ঢাকা 1:01 am, Wednesday, 6 August 2025

চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনে কার্যক্রম শুরু

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:28:22 pm, Tuesday, 5 August 2025
  • 2 Time View
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে প্রস্তাব করেন জেলা প্রশাসক। ওই প্রস্তাবটি সম্মেলনের মধ্যমেয়াদি প্রকল্প হিসেবে গৃহীত হয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে কাজ শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।

সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় এইসব তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গত ২২ জুলাই বাংলাদেশ মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী (এনডিসি) স্বাক্ষরিত পত্রে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়।

স্বাক্ষরিত পত্র থেকে জানাগেছে, ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে একটি আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও মৎস্য হিমাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভূমির মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ে থাকার কারণে বিএফডিসি কর্তৃক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও মৎস্য হিমাগার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

এরপর দীর্ঘ ৮ বছর পর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ওই প্রকল্পটি আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করে চলতি বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রস্তাব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি .৪০ একর জমিতে ৩ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ইলিশ মাছ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের একটি প্রকল্পের রূপরেখা তৈরী করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গত ৫ মে চিঠি প্রেরণ করেন।

আধুনিক ইলিশ মাছ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবিত প্রকল্পের রূপরেখা হচ্ছে- আধুনিক বরফকল, নিলামশেড, আড়তঘর, মিনি ডকইয়ার্ড, পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার, পন্টুনের পাশাপাশি মাছ হিমায়িতকরণ ও প্যাকেজিং এর আধুনিক সুযোগ সুবিধা, মৎস্য জাদুঘর, মৎস্য ভিত্তিক কর্পোরেট অফিস স্পেস, ব্যাংক এবং রেস্তোঁরার সুবিধা থাকবে। আধুনিক এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রকে ঘিরে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলার প্রায় এক কোটি মানুষ বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের জীবন যাত্রার আমুল পরিবর্তন হবে। এছাড়া ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ প্রেমি পর্যটকদের জন্য অপার সম্ভাবনার উপযুক্ত হবে।

চাঁদপুরের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইলিশ আহরণ ও বিক্রির সাথে আমি প্রায় ৪০ বছর জড়িত। জেলার ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি একই নিয়মে চলে আসছে। আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হলে জেলাসহ উপকূলীয় জেলার সকল মৎস্যজীবীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।

নাট্য অভিনেতা ও নির্র্দেশক শরীফ চৌধুরী বলেন, সরকারিভাবে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তৈরীর যে উদ্যোগ খুবই চমৎকার। এটি বাস্তবায়ন হলে শুধুমাত্র দেশেরই নয়, বিদেশি পর্যটকরাও এখানে আসবে। একই সাথে সংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকদের আগমণ ঘটবে।

চাঁদপুরের ব্যবসায়ী সালাম আজাদ ও সমাজকর্মী সেলিম পাটওয়ারী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোন জেলার প্রধান বদলি হয়ে এসে বড় কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা আবার বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়া মোটেও কোন সহজ কাজ ছিলো না। চাঁদপুর ইলিশ ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে খ্যাত। কিন্তু এত বছর পার হলেও জেলাতে ইলিশ রক্ষণাবেক্ষণ বা ইলিশের আমাদানি রপ্তানির জন্যে ছিলো না কোন আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সেই ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রের প্রস্তাব করেন বর্তমান ডিসি। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

এই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, আমি চাই ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ সংরক্ষণ বা ইলিশের আমদানি রপ্তানি সঠিকভাবে হোক। কেউ চাঁদপুরে এসে ইলিশ নিয়ে যেন প্রতারিত না হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা ইলিশের স্বাদগ্রহনের ভালো সুযোগ সুবিধা পাবে। তারা এসে যেন কোনভাবে প্রতারিত না হয় এবং জেলার সুনাম অক্ষুন্ন থাকে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এ বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশাকরি সরকার এ জেলার সকলকে সাথে নিয়ে এই কার্যক্রম সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করবেন।

এরআগে জেলা প্রশাসক আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় মৎসজীবি নেতা, জেলে সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেন। সেসব সভাগুলোতেও সংশ্লিষ্টরা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র করার জন্যেও সম্মতি প্রকাশ করেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে একটি থ্রিডি ভিডিও ডুকুমেন্টারি তৈরি করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ইসলামী আন্দোলনের দোয়ও আলোচনা

চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনে কার্যক্রম শুরু

Update Time : 11:28:22 pm, Tuesday, 5 August 2025
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চাঁদপুরে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে প্রস্তাব করেন জেলা প্রশাসক। ওই প্রস্তাবটি সম্মেলনের মধ্যমেয়াদি প্রকল্প হিসেবে গৃহীত হয়। এটি বাস্তবায়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে কাজ শুরু করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।

সোমবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় এইসব তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গত ২২ জুলাই বাংলাদেশ মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ফারাহ শাম্মী (এনডিসি) স্বাক্ষরিত পত্রে আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়।

স্বাক্ষরিত পত্র থেকে জানাগেছে, ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের প্রস্তাবে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে একটি আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও মৎস্য হিমাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভূমির মালিকানা বাংলাদেশ রেলওয়ে থাকার কারণে বিএফডিসি কর্তৃক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও মৎস্য হিমাগার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।

এরপর দীর্ঘ ৮ বছর পর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ওই প্রকল্পটি আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করে চলতি বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রস্তাব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি .৪০ একর জমিতে ৩ তলা বিশিষ্ট আধুনিক ইলিশ মাছ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের একটি প্রকল্পের রূপরেখা তৈরী করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গত ৫ মে চিঠি প্রেরণ করেন।

আধুনিক ইলিশ মাছ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবিত প্রকল্পের রূপরেখা হচ্ছে- আধুনিক বরফকল, নিলামশেড, আড়তঘর, মিনি ডকইয়ার্ড, পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার, পন্টুনের পাশাপাশি মাছ হিমায়িতকরণ ও প্যাকেজিং এর আধুনিক সুযোগ সুবিধা, মৎস্য জাদুঘর, মৎস্য ভিত্তিক কর্পোরেট অফিস স্পেস, ব্যাংক এবং রেস্তোঁরার সুবিধা থাকবে। আধুনিক এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রকে ঘিরে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলার প্রায় এক কোটি মানুষ বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের জীবন যাত্রার আমুল পরিবর্তন হবে। এছাড়া ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ প্রেমি পর্যটকদের জন্য অপার সম্ভাবনার উপযুক্ত হবে।

চাঁদপুরের প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইলিশ আহরণ ও বিক্রির সাথে আমি প্রায় ৪০ বছর জড়িত। জেলার ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি একই নিয়মে চলে আসছে। আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হলে জেলাসহ উপকূলীয় জেলার সকল মৎস্যজীবীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।

নাট্য অভিনেতা ও নির্র্দেশক শরীফ চৌধুরী বলেন, সরকারিভাবে আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তৈরীর যে উদ্যোগ খুবই চমৎকার। এটি বাস্তবায়ন হলে শুধুমাত্র দেশেরই নয়, বিদেশি পর্যটকরাও এখানে আসবে। একই সাথে সংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকদের আগমণ ঘটবে।

চাঁদপুরের ব্যবসায়ী সালাম আজাদ ও সমাজকর্মী সেলিম পাটওয়ারী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোন জেলার প্রধান বদলি হয়ে এসে বড় কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা আবার বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাওয়া মোটেও কোন সহজ কাজ ছিলো না। চাঁদপুর ইলিশ ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে খ্যাত। কিন্তু এত বছর পার হলেও জেলাতে ইলিশ রক্ষণাবেক্ষণ বা ইলিশের আমাদানি রপ্তানির জন্যে ছিলো না কোন আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সেই ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রের প্রস্তাব করেন বর্তমান ডিসি। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

এই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, আমি চাই ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ সংরক্ষণ বা ইলিশের আমদানি রপ্তানি সঠিকভাবে হোক। কেউ চাঁদপুরে এসে ইলিশ নিয়ে যেন প্রতারিত না হয়। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা ইলিশের স্বাদগ্রহনের ভালো সুযোগ সুবিধা পাবে। তারা এসে যেন কোনভাবে প্রতারিত না হয় এবং জেলার সুনাম অক্ষুন্ন থাকে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এ বছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশাকরি সরকার এ জেলার সকলকে সাথে নিয়ে এই কার্যক্রম সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করবেন।

এরআগে জেলা প্রশাসক আধুনিক ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় মৎসজীবি নেতা, জেলে সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেন। সেসব সভাগুলোতেও সংশ্লিষ্টরা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র করার জন্যেও সম্মতি প্রকাশ করেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে একটি থ্রিডি ভিডিও ডুকুমেন্টারি তৈরি করা হয়।