আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এবং বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে।
আজ শুক্রবার রাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান রাত ৮টার দিকে প্রথম আলোকে বলেছেন, বিএনপিকে কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগকেও তাদের পছন্দের জায়গা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার নিশ্চিত করেছেন।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণাটি দিয়েছিল ১৮ অক্টোবর। এরপর আওয়ামী লীগও একই দিন ঘোষণা দেয় যে তারা ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে। এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
বিএনপি মহাসমাবেশের ঘোষণার তিন দিনের মাথায় ২১ অক্টোবর পুলিশকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায়। পুলিশের পক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর বিএনপিকে চিঠি দিয়ে মহাসমাবেশের জন্য দুটি বিকল্প জায়গা ভাবতে বলা হয়। সঙ্গে চাওয়া হয় সাত ধরনের তথ্য—সমাবেশে লোকসমাগমের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কি না ইত্যাদি।
বিএনপি একই দিন পুলিশকে চিঠি দিয়ে জানায়, তারা সমাবেশ নয়াপল্টনেই করবে। অন্য কোনো জায়গার প্রস্তাব বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
২৬ অক্টোবর ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে রাস্তায় কোনো সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। মাঠ কিংবা খোলা স্থান নির্বাচন করে, সেটি উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আজ দুপুরে পুলিশ সদস্যদের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগাতে দেখা যায়। অপর দিকে সকাল থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বিকেলে ভিড় বাড়তে থাকে।
সকালে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাঁরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবেন।
দুই দলের সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ডিএমপির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা আজ বিকেল চারটার দিকে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে দুই দলকে শর্তসাপেক্ষে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ঢাকায় গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের স্থান ঠিক করা নিয়ে এখনকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। বিএনপি চেয়েছিল নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে, তবে পুলিশ নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দিতে চায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। পরে গণসমাবেশের আগের দিন গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি পায় বিএনপি। তবে বিএনপি এবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় থাকে।
আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ
আওয়ামী ২৮ অক্টোবর যে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ ডেকেছে, তার দুটি বিকল্প জায়গা ঠিক করতে পুলিশ চিঠি দিয়েছিল। পাশাপাশি সমাবেশ নিয়ে সাতটি তথ্য জানতে চেয়েছিল।
জবাবে পুলিশকে দেওয়া চিঠিতে আওয়ামী লীগ জানায়, তারা বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকেই সমাবেশ করবে। চিঠিতে বলা হয়, ‘২৮ অক্টোবর (শনিবার) শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চনির্মাণ ও প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম) ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার।’
অনুমতি পায়নি জামায়াত
আগামীকাল রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। তবে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে আগেই ডিএমপি জানিয়েছিল জামায়াতকে অনুমতি দেওয়া হবে না। আজও ডিএমপির সভা শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, জামায়াতকে মহাসমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
অবশ্য বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বলেছেন, অনুমতি না পেলেও তাঁরা মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।