কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তবে ইভিএমকে ‘চোরের বাক্স’ বললেন পরাজিত কৃষক লীগের এক নেতা। পরাজিত অপর নারী প্রার্থীর আহাজারিতে পুরো ভোট কেন্দ্র স্তব্ধ হয়ে পড়ে। কাজলেমা বেগম নামে ওই প্রার্থী ফুটবল প্রতীকে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী প্রার্থী ছিলেন।
কালেক্টরেট গ্রীন ভিউ উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার পর কাজলেমা বেগম নামে ওই নারী প্রার্থী বিলাপ করতে করতে বের হয়ে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, কোনো দিন আমি স্বীকার করব না যে আমি পাশ করিনি। আল্লাহ তুমি বিচারের মালিক, তুমি বিচার করিও।
এ সময় তিনি পৌর মেয়র মুখলেসুর রহমানকে উদ্দেশ করে বলেন, আমি অন্যায় করিনি, আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি, মুখলেস ভাই আমার এটা (পরাজিত) করেছে। আল্লাহ তুমি বিচার করিও।
এ সময় তার সন্তান কাজলেমা বেগমকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, একদিন বিচার হবে মা, তুমি কেঁদো না, বিচার একদিন হবেই।
পরাজিত নারী প্রার্থী বলেন, আমি রাজনীতি করি। কেমন করে এটা করলি রে মুখলেস, আল্লাহ একদিন তোর বিচার করবে। তোর বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম। এরপর তিনি কেন্দ্র ত্যাগ করেন। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মুখলেসসহ তার নেতাকর্মীরা আড়ালে চলে যান।
অপর পরাজিত প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হাকিম সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন যোগসাজশ করে আমাকে পরাজিত করেছে। তা না হলে ফলাফল ঘোষণার আগেই প্রার্থী আব্দুল জলিল কিভাবে ফেসবুকে বিজয়ের পোস্ট দেয়। ফলাফল ঘোষণার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে বিজয়ী প্রার্থী আব্দুল জলিলকে তার ফেসবুকে তিনবার আলহামদুলিল্লাহ লিখে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
আব্দুল হাকিম অভিযোগ করেন, পৌর মেয়রের ক্ষমতায় এবং নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে তাকে পরাজিত করা হয়েছে। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই তারা নিজেদের মধ্যে কোলাকুলি করে, ভি (বিজয়) চিহ্ন প্রদর্শন করে। এ থেকে বোঝা যায় ফলাফল আগে থেকেই তৈরি করা ছিল।
তিনি ইভিএম মেশিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ইভিএম আসলেই চোরের বাক্স।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌর মেয়র মুখলেসুর রহমান বলেন, আমি ভোটার হিসেবে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। ভোট দিয়ে ফিরে এসেছি। কেউ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিলে বা আহাজারি করলে করতেই পারে। সেটা তাদের ব্যাপার। তার দায়ভার আমি নিতে যাব না।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৭টি পদে আওয়ামী লীগের ৬ জন এবং বিএনপির একজন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিরতিহীনভাবে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। নির্বাচনে ৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ১৯ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ভোটার ছিলেন ৬৬০ জন।
সাধারণ সদস্য পদে সদরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ১২৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল, নাচোলে ২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা তরিক-উজ-জামান সুমন, গোমস্তাপুরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা কবির খান, ভোলাহাটে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী হোসনে আরা পাখি এবং শিবগঞ্জে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম।
সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবিহা শবনম কেয়া এবং তাসলিমা খাতুন। ৫টি ভোটকেন্দ্রের ১০টি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোতাওয়াক্কিল রহমান জানান, কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার অভিযোগ এনে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক নারী প্রার্থী উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ১৫ অক্টোবর আদালতের আদেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে ১৪ নভেম্বর সোমবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।