ঢাকা 2:14 am, Tuesday, 22 July 2025

ইলিশ ধরতে চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার পাড়ে উৎসবের আমেজ

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:37:16 pm, Friday, 28 October 2022
  • 53 Time View

মহিউদ্দিন আল আজাদ:

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে ইলিশ আহরণে নামবেন জেলেরা। ইতোমধ্যে জেলেরা তাদের মাছ ধরার নৌকা মেরামত ও জাল প্রস্তুত করেছেন। তবে জেলেদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছে। তারা মা ইলিশ রক্ষার সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু জেলে নির্বিচারে মা ইলিশ ধরায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যে কারণে তারা এখন নদীতে নেমে ইলিশ পাওয়া না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে ঘুরে দেখাগেছে জেলেরা ইলিশ ধরার জন্য নতুন জাল প্রস্তুত করছেন। আবার অনেকেই নৌকাগুলো মেরামত করছেন এবং নৌকার মধ্যে ইঞ্জিন বসাচ্ছেন। তাদের এই প্রস্তুতির কাজে পরিবারের ছোট বড় সব সদস্যরাই সহযোগিতা করছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের জেলে আলমগীর হোসেন জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা আমরা মেনেছি। আমরা নদীতে নামিনি। কিন্তু এক শ্রেনীর অসাধু ও মৌসুমী জেলে ঠিকই মা ইলিশ নিধন করে টাকা কামিয়েছে।

একই এলাকার জেলে এনায়েত উল্যাহ ও ওমর ফারুক জানান, বছরে দুইবার ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা দেয়। আমরা সব কিছুই মানি। কিন্তু এই সময় আমাদের সংসার চলে না। প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। ঋন করে চলতে হয়। বছর শেষে দেখা যায় একেকজন ২০-৩০ হাজার টাকা ঋনগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে যে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়, তা সঠিক ওজনে পাওয়া যায় না।

তারা বলেন, বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিসিনপত্রের যে দাম, ২৫ কেজি চাল দিয়ে ৫-৭ জনের সংসার চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। সরকার আমাদের বিষয়ে আরো দৃষ্টি দেয়া দরকার।

চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট এলাকার জেলে মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা মা ইলিশ ধরি না। কিন্তু নিরাপদে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগও দিচ্ছে না এক শ্রেনীর জেলে। আমি মনে করি সকলেরই উচিৎ ইলিশ মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দেয়া। এসব মাছ বড় হলো আমরাইত ধরব।

শহরতলীর আনন্দ বাজার জেলে পল্লীর জেলে সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক বছর নদীর অবস্থা ভাল না। মেঘনা চর জেগে উঠায় আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কাজ করতে হয়। কারণ মাছ ধরার কাজ করে সংসার চলে না। আমাদের সাথের অনেকে জেলে এখন রিকশা চালায় এবং কৃষি কাজ করে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, চাঁদপুর জেলায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা টাস্কফোর্স যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত আমরা শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। জেলেদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আশা করছি ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

ইলিশ ধরতে চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার পাড়ে উৎসবের আমেজ

Update Time : 04:37:16 pm, Friday, 28 October 2022

মহিউদ্দিন আল আজাদ:

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ রক্ষার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে ইলিশ আহরণে নামবেন জেলেরা। ইতোমধ্যে জেলেরা তাদের মাছ ধরার নৌকা মেরামত ও জাল প্রস্তুত করেছেন। তবে জেলেদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছে। তারা মা ইলিশ রক্ষার সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও এক শ্রেণীর অসাধু জেলে নির্বিচারে মা ইলিশ ধরায় এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যে কারণে তারা এখন নদীতে নেমে ইলিশ পাওয়া না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে ঘুরে দেখাগেছে জেলেরা ইলিশ ধরার জন্য নতুন জাল প্রস্তুত করছেন। আবার অনেকেই নৌকাগুলো মেরামত করছেন এবং নৌকার মধ্যে ইঞ্জিন বসাচ্ছেন। তাদের এই প্রস্তুতির কাজে পরিবারের ছোট বড় সব সদস্যরাই সহযোগিতা করছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের জেলে আলমগীর হোসেন জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা আমরা মেনেছি। আমরা নদীতে নামিনি। কিন্তু এক শ্রেনীর অসাধু ও মৌসুমী জেলে ঠিকই মা ইলিশ নিধন করে টাকা কামিয়েছে।

একই এলাকার জেলে এনায়েত উল্যাহ ও ওমর ফারুক জানান, বছরে দুইবার ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা দেয়। আমরা সব কিছুই মানি। কিন্তু এই সময় আমাদের সংসার চলে না। প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। ঋন করে চলতে হয়। বছর শেষে দেখা যায় একেকজন ২০-৩০ হাজার টাকা ঋনগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে যে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়, তা সঠিক ওজনে পাওয়া যায় না।

তারা বলেন, বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিসিনপত্রের যে দাম, ২৫ কেজি চাল দিয়ে ৫-৭ জনের সংসার চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। সরকার আমাদের বিষয়ে আরো দৃষ্টি দেয়া দরকার।

চান্দ্রা ইউনিয়নের আখনের হাট এলাকার জেলে মোহাম্মদ আলী জানান, আমরা মা ইলিশ ধরি না। কিন্তু নিরাপদে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগও দিচ্ছে না এক শ্রেনীর জেলে। আমি মনে করি সকলেরই উচিৎ ইলিশ মাছকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দেয়া। এসব মাছ বড় হলো আমরাইত ধরব।

শহরতলীর আনন্দ বাজার জেলে পল্লীর জেলে সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক বছর নদীর অবস্থা ভাল না। মেঘনা চর জেগে উঠায় আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কাজ করতে হয়। কারণ মাছ ধরার কাজ করে সংসার চলে না। আমাদের সাথের অনেকে জেলে এখন রিকশা চালায় এবং কৃষি কাজ করে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, চাঁদপুর জেলায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা টাস্কফোর্স যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসব সিদ্ধান্ত আমরা শতভাগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। জেলেদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। আশা করছি ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।