ঢাকা 8:52 am, Thursday, 21 August 2025

হাজীগঞ্জে ভারতীয় চিনির রমরমা বাণিজ্য, কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:30:06 pm, Thursday, 4 April 2024
  • 7 Time View

ছবি-সংগৃহিত।

হাজীগঞ্জে ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রতিদিনই আসছে বিপুল পরিমাণের চিনি। দেশের বাজারের তুলনায় দামে কম পাওয়ায় এ চিনির কারবার বেড়েই চলেছে দিনদিন। উপজেলাসহ জেলার অধিকাংশ বাজার ভারতীয় অবৈধ চিনিতে সয়লাব। অবৈধভাবে চিনি আসায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটি অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আনা হচ্ছে ভারতীয় চিনি। এর পর এ চিনি রাতের আধারে চলে যাচ্ছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে। এসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশী চিনির চাহিদা রয়েছে হাজীগঞ্জ বাজারে। হাজীগঞ্জ বাজারের হলুদ পট্রির কয়েকটি আড়তে এসব চিনি মজুদ করা হয়।

অবৈধ পথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চিনি দেশে প্রবেশ করছে। একশ্রেণির চোরাকারবারি সীমান্ত এলাকার নিম্নআয়ের মানুষদের চিনি চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করছেন। কাঁটাতারের বেড়া পার করে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের পাশাপাশি রাতে পিকআপ ভ্যানে করে এসব চিনি ছড়িয়ে যায় হাজীগঞ্জ বাজারে। পরে এখান থেকে পাইকারী দামে এসব চিনি বিক্রয় করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সময় হাজীগঞ্জ বাজারে ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি, দুধ, শাড়ী, ফ্রি-পিস, মসল্লা, মাদক ও অন্যান্য পণ্য আমদানিকে কেন্দ্র করে এতদ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। চোরাকারবারিরা কুমিল্লা থেকে বিভিন্নভাবে গ্রামের মধ্যেদিয়ে রাতের আধারে চিনি পরিবহন করে নিয়ে সড়কের বাজার ও হাজীগঞ্জ বাজারের নির্দিষ্ট গুদামে মজুদ করে রাখে। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলে এই পাচারকাণ্ড।

স্থানীয় বাজার ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, ভারতের বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি ৪৪ রুপি। ৫০ কেজির বস্তার দাম ২ হাজার ২০০ রুপি। একই পরিমাণ চিনি হাজীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রয় হচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা মুদি দোকানিদের কাছে। উপজেলার গ্রামের হাটবাজারগুলোতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বাজারে চিনি আনতে গেলে ভারতীয় চিনি ছাড়া দেশীয় বা আমদানিকৃত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকানে বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় রেখে চিনি বিক্রি করছে। নিরুপায় হয়ে ভারতীয় চিনিই কিনতে হয়।

সম্প্রতি হাজীগঞ্জ থানায় একটি ট্রাক চিনি আটক করেছিলো পুলিশ। পরে বিভিন্নভাবে তদবির করে সে চিনি ছাড়িয়ে নেয়া হয়।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক হাজীগঞ্জ বাজারের কয়েকজন মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ভারতীয় চিনি অধিক পরিমানে আসার কারণে আমাদের এলসির চিনি বিক্রয় কমে গেছে। গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীরা ২০/৩০ টাকা কম পেয়ে চোরাই পথে আসা অবৈধ ভারতীয় চিনি ক্রয় করছে।

এ বিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. নুর হোসেন বলেন, অবৈধ পথে চিনি আনা বন্ধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে চাঁদপুরের কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে চিনি আটক করা হয়েছে। বিগত সময়ে বেশ কিছু দোকানিকে অবৈধ ভারতীয় চিনি রাখার দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

শাহরাস্তিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

হাজীগঞ্জে ভারতীয় চিনির রমরমা বাণিজ্য, কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

Update Time : 04:30:06 pm, Thursday, 4 April 2024

হাজীগঞ্জে ভারত থেকে অবৈধ পথে প্রতিদিনই আসছে বিপুল পরিমাণের চিনি। দেশের বাজারের তুলনায় দামে কম পাওয়ায় এ চিনির কারবার বেড়েই চলেছে দিনদিন। উপজেলাসহ জেলার অধিকাংশ বাজার ভারতীয় অবৈধ চিনিতে সয়লাব। অবৈধভাবে চিনি আসায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটি অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আনা হচ্ছে ভারতীয় চিনি। এর পর এ চিনি রাতের আধারে চলে যাচ্ছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে। এসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশী চিনির চাহিদা রয়েছে হাজীগঞ্জ বাজারে। হাজীগঞ্জ বাজারের হলুদ পট্রির কয়েকটি আড়তে এসব চিনি মজুদ করা হয়।

অবৈধ পথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চিনি দেশে প্রবেশ করছে। একশ্রেণির চোরাকারবারি সীমান্ত এলাকার নিম্নআয়ের মানুষদের চিনি চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করছেন। কাঁটাতারের বেড়া পার করে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের পাশাপাশি রাতে পিকআপ ভ্যানে করে এসব চিনি ছড়িয়ে যায় হাজীগঞ্জ বাজারে। পরে এখান থেকে পাইকারী দামে এসব চিনি বিক্রয় করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সময় হাজীগঞ্জ বাজারে ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি, দুধ, শাড়ী, ফ্রি-পিস, মসল্লা, মাদক ও অন্যান্য পণ্য আমদানিকে কেন্দ্র করে এতদ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। চোরাকারবারিরা কুমিল্লা থেকে বিভিন্নভাবে গ্রামের মধ্যেদিয়ে রাতের আধারে চিনি পরিবহন করে নিয়ে সড়কের বাজার ও হাজীগঞ্জ বাজারের নির্দিষ্ট গুদামে মজুদ করে রাখে। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলে এই পাচারকাণ্ড।

স্থানীয় বাজার ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, ভারতের বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি ৪৪ রুপি। ৫০ কেজির বস্তার দাম ২ হাজার ২০০ রুপি। একই পরিমাণ চিনি হাজীগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রয় হচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা মুদি দোকানিদের কাছে। উপজেলার গ্রামের হাটবাজারগুলোতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বাজারে চিনি আনতে গেলে ভারতীয় চিনি ছাড়া দেশীয় বা আমদানিকৃত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকানে বস্তা পরিবর্তন করে অন্য বস্তায় রেখে চিনি বিক্রি করছে। নিরুপায় হয়ে ভারতীয় চিনিই কিনতে হয়।

সম্প্রতি হাজীগঞ্জ থানায় একটি ট্রাক চিনি আটক করেছিলো পুলিশ। পরে বিভিন্নভাবে তদবির করে সে চিনি ছাড়িয়ে নেয়া হয়।

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক হাজীগঞ্জ বাজারের কয়েকজন মুদি ব্যবসায়ী বলেন, ভারতীয় চিনি অধিক পরিমানে আসার কারণে আমাদের এলসির চিনি বিক্রয় কমে গেছে। গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীরা ২০/৩০ টাকা কম পেয়ে চোরাই পথে আসা অবৈধ ভারতীয় চিনি ক্রয় করছে।

এ বিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. নুর হোসেন বলেন, অবৈধ পথে চিনি আনা বন্ধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে চাঁদপুরের কয়েকটি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে চিনি আটক করা হয়েছে। বিগত সময়ে বেশ কিছু দোকানিকে অবৈধ ভারতীয় চিনি রাখার দায়ে জরিমানা করা হয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।