ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের না-বলা মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা : ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:০৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩
  • ৫৪ Time View

ছবি-ত্রিনদী

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ইস্যু করে আমেরিকা বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায় বলে মনে করছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তার মতে, আমেরিকা চায় বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রন। এখানে সুষ্ঠু বা অবাধ নির্বাচন হলো কি না সে বিষয়ে আগ্রহ নেই আমেরিকার। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত এসব মন্তব্য করেন।

বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বরাবরই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার তাগিদ দিয়ে আসছে আমেরকিা। এরই মধ্যে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞাও কার্যকর করা শুরু করেছে বাইডেন প্রশাসন।

তবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে আমেরিকার এমন আগ্রহকে প্রশ্নের চোখে দেখছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘আমি সোজা সাপ্টা একটা কথা বলতে চাই। আমেরিকা আসলে এদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলো কি হলো না তাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

নিজের পর্যবেক্ষন তুলে ধরে ইউসুফ বলেন, ‘ভৌগলিকভাবে ভারত ও চীনের মত শক্তিশালী দেশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। মূল সংকট হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্র চীন, তাদের আপত্তি চীনের উদয়মান অর্থনীতি। তাদের অনুদানের সক্ষমতাসহ, চীনের গোটা অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিতে পারছে না। আর সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের ডানা কেটে দিতে। এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে বাংলাদেশ চীনের সেই ডানার একটি ছোট অংশ।’

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত মনে করেন, আমেরিকার মনে করে তার চেয়ে চীন, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ। যা ওয়াশিংটনের মাথা ব্যাথ্যার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘জনসংখ্যা দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এটা একটা বড় মার্কেট। এত বড় মার্কেটে আমেরিকার পণ্য কম কেন? আমেরিকার কাছ থেকে বাংলাদেশ কেন অস্ত্র কিনছে না? কেন শুধু চীন বা রাশিয়া বা কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত থেকে অস্ত্র কিনছে? কোয়াডের কথাই বলি বা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট, কেন বাংলাদেশ তার সদস্য হচ্ছে না? বাংলাদেশ কেন আমেরিকার নেতৃত্বধীন জোটে যেতে অস্বীকার করেছে?

ইউসুফ বলেন, ‘কেন বাংলাদেশ তার ভূখন্ডের একটি অংশে আমেরিকাকে সামরিক বা নৌ ঘাঁটি স্থাপনের জন্য দিতে চায় না। বাংলাদেশকে কে যুক্তরাষ্ট্রকে না বলতে শিখিয়েছে? বাংলাদেশের না – বলা মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা।’

শক্তিশালি দেশের অপশন না মানলে কি হবে তাও জানান ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘যখন বাংলাদেশ না বলবে তখন তাকে মূল্য দিতে হবে। বাংলাদেশকে দুটো অপশন দেয়া হয়েছে, হয় তুমি আমেরিকা ও পশ্চিমাদের পক্ষে অবস্থান নেবে, না হয় বাকি দেশগুলোকেও না বলে দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল হবে।’

ফিলিস্তিনি দূত বলেন, ‘আর দ্বিতীয় অপশনটি হলো যুক্তরাষ্ট্রকে না বলে নিজের স্বাধীন সাবভৌমত্ব ধরে রাখবে। এবং বলবে বাংলাদেশ তার মান মর্যাদা ধরে রেখে জনগণের পক্ষে থাকবো। এবং স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিবে। দুটোর জন্যই মূল্য দিতে হবে।’

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের শক্তিধর মনে করে এবং বিশ্বাস করে বিশ্বের তৃতীয় পর্যায়ের দেশগুলো তাদের হুকুম মেনে চলতে বাধ্য।

ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘আমাদের বেলায় পশ্চিমারা তিনটি অপশন রেখেছে। তাদের ভাষ্য হলো আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে থাকলে শান্তি আসবে কিন্তু তাতে আমাদের মান মর্যাদা বিসর্জন দিতে হবে। অথবা আমরা আমাদের ভূমি ছেড়ে চলে যাব যার ফলে ইসরায়েলের আয়তন আরো বাড়বে, তারা আমাদের বাড়ি ঘর দখল করে নেবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরেকটা বিকল্প হচ্ছে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া, এক্ষেত্রে পশ্চিমারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তারা কথা বলবে না, বরং তারা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আমাদের প্রভু, প্রভুর কথা অনুযায়ীই চলতে হবে, এটাই তাদের বিশ্বাস।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

বিজয় দিবসের দিনে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করলেন চাঁদপুর-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক

বাংলাদেশের না-বলা মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা : ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত

Update Time : ০৯:০৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০২৩

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ইস্যু করে আমেরিকা বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায় বলে মনে করছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তার মতে, আমেরিকা চায় বাংলাদেশে তার নিয়ন্ত্রন। এখানে সুষ্ঠু বা অবাধ নির্বাচন হলো কি না সে বিষয়ে আগ্রহ নেই আমেরিকার। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত এসব মন্তব্য করেন।

বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ। এখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বরাবরই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার তাগিদ দিয়ে আসছে আমেরকিা। এরই মধ্যে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞাও কার্যকর করা শুরু করেছে বাইডেন প্রশাসন।

তবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে আমেরিকার এমন আগ্রহকে প্রশ্নের চোখে দেখছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘আমি সোজা সাপ্টা একটা কথা বলতে চাই। আমেরিকা আসলে এদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু হলো কি হলো না তাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

নিজের পর্যবেক্ষন তুলে ধরে ইউসুফ বলেন, ‘ভৌগলিকভাবে ভারত ও চীনের মত শক্তিশালী দেশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। মূল সংকট হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শক্র চীন, তাদের আপত্তি চীনের উদয়মান অর্থনীতি। তাদের অনুদানের সক্ষমতাসহ, চীনের গোটা অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র মেনে নিতে পারছে না। আর সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনের ডানা কেটে দিতে। এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে বাংলাদেশ চীনের সেই ডানার একটি ছোট অংশ।’

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত মনে করেন, আমেরিকার মনে করে তার চেয়ে চীন, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ। যা ওয়াশিংটনের মাথা ব্যাথ্যার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘জনসংখ্যা দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। এটা একটা বড় মার্কেট। এত বড় মার্কেটে আমেরিকার পণ্য কম কেন? আমেরিকার কাছ থেকে বাংলাদেশ কেন অস্ত্র কিনছে না? কেন শুধু চীন বা রাশিয়া বা কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত থেকে অস্ত্র কিনছে? কোয়াডের কথাই বলি বা যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট, কেন বাংলাদেশ তার সদস্য হচ্ছে না? বাংলাদেশ কেন আমেরিকার নেতৃত্বধীন জোটে যেতে অস্বীকার করেছে?

ইউসুফ বলেন, ‘কেন বাংলাদেশ তার ভূখন্ডের একটি অংশে আমেরিকাকে সামরিক বা নৌ ঘাঁটি স্থাপনের জন্য দিতে চায় না। বাংলাদেশকে কে যুক্তরাষ্ট্রকে না বলতে শিখিয়েছে? বাংলাদেশের না – বলা মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা।’

শক্তিশালি দেশের অপশন না মানলে কি হবে তাও জানান ইউসুফ এসওয়াই রামাদান। তিনি বলেন, ‘যখন বাংলাদেশ না বলবে তখন তাকে মূল্য দিতে হবে। বাংলাদেশকে দুটো অপশন দেয়া হয়েছে, হয় তুমি আমেরিকা ও পশ্চিমাদের পক্ষে অবস্থান নেবে, না হয় বাকি দেশগুলোকেও না বলে দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল হবে।’

ফিলিস্তিনি দূত বলেন, ‘আর দ্বিতীয় অপশনটি হলো যুক্তরাষ্ট্রকে না বলে নিজের স্বাধীন সাবভৌমত্ব ধরে রাখবে। এবং বলবে বাংলাদেশ তার মান মর্যাদা ধরে রেখে জনগণের পক্ষে থাকবো। এবং স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিবে। দুটোর জন্যই মূল্য দিতে হবে।’

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের শক্তিধর মনে করে এবং বিশ্বাস করে বিশ্বের তৃতীয় পর্যায়ের দেশগুলো তাদের হুকুম মেনে চলতে বাধ্য।

ইউসুফ এসওয়াই রামাদান বলেন, ‘আমাদের বেলায় পশ্চিমারা তিনটি অপশন রেখেছে। তাদের ভাষ্য হলো আমরা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে থাকলে শান্তি আসবে কিন্তু তাতে আমাদের মান মর্যাদা বিসর্জন দিতে হবে। অথবা আমরা আমাদের ভূমি ছেড়ে চলে যাব যার ফলে ইসরায়েলের আয়তন আরো বাড়বে, তারা আমাদের বাড়ি ঘর দখল করে নেবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরেকটা বিকল্প হচ্ছে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া, এক্ষেত্রে পশ্চিমারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তারা কথা বলবে না, বরং তারা আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা আমাদের প্রভু, প্রভুর কথা অনুযায়ীই চলতে হবে, এটাই তাদের বিশ্বাস।’