বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে র্যালি ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১ জানুয়ারি ২০২৫) সকালে জেলা ছাত্রদলের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য র্যালিটি চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বের হয়ে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সম্মুখস্থ সড়কে গিয়ে শেষ হয়।
বর্ণাঢ্য এই র্যালির নেতৃত্ব দেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিমুল্লাহ সেলিম সহ অন্য নেতৃবৃন্দ র্যালিতে অংশ নেন। এর আগে চাঁদপুর জেলা জাসাসের পরিবেশনায় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর চাঁদপুর জেলার কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। এরপর ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কেক কাটা উদযাপন এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমান হোসেন গাজীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় র্যালির শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ফরিদ আহমেদ মানিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সকল শহীদের বিচার আমরা চাই। ছাত্রদল সুসংগঠিত। তারা ফ্যাসিবাদ উৎখাতে মাঠে ছিল। আগামীর দেশ ও বিএনপি পরিচালনায় ভূমিকা থাকবে ছাত্রদলের। তাই আগামী দিনের ছাত্রদলের নেতৃত্ব পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের দ্বারাই হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সেই গাইডলাইন দিয়েছেন। আমি জেলা ছাত্রদলের এই সুন্দর আয়োজন থেকে চাঁদপুরবাসীকে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাই।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা মানিক আরো বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর একটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে চাঁদপুরে আমাদেরকে (বিএনপিকে) বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নেতা-কর্মীর নামে লেখালেখি করেছে। আমরা দেখেছি, আগস্টের ৫ তারিখের পর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের জীবনবাজি রেখে সরকারি সম্পত্তি, মানুষের জানমাল, হিন্দুদের মন্দির, পূজা মণ্ডপ রক্ষা করেছে। আর কিছু লোক নানা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে পাঁচ তারিখে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জায়গা- জমি দখল করছে।এ সংক্রান্ত ফিরিস্তি আমাদের কাছে আছে, সাংবাদিক ভাইদের কাছেও আছে। কেউ নিজেদেরকে আপনারা ধোয়া তুলসী পাতা ভাববেন না। আপনাদের অপকর্ম আরেক দলের ওপর দেয়ার চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও চাঁদপুর জেলা বিএনপি অনেক শক্তিশালী। সুতরাং আগামী দিনের রাষ্ট্র গঠনের জন্যে ছাত্রদল আমাদের ভ্যানগার্ড। আমাদের নেতা তারেক রহমান ভ্যানগার্ড। তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে আগামী দিন এই দেশ পরিচালিত হবে। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে গত পনের বছর আন্দোলন করেছি, প্রয়োজনে আরো আন্দোলন করবো। সেই লক্ষ্যে ছাত্রদলের সবাইকে মাঠে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতির স্লোগান নিয়ে ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা হবে। তাই আপনারা ছাত্রদল ও তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখবেন।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ সেলিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, শুধু জুলাই-আগস্টের বিপ্লবই বড়ো অর্জন নয়। সবচেয়ে বড়ো অর্জন আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত। তারপরের অর্জন ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লব। তারপর ৯০- এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। এরপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গত ১৭ বছরের লড়াই-সংগ্রাম এবং গুম-খুনের হাজার মানুষের রক্তের ইতিহাস। তার সাথে যোগ হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০২৪-এর জুলাই- আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের রক্ত ঝরা ইতিহাস। সুতরাং ১৯৭১ থেকে ২০২৪-এর জুলাই- আগস্ট রক্তের বিপ্লব এক এবং অভিন্ন। প্রতিটি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে তাজা প্রাণের রক্তের বিনিময়ে। অতএব কোনো ইতিহাসকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
অ্যাডভোকেট সেলিম বলেন, বর্তমানে একটি মহল গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তার মধ্যে পতিত সরকার এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিন্দুস্তান। এজন্যে আজকে স্লোগান
উঠেছে পিন্ডি নয়, দিল্লী নয়, ঢাকা ঢাকা। বাংলাদেশের ঠিকানা ঢাকা ঢাকা।
জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুব আনোয়ার বাবলু, জসিম উদ্দিন খান বাবুল, দেওয়ান মো. সফিকুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনীর চৌধুরী, সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান গাজী, ফেরদৌস আলম বাবু, ডিএম শাহজাহান, সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিমুছ সালাম, আক্তার হোসেন মাঝি, অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ, অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন বাবর, শাহজালাল মিশন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক হযরত আলী ঢালী, জেলা যুবদল সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বাহার, সাবেক ছাত্রনেতা মজিবুর রহমান লিটন, মোস্তফা কামাল, ইখতিয়ার উদ্দিন শিশু, মাসুদ মাঝিসহ জেলা ছাত্রদলের অন্য নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপির অঙ্গ- সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন