ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যা রীতিমতো কঠিনই বলা যায়। যা হওয়ার কথা নয়, তাই হলো।
আফিফ হোসেন আউট হওয়ার পরই কানায় কানায় ভরা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারির কিছু কিছু জায়গা ফাঁকা হতে থাকে । যাওয়ার পথে অনেক দর্শকই ইবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদকে রানের খাতা না খুলেই আউট হতে দেখেছেন। জয়ের জন্য তখন বাংলাদেশ দলের ৫১ রান, হাতে মাত্র ১টি উইকেট।
স্বীকৃত ব্যাটসম্যান যদি কাউকে বলা যায়, তাহলে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম নিতে হবে। যার নামের পাশে ৭ বলে ০। আরেকজন মোস্তাফিজুর রহমান। এমন অবস্থায় কেউই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পক্ষে বাজি ধরার সাহস পাবেন না—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্রিজে থাকা দুজনের মনে ছিল এক সমুদ্র আত্মবিশ্বাস।
বাংলাদেশ-ভারত এই ম্যাচটি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটি অনুমান করা যাচ্ছিল না প্রথম ইনিংস থেকেই। মিরপুর স্টেডিয়ামের অসম গতির উইকেটে সাকিব আল হাসানের ৫ উইকেট ও ইবাদত হোসেনের ৪ উইকেটের সৌজন্যে ভারতকে ১৮৬ রানে থামানোর পরও বাংলাদেশের জয়ের কথাটা জোর গলায় বলা যাচ্ছিল না। প্রেস বক্সে অনেকেই শঙ্কা মেশানো কণ্ঠে বলছিলেন – ‘জিতবে তো?’
বাংলাদেশ দলের রান তাড়ার শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম বলেই দীপক চাহার খুঁজে পান ওপেনার নাজমুল হোসেনের ব্যাটের বাইরের দি
কের কানা। স্লিপে থাকা রোহিত শর্মা নিচু হয়ে আসা বলটি লুফে নিয়েছেন সহজেই। কোনো রান না করেই আউট নাজমুল।
তিনে নামা এনামুল হকের ইনিংসও দীর্ঘ হয়নি। ২৯ বল খেলে ১৪ রান করেছে মোহাম্মদ সিরাজের বলে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট মিড উইকেটে। লিটন দাসের সঙ্গে এনামুলের ২৬ রানের ধির গতির জুটিটা পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের বড় রান হতে দেয়নি। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান করেছে বাংলাদেশ।
তবে সে ক্ষতিটা ভালোই পুষিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ক্রিজে এসেই সিরাজকে কাভার বাউন্ডারিতে চার মেরে ভারতীয়দের বার্তা দেন। লিটনকে সঙ্গে নিয়ে রান রেট ৩ থেকে ৪–এ নিয়ে যান। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যা যথেষ্টই মনে হচ্ছিল। কিন্তু লিটন-সাকিবের আউটে ম্যাচের ছবিটা পাল্টে যায় মুহূর্তেই।
দুজনই ওয়াশিংটন সুন্দরের শিকার। ৬৩ বলে ৪১ রান করা লিটন উইকেটকিপার লোকেশ রাহুলের গ্লাভসবন্দী হন। সাকিব সেই সুন্দরের বলেই ড্রাইভ করে চার মারতে গিয়ে কাভারে বিরাট কোহলির অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে বিদায় নেন। ম্যাচের গতিপথ ভারতের দিকে হেলে পড়ে তখন।
স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে খোলসবন্দী হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং। অথচ জয়ের জন্য দরকার মাত্র ৯১ রান, ম্যাচের আরও ২৭ ওভার বাকি। এমন সমীকরণ সামনে রেখে মুশফিকুর রহিম (৪৫ বলে ১৮) ও মাহমুদউল্লাহ (৩৫ বলে ১৪) খেললেন মন্থর গতির ইনিংস। দুজনই আউট হওয়ার আগে ৬৯ বল খেলে যোগ করেছেন ৩৩ রান। মারতে পারেননি একটি বাউন্ডারিও।
বাংলাদেশ এরপর বাউন্ডারির দেখা পায় মোস্তাফিজের ব্যাট থেকে। এরপর মিরাজও খুঁজে নেন পয়েন্ট ও ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট বাউন্ডারির সীমানা। দুজনের সে চেষ্টাটা তখন পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছিল না। কিন্তু মিরাজ-মোস্তাফিজ লড়ে গেছেন জয়ের আশায়। সে আশার আলোয় শেষ পর্যন্ত উদ্ভাসিত হলো বাংলাদেশের আরও একটি দারুন জয়।