাঞ্চলের পানি দক্ষিণাঞ্চল অঞ্চল হয়ে ডাকাতিয়া নদীতে চলে যায়। কিন্তু খালের হাজীগঞ্জ বাজারস্থ মিঠানিয়া ব্রীজ থেকে দেবপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় সিংহভাগ অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে।
এ দিকে খালটি দিনের পর দিন অবৈধ দখলের কারণে বর্ষাকালে পানি প্রবাহে বাধা বা পানি নিস্কাশন ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি এবং গ্রীষ্মকালে সেচে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে। আর খালটি এভাবে দখল হতে থাকলে সড়কের উত্তরাঞ্চলের বিস্তির্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিবে এবং আর মাঠের পর মাঠে ইরি-বোরোসহ সকল ফসল নষ্ট হয়ে যাবে এবং নতুন করে চাষাবাদ ব্যহত হবে।
বিশেষ করে বর্তমানে খালটির সাতবাড়িয়ার যে অংশে দখল করা হয়েছে। ওই এলাকা দিয়ে উপজেলার কুচির বিল, সিদলা বিল ও ফুলছোঁয়া বিলের পানি নিস্কাশন হয়ে থাকে। অথচ খালটি প্রথমবার ভরাট করে দখল করার সময় স্থানীয়রা কৃষকরা বাঁধা নেন এবং ওই সময়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলামের উদ্যোগে খালটি দখল করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি সময় একই স্থানে খালটি পুরোপুরি ভরাট না করে ১০ ফুটের একটি কালভার্ট করা হয়েছে। এরপর কালভার্টের দুই পাশে মাটি দ্বারা ভরাট করা হবে।
এ নিয়ে স্থানীয় ও এলাকাবাসী এবং কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, অনুমোদনহীন একাধিক ইরি-বোরো সেচ প্রকল্প পানি নিস্কাশনের খাল দখলের দ্বায় সওজ ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কিভাবে এড়িয়ে যাবেন ?
এ বিষয়ে কালভার্ট নির্মাণকারী আব্দুল মালেকের সাথে সংবাদকর্মীদের কথা হলে তিনি জানান, যখন বালি দিয়ে খাল ভরাট করতে গেছি, তখন এলাকাবাসী বাঁধা দিলে আমরা কাজ বন্ধ রাখি। সে সময় অফিসারে বলেছে কালভার্ট করে নিতাম।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন সংবাদকর্মীদের বলেন, আমি অফিসের কাজে চাঁদপুর আসছি, আজকে যেতে পারবো না। একই বিষয়ে সওজের সার্ভেয়ার মারুফ হোসেন বলেন, আমি লোক পাঠিয়ে খবর নিচ্ছি।
হাজীগঞ্জ বিএডিসির প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ বলেন, মাঠে যাদের জমি রয়েছে তাদেরকে বলেন আমাকে বা ইউএনও স্যারকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে। তারপরেও আমি বের হলে সরজমিনে দেখে আসবো। এসময় তিনি বলেন, যেহেতু খালটি সওজের, তারাই-তো ব্যবস্থা নিতে পারেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীলকে বিষয়টি দ্বিতীয়বার জানানোর পরে তিনি সংবাদকর্মীদের মুঠোফোনে জানান, আমি দেখছি।
ক্যাপশন: চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জের বেতিয়াপাড়া এলাকায় সওজের ৩০ফুট খালের মাঝখানে এভাবেই অনুমোদনহীন ও অবৈধভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট বক্স কালভার্ট। -ইল্শেপাড়