ঢাকা ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিহার এখন শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য বগুড়ার শিবগঞ্জে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩০:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
  • ৬৮ Time View

বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার হাটখোলায় দুর্লভ প্রজাতির শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য লক্ষ করা গিয়েছে। গাছে গাছে এসব অতিথি পাখিকে দেখার জন্য স্থানীয় ও পাশ্ববর্তী এলাকার পাখি প্রেমী মানুষ প্রতিনিয়িত ভির করছে।

স্থানীয়রা জানায়, বিহার বন্দরের ৫/৭টি বৃক্ষের শাখায় জোড়ায় জোড়ায় এরা সংসার পেতেছে। ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিগুলোর ডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে বিহার হাটখোলা এলাকা।
বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার এখন শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য। রয়েছে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে আবাদের খেত।

এ ছাড়া বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছের চিকন ও মোটা ডালে আবাসস্থল গড়ে তুলেছে দুর্লভ প্রজাতির পাখি ‘শামুকখোল’। এ পাখিগুলো আবার চলেও যায়। কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে। ধূসর রঙের পাখিগুলোর ডানাও বেশ বড়। ঠোঁট লম্বা এবং মাঝখানে ফাঁকা। গাছের চড়ায় ডালপালায় ডানা শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে বিশ্রাম করে। শামুকখোলের লেজ ও পাখার শেষভাগ কালো রঙের। ঠোঁটও বেশ খানিকটা বড়। শামুক এদের প্রিয় খাবার। শামুকের খোল ভাঙে ঠোঁট দিয়ে।

তারপর সেটা ওপরের দিকে তুলে ধরে গিলে ফেলে। খাবার হিসেবে এরা শুধু শামুকই খায় না। মাছ, কাঁকড়া, ছোট ছোট জলজ প্রাণি, ব্যাঙ খেয়ে থাকে। অনেকটা বকের মতো দেখতে। একেকটা গাছে ২৫-৩০টি বাসা দেখা যায়। শুকনো ডাল ও লতাপাতার সমন্বয়ে বাসা তৈরি করে শামুকখোল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ১০-১২ দিনে তৈরি করে বাসা। পাঁচ ফুট পর্যন্ত বাসার দৈর্ঘ্য হয়। ডিম দেয় জুলাই-আগস্ট মাসে। তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ডিমে তা দেয়। ২৫ দিন লাগে ডিম ফুটে ছানা বের হতে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়স হলে ছানা উড়তে শেখে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শামুকখোল পাখি ভোরে বাসা ছেড়ে বের হয়ে উড়ে যায় আশপাশের বিলে ও ঝিলে। এরা বিল থেকে ব্যাঙ, শামুক, মাছ, কাঁকড়া ও ছোট ছোট জলজ প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে। প্রথম দিকে সংখ্যায় কম দেখা গেলেও বংশবিস্তারে এখন কয়েক হাজার পাখি উড়ছে। বাঁশবাগান, শিমুল, কদম, পিটাহরি, পাকুড়, মেহগনিসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছে এরা বাসা বেঁধেছে।

বিহার গ্রামের আইনুল ও হারুন বলেন, বিহার হাট ও আশেপাশে মানুষের সাথে মিতালি গড়ে উঠেছে এসব পাখিদের। শিকারী ও উৎপাতকারীদের হাত থেকে পাখিগুলোর আগলে রাখছে স্থানীয় জনগণ। কেউ পাখি শিকার করতে আসলে আমরা প্রতিবাদ করি।
রাজশাহী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সাংবাদিক সাজু মিয়া বলেন, সাধারণত এসব পাখি দল বেঁধে চলাচল ও খাবার সংগ্রহ করে।

বর্ষাকালে উত্তরের জেলাগুলোতে এদের বেশি দেখা মেলে। খাবার থাকলে তারা এক স্থানে দীর্ঘদিন থেকে যায়। খাবার সংকট হলেই তারা অন্য স্থানে আবার বাসা বাঁধে। ২০১১ সাল থেকে বিহার এলাকায় পাখিগুলোকে নিয়মিত দেখা যায়। বিহার গ্রামকে পাখির নিরাপদ রাজ্য গড়ে তুলতে ২০১৩ সালে তিরের আ লিক কমিটি করা হয়। ২০১৬ সালে শিবগঞ্জের বিহারহাটকে শামুকখোল পাখির রাজ্য ঘোষণা করা হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাখিগুলোর খোঁজ রাখা হয় নিয়মিত।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসভিত্তিক সংগঠন ‘তির’(টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ)-এর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাইকোনিডিয়া গোত্রের কয়েক হাজার পাখি নিয়মিত আবাস হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিপন্ন হওয়া বড়সড় গড়নের এ প্রজাতির পাখি ঝাঁক বেঁধে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার বড় বড় বৃক্ষে আশ্রয় নিয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, এসব পাখিগুলোর বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেওয়া হয়। পাখিরগুলো যেন নিরাপদ থাকে সে বিষয়ে আমরা লক্ষ রেখেছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

চাঁদপুর-৫ আসনে জাকির হোসেন প্রধানীয়ার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

বিহার এখন শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য বগুড়ার শিবগঞ্জে

Update Time : ০৫:৩০:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার হাটখোলায় দুর্লভ প্রজাতির শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য লক্ষ করা গিয়েছে। গাছে গাছে এসব অতিথি পাখিকে দেখার জন্য স্থানীয় ও পাশ্ববর্তী এলাকার পাখি প্রেমী মানুষ প্রতিনিয়িত ভির করছে।

স্থানীয়রা জানায়, বিহার বন্দরের ৫/৭টি বৃক্ষের শাখায় জোড়ায় জোড়ায় এরা সংসার পেতেছে। ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিগুলোর ডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে বিহার হাটখোলা এলাকা।
বগুড়া সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার এখন শামুকখোল পাখির অভয়ারণ্য। রয়েছে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে আবাদের খেত।

এ ছাড়া বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছের চিকন ও মোটা ডালে আবাসস্থল গড়ে তুলেছে দুর্লভ প্রজাতির পাখি ‘শামুকখোল’। এ পাখিগুলো আবার চলেও যায়। কিছুদিন পর আবার ফিরে আসে। ধূসর রঙের পাখিগুলোর ডানাও বেশ বড়। ঠোঁট লম্বা এবং মাঝখানে ফাঁকা। গাছের চড়ায় ডালপালায় ডানা শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে বিশ্রাম করে। শামুকখোলের লেজ ও পাখার শেষভাগ কালো রঙের। ঠোঁটও বেশ খানিকটা বড়। শামুক এদের প্রিয় খাবার। শামুকের খোল ভাঙে ঠোঁট দিয়ে।

তারপর সেটা ওপরের দিকে তুলে ধরে গিলে ফেলে। খাবার হিসেবে এরা শুধু শামুকই খায় না। মাছ, কাঁকড়া, ছোট ছোট জলজ প্রাণি, ব্যাঙ খেয়ে থাকে। অনেকটা বকের মতো দেখতে। একেকটা গাছে ২৫-৩০টি বাসা দেখা যায়। শুকনো ডাল ও লতাপাতার সমন্বয়ে বাসা তৈরি করে শামুকখোল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ১০-১২ দিনে তৈরি করে বাসা। পাঁচ ফুট পর্যন্ত বাসার দৈর্ঘ্য হয়। ডিম দেয় জুলাই-আগস্ট মাসে। তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ডিমে তা দেয়। ২৫ দিন লাগে ডিম ফুটে ছানা বের হতে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়স হলে ছানা উড়তে শেখে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শামুকখোল পাখি ভোরে বাসা ছেড়ে বের হয়ে উড়ে যায় আশপাশের বিলে ও ঝিলে। এরা বিল থেকে ব্যাঙ, শামুক, মাছ, কাঁকড়া ও ছোট ছোট জলজ প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে। প্রথম দিকে সংখ্যায় কম দেখা গেলেও বংশবিস্তারে এখন কয়েক হাজার পাখি উড়ছে। বাঁশবাগান, শিমুল, কদম, পিটাহরি, পাকুড়, মেহগনিসহ বেশ কয়েক প্রজাতির গাছে এরা বাসা বেঁধেছে।

বিহার গ্রামের আইনুল ও হারুন বলেন, বিহার হাট ও আশেপাশে মানুষের সাথে মিতালি গড়ে উঠেছে এসব পাখিদের। শিকারী ও উৎপাতকারীদের হাত থেকে পাখিগুলোর আগলে রাখছে স্থানীয় জনগণ। কেউ পাখি শিকার করতে আসলে আমরা প্রতিবাদ করি।
রাজশাহী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সাংবাদিক সাজু মিয়া বলেন, সাধারণত এসব পাখি দল বেঁধে চলাচল ও খাবার সংগ্রহ করে।

বর্ষাকালে উত্তরের জেলাগুলোতে এদের বেশি দেখা মেলে। খাবার থাকলে তারা এক স্থানে দীর্ঘদিন থেকে যায়। খাবার সংকট হলেই তারা অন্য স্থানে আবার বাসা বাঁধে। ২০১১ সাল থেকে বিহার এলাকায় পাখিগুলোকে নিয়মিত দেখা যায়। বিহার গ্রামকে পাখির নিরাপদ রাজ্য গড়ে তুলতে ২০১৩ সালে তিরের আ লিক কমিটি করা হয়। ২০১৬ সালে শিবগঞ্জের বিহারহাটকে শামুকখোল পাখির রাজ্য ঘোষণা করা হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাখিগুলোর খোঁজ রাখা হয় নিয়মিত।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসভিত্তিক সংগঠন ‘তির’(টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ)-এর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাইকোনিডিয়া গোত্রের কয়েক হাজার পাখি নিয়মিত আবাস হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিপন্ন হওয়া বড়সড় গড়নের এ প্রজাতির পাখি ঝাঁক বেঁধে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার বড় বড় বৃক্ষে আশ্রয় নিয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, এসব পাখিগুলোর বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেওয়া হয়। পাখিরগুলো যেন নিরাপদ থাকে সে বিষয়ে আমরা লক্ষ রেখেছি।