ঢাকা ০৭:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের দায়িত্ব হাতে নিল কেন্দ্রীয় সরকার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৫৭ Time View

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিযুক্তি থেকে পুরোপুরি ছেঁটে ফেলা হলো সুপ্রিম কোর্টকে। মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের দায়িত্ব হাতে নিল কেন্দ্রীয় সরকার। এ–সংক্রান্ত বিল আজ বৃহস্পতিবার বিরোধীমুক্ত লোকসভায় পাস হলো। এই বিল আগেই রাজ্যসভায় পাস হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর তা নতুন আইন হিসেবে গণ্য হবে।

এই আইন বলবৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলবে বলে বিরোধীদের অভিমত।

ভারতের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ভার বরাবরই সরকারের হাতে ছিল। সরকারও নিজের পছন্দমতো কর্তা নিয়োগ করত। এক সদস্যের কমিশন থেকে ক্রমেই তা তিন সদস্যের কমিশন হয়। একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও দুজন নির্বাচন কমিশনার এখন দায়িত্ব পালন করেন।

ভারতে কমিশনারদের নিয়োগের কোনো আইন ছিল না। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলের নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মিলে কমিশনারদের নিয়োগ করতে থাকেন। সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছর এক মামলায় আইন তৈরির ওপর জোর দেন। শীর্ষ আদালত বলেছিলেন, যত দিন না আইন হচ্ছে, তত দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। বিল পাস হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের আর কোনো ভূমিকাই থাকবে না।

নতুন আইন অনুযায়ী তিন কমিশনার নিযুক্তির দায়িত্বে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁর পছন্দমতো একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সংসদের বিরোধী নেতা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে বিরোধী নেতার আপত্তি সত্ত্বেও সরকার মনোনীতরাই হবেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনার। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন পরিচালনায় বিরোধীদের নিরপেক্ষতার বিন্দুমাত্র আশা থাকবে না।

সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রবিশেষে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ এই সরকার মানতে চাইছে না। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ ও বদলিসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের শরিক হতেও সরকার বদ্ধপরিকর। যদিও এখনো সেই দায়িত্ব পুরোপুরি শীর্ষ আদালতের হাতে। সে জন্য জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের এক কমিটি রয়েছে। তাঁরাই নিযুক্তি ও বদলিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠান। এটাকে ‘কলেজিয়াম ব্যবস্থা’ বলা হয়।

সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চাইছে ওই ব্যবস্থার শরিক হতে। সুপ্রিম কোর্টের আপত্তিতে তা এখনো পারছে না। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কারণেই বিল পাস করে নির্বাচন কমিশনের নিযুক্তি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সরকার বাদ দিল।
প্রতিটি নির্বাচনের আগে আদর্শ নির্বাচনবিধি মানা হচ্ছে কি না, কমিশন তা খতিয়ে দেখে। কিন্তু ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা বিজেপির অন্যান্য শীর্ষ কোনো নেতার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগই কমিশন আমলে নেয়নি।

বিরোধীদের অভিযোগ, এই আইন প্রণয়ন হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষ চরিত্র পুরোপুরি হারিয়ে ফেলবে। কমিশন হয়ে উঠবে সরকারের আজ্ঞাবহ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শাহারাস্তিতে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ভারতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের দায়িত্ব হাতে নিল কেন্দ্রীয় সরকার

Update Time : ০৪:৫৫:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :

ভারতের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিযুক্তি থেকে পুরোপুরি ছেঁটে ফেলা হলো সুপ্রিম কোর্টকে। মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের দায়িত্ব হাতে নিল কেন্দ্রীয় সরকার। এ–সংক্রান্ত বিল আজ বৃহস্পতিবার বিরোধীমুক্ত লোকসভায় পাস হলো। এই বিল আগেই রাজ্যসভায় পাস হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির সইয়ের পর তা নতুন আইন হিসেবে গণ্য হবে।

এই আইন বলবৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলবে বলে বিরোধীদের অভিমত।

ভারতের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ভার বরাবরই সরকারের হাতে ছিল। সরকারও নিজের পছন্দমতো কর্তা নিয়োগ করত। এক সদস্যের কমিশন থেকে ক্রমেই তা তিন সদস্যের কমিশন হয়। একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও দুজন নির্বাচন কমিশনার এখন দায়িত্ব পালন করেন।

ভারতে কমিশনারদের নিয়োগের কোনো আইন ছিল না। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলের নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মিলে কমিশনারদের নিয়োগ করতে থাকেন। সুপ্রিম কোর্ট চলতি বছর এক মামলায় আইন তৈরির ওপর জোর দেন। শীর্ষ আদালত বলেছিলেন, যত দিন না আইন হচ্ছে, তত দিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও বিরোধী নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। বিল পাস হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের আর কোনো ভূমিকাই থাকবে না।

নতুন আইন অনুযায়ী তিন কমিশনার নিযুক্তির দায়িত্বে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁর পছন্দমতো একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সংসদের বিরোধী নেতা। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে বিরোধী নেতার আপত্তি সত্ত্বেও সরকার মনোনীতরাই হবেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও দুই নির্বাচন কমিশনার। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন পরিচালনায় বিরোধীদের নিরপেক্ষতার বিন্দুমাত্র আশা থাকবে না।

সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রবিশেষে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ এই সরকার মানতে চাইছে না। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ ও বদলিসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের শরিক হতেও সরকার বদ্ধপরিকর। যদিও এখনো সেই দায়িত্ব পুরোপুরি শীর্ষ আদালতের হাতে। সে জন্য জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের এক কমিটি রয়েছে। তাঁরাই নিযুক্তি ও বদলিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠান। এটাকে ‘কলেজিয়াম ব্যবস্থা’ বলা হয়।

সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চাইছে ওই ব্যবস্থার শরিক হতে। সুপ্রিম কোর্টের আপত্তিতে তা এখনো পারছে না। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই কারণেই বিল পাস করে নির্বাচন কমিশনের নিযুক্তি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সরকার বাদ দিল।
প্রতিটি নির্বাচনের আগে আদর্শ নির্বাচনবিধি মানা হচ্ছে কি না, কমিশন তা খতিয়ে দেখে। কিন্তু ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা বিজেপির অন্যান্য শীর্ষ কোনো নেতার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগই কমিশন আমলে নেয়নি।

বিরোধীদের অভিযোগ, এই আইন প্রণয়ন হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষ চরিত্র পুরোপুরি হারিয়ে ফেলবে। কমিশন হয়ে উঠবে সরকারের আজ্ঞাবহ।