ঢাকা 10:34 am, Monday, 13 October 2025
চলমান দুটি ট্রেন যাতায়াতের অযোগ্য

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে নতুন করে আন্ত:নগর ট্রেন দেয়ার দাবী

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে বহুবছর ধরে মাত্র দুটি ট্রেন দিয়ে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে চলাচলকারী আন্ত:নগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও এখন চলাচলের অযোগ্য। পুরাতন ট্রেন দুটি দিয়ে যাত্রীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। যে কারণে এই রুটের যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরেকটি আন্ত:নগর ট্রেন দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। এই দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে একটি আন্ত:নগর ট্রেন দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াত করেন যাত্রী ও বিভিন্ন পেশার লোকদের সাথে কথা হয় ট্রেনের মান উন্নয়ন ও নতুন ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।

চট্টগ্রামে ব্যবসা করেন সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের সোবহানপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এই রুটে দুটি ট্রেনের অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘবছর এসব ট্রেনের উন্নয়ন না হওয়ার কারণে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। রেল ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ার কারণে সব সময় যাত্রী বেশি থাকে।

শাহরাস্তি উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মো. তাজুল ইসলাম সুমন বলেন, এই রূটে চলাচলকারী দুটি ট্রেনেই যাত্রী সেবার কোন মান বা পরিবেশ নেই। এখনো যাতায়াতের অযোগ্য মেয়াদোত্তীর্ণ বৃটিশ আমলের কোচ দিয়ে এই ট্রেন দুটো পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় যাত্রী ছাড়াও বরিশাল এবং শরিয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সময় বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে এই রুটে ভ্রমণ করছেন।

ভ্রমন করার জন্য প্রায় সময় এই রুটে যাতায়াত করেন আইনজীবী চৌধুরী ইয়াছিন ইকরাম। তিনি বলেন, এই রুটে সাগরিকা এক্সপ্রেস লোকাল। আর মেঘনা এক্সপ্রেসে বহু সংখ্যক হকার উঠে। তাদের কারণে যাত্রীরা হয়রানি এবং বিড়ম্বনার শিকার হন। নতুন করে একটি আন্ত:নগর ট্রেন দেয়া হলে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধা কয়েকগুন বাড়বে।

শহরের ব্যবসায়ী অহিদুর রহমান খান উৎপল বলেন, এই রুটে দুটি ট্রেনের পর তৃতীয় ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবী। এই অঞ্চলের অনেক লোক কক্সবাজার ভ্রমন করতে যান। ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচির সাথে মিলরেখে নতুন ট্রেনের সময় নির্ধারণ করলে ভ্রমণে নতুনমাত্রা যোগ হবে। এছাড়া মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন চাঁদপুর থেকে যাত্রা সময় ভোরে হওয়ার কারণে গ্রামের অনেক যাত্রী যেতে পারে না। এসব বিষয়গুলো আলোচনা করে ঠিক করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন আল-আজাদ বলেন, এই রুটে অনেক যাত্রী। বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। নতুন করে আন্ত:নগর এবং এসি ট্রেন খুবই প্রয়োজন। আর সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রেন দেয়া খুবই জরুরি।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে অনেক যাত্রী ব্যাক্তিগত কাজ ছাড়াও দাপ্তরিক কাজে যাতায়াত করেন। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। নৌ-রুটেও চলাচলের ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেসও এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ট্রেন দুটির বেশিরভাগ ওয়াশরুম, লাইট, ফ্যান ও চেয়ারের অবস্থা জরাজীর্ণ।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে এই রুটের যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করে। কর্মসংস্থানের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এই রুটে চট্টগ্রামের যাতায়াত করে। তুলনামূলক স্বল্প ভাড়া ও যাতায়াত সুবিধার জন্য এই রুটে যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণাঞ্চলসহ যাত্রীদের সুবিধার্থে রেল লাইন সংস্কারসহ একটি আন্ত:নগর ট্রেন প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। যে কারণে আমি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দিয়েছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

হাজীগঞ্জে পৌর তিনটি ওয়ার্ডে তরুণ ভোটারদের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা

চলমান দুটি ট্রেন যাতায়াতের অযোগ্য

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে নতুন করে আন্ত:নগর ট্রেন দেয়ার দাবী

Update Time : 06:46:28 pm, Thursday, 25 September 2025

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে বহুবছর ধরে মাত্র দুটি ট্রেন দিয়ে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে চলাচলকারী আন্ত:নগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিও এখন চলাচলের অযোগ্য। পুরাতন ট্রেন দুটি দিয়ে যাত্রীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। যে কারণে এই রুটের যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরেকটি আন্ত:নগর ট্রেন দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক। এই দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে একটি আন্ত:নগর ট্রেন দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াত করেন যাত্রী ও বিভিন্ন পেশার লোকদের সাথে কথা হয় ট্রেনের মান উন্নয়ন ও নতুন ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে।

চট্টগ্রামে ব্যবসা করেন সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের সোবহানপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এই রুটে দুটি ট্রেনের অবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘবছর এসব ট্রেনের উন্নয়ন না হওয়ার কারণে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। রেল ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ার কারণে সব সময় যাত্রী বেশি থাকে।

শাহরাস্তি উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মো. তাজুল ইসলাম সুমন বলেন, এই রূটে চলাচলকারী দুটি ট্রেনেই যাত্রী সেবার কোন মান বা পরিবেশ নেই। এখনো যাতায়াতের অযোগ্য মেয়াদোত্তীর্ণ বৃটিশ আমলের কোচ দিয়ে এই ট্রেন দুটো পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় যাত্রী ছাড়াও বরিশাল এবং শরিয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সময় বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে এই রুটে ভ্রমণ করছেন।

ভ্রমন করার জন্য প্রায় সময় এই রুটে যাতায়াত করেন আইনজীবী চৌধুরী ইয়াছিন ইকরাম। তিনি বলেন, এই রুটে সাগরিকা এক্সপ্রেস লোকাল। আর মেঘনা এক্সপ্রেসে বহু সংখ্যক হকার উঠে। তাদের কারণে যাত্রীরা হয়রানি এবং বিড়ম্বনার শিকার হন। নতুন করে একটি আন্ত:নগর ট্রেন দেয়া হলে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধা কয়েকগুন বাড়বে।

শহরের ব্যবসায়ী অহিদুর রহমান খান উৎপল বলেন, এই রুটে দুটি ট্রেনের পর তৃতীয় ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবী। এই অঞ্চলের অনেক লোক কক্সবাজার ভ্রমন করতে যান। ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচির সাথে মিলরেখে নতুন ট্রেনের সময় নির্ধারণ করলে ভ্রমণে নতুনমাত্রা যোগ হবে। এছাড়া মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন চাঁদপুর থেকে যাত্রা সময় ভোরে হওয়ার কারণে গ্রামের অনেক যাত্রী যেতে পারে না। এসব বিষয়গুলো আলোচনা করে ঠিক করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা মহিউদ্দিন আল-আজাদ বলেন, এই রুটে অনেক যাত্রী। বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। নতুন করে আন্ত:নগর এবং এসি ট্রেন খুবই প্রয়োজন। আর সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রেন দেয়া খুবই জরুরি।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে অনেক যাত্রী ব্যাক্তিগত কাজ ছাড়াও দাপ্তরিক কাজে যাতায়াত করেন। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। নৌ-রুটেও চলাচলের ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এক্সপ্রেসও এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ট্রেন দুটির বেশিরভাগ ওয়াশরুম, লাইট, ফ্যান ও চেয়ারের অবস্থা জরাজীর্ণ।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে এই রুটের যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যাতায়াত করে। কর্মসংস্থানের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এই রুটে চট্টগ্রামের যাতায়াত করে। তুলনামূলক স্বল্প ভাড়া ও যাতায়াত সুবিধার জন্য এই রুটে যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণাঞ্চলসহ যাত্রীদের সুবিধার্থে রেল লাইন সংস্কারসহ একটি আন্ত:নগর ট্রেন প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। যে কারণে আমি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দিয়েছি।